ব্যক্তি নামের আগে ও পরে পেশা বা পদবী যুক্ত করার আইনী বিধান
ব্যক্তি নামের আগে ও পরে পেশা বা পদবী যুক্ত করা কতটা যুক্তি সংগত ? এক্ষেএে কোন আইনী বিধি বিধান আছে কিনা? ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার, ডক্টর, সাংবাদিক, এডভোকেট ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক পদবী ।
যেকেউ যেকোন পর্যায়ের ডিগ্রী নিয়ে নামের আগে এই শব্দগুলি বসাতে পারে না কিংবা নিজেকে পরিচয় দিতে পারে না। প্রতিটি পেশাতেই সুনিদিষ্ট কর্তৃপক্ষ আছে যারা নিয়ম অনুযায়ী পেশাগত পদবী নামের আগে ও পরে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে থাকেন ।
আইনজীবীর ক্ষেত্রে:
বাংলাদেশ আইনজীবী ও বার কাউন্সিল আদেশ ১৯৭২ (রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সালের ৪৬ নং আদেশ)-এর অধীনে তালিকাভুক্ত হতে হবে । অন্যথায় কেউ আইনজীবী কথাটি নামের আগে ও পরে লিখতে পারবে না ।
ভোটার তালিকা (সংশোধন) আইন ২০১২’- আইনে ভোটারের ‘নাম’-এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪-এর অধীন নিবন্ধিত অথবা প্রদত্ত সনদে উল্লিখিত নাম অথবা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী বা জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা সমমানের কোন পরীক্ষায় প্রদত্ত সনদে উল্লিখিত নাম।‘অফিসিয়াল’ কাগজপত্রে কোন নাগরিক নামের আগে-পরে বিচারপতি, ব্যারিস্টার, এডভোকেট, প্রকৌশলী, ডক্টর, এ ধরনের পদবি-পরিচয় ব্যবহার করতে পারবেন না।
ডাক্তারদের ক্ষেত্রে:
বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল অ্যাক্ট ২০১০(২০, ডিসেম্বর ২০১০-এ প্রকাশিত গেজেট) এর ধারা ২২(১) ও ২৯(১) এর আওতায় MBBS/BDS বাদে অন্য চিকিৎসকদের নামের আগে ডাঃ(ডাক্তার) পদবী ও নামের পরে ডিগ্রী ব্যবহার অপরাধ ।
ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ব্যতীত অন্য কেউ তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবী লিখতে পারবেন না। তাও আবার তাকে বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটানো শাস্তি যোগ্য অপরাধ।
বিএমডিসির সংশোধিত আইন অনুযায়ী পল্লী চিকিৎসক ও মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্টরা তাদের নামের আগে ডাক্তার শব্দটি ব্যবহার করতে পারবেন না। নূ্যনতম এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রিধারী না হলে কেউ নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন না। এই বিধান অমান্য করে কেউ নিজের নামের আগে ডাক্তার শব্দ ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিএমডিসি।
বিএমডিসির আইনের ২২ (১) ধারায় বলা হয়েছে, নিবন্ধন ব্যতীত অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা নিষিদ্ধ। অন্য কোনো আইনে যা কিছু থাকুক না কেনো এ আইনের অধীনে নিবন্ধন ব্যতীত কেউ নিজেকে মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক বলে পরিচয় প্রদান করতে পারবে না। কোনো ব্যক্তি এ ধারা লংঘন করলে ৩ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
(১) ধারা অনুযায়ী ভুয়া পদবী ব্যবহার নিষিদ্ধ। এ আইনের অধীনে নিবন্ধনকৃত কোনো মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এমন কোনো নাম, পদবী, বিবরণ ও প্রতীক এমনভাবে ব্যবহার বা প্রকাশ করবেন না যার ফলে তার কোনো অতিরিক্ত পেশাগত যোগ্যতা আছে মর্মে কেউ মনে করতে পারে।
এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ব্যক্তিরা ব্যতিত অন্য কেউ তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি এ উপধারা লংঘন করলে তাকে ওই একই দণ্ড পেতে হবে এবং অপরাধ অব্যাহত থাকলে প্রত্যেকবার তার পুনরাবৃত্তির জন্য ৫০ হাজার টাকা অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন ।
ইঞ্জিনিয়ারদের ক্ষেত্রে:
কারা কারা নিজের নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার পদবী ব্যবহার করতে পারেনঃ
১. আইইবি স্বীকৃত সরকারী বা বেসরকারি বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী থাকে এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ, (আইইবি)-র এসোসিয়েট মেম্বার হিসেবে নিবন্ধিত হন ।
অথবা
২. স্বীকৃত বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর সমমানের ডিগ্রী থাকে এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-র এসোসিয়েট মেম্বার হিসেবে নিবন্ধিত হন । অথবা
৩. এএমআইই (সেকশন এ এবং বি) পাশ থাকে এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-র এসোসিয়েট মেম্বার হিসেবে নিবন্ধিত হন ।এর বাইরে কোনও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ডিগ্রীধারী কেউ নামের আগে কিংবা নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন না ।
তবে কিছু ডিপ্লোমাধারী নিজেকে “ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার” হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন ।
আসুন দেখে নিই তারা কারা:
১. স্বীকৃত কোন পলিটেকনিক বা কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রকৌশল বিষয়ে ডিপ্লোমা থাকে এবং ২/ ইনস্টিটিউশন অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-থেকে নিবন্ধিত হন ।
এর বাইরে দুই মাস/ ছয় মাস/ ২ বছরের কোর্সকরে কেউ নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার পরিচয় দিতে পারে না । এটা অন্যায় এবং দন্ডনীয় অপরাধ ও সাথে সাথে এটা ইঞ্জিনিয়ার পদবী’র অপমান এবং মানুষকে ধোকা দেয়া ।
লেখক : মো: আসাদুর রহমান রুবেল
আইনজীবী
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
Discussion about this post