ডেস্ক রিপোর্ট
মৌলভীবাজারে ব্যাংক কর্মকর্তা প্রণজিত হত্যা মামলায় একজনের ফাঁসি ও ৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেছেন সিলেটে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আদালত।
গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো. শাহাদৎ হোসেন প্রামানিক চাঞ্চল্যকর এ রায় ঘোষণা করেন। পাশাপাশি রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অপর যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ৪ আসামীকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৩ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়।
ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী মৌলভীবাজার সদর থানার মনোহরকোণা ইসলামপুর গ্রামের মৃত রবীন্দ্র কুমার পাল উরফে রবি পালের পুত্র রিপন পাল (৪৮)। যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছে- মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত রিপন পালের ভাই উত্তম পাল (৩৮), একই এলাকার যোগেন্দ্র পালের পুত্র বিমল পাল (৪৯), মৃত অনিল চন্দ্র উরফে অনিল পালের পুত্র আশীষ পাল (৪৮) ও মৃত তারণ পালের পুত্র চিত্ত রঞ্জন পাল উরফে চিত্ত পাল (৩৮)। রায় ঘোষণার সময় সকল আসামী আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার বেশ কিছুদিন পূর্বে আসামী বিমল পালদের পারিবারিক বিরোধ মীমাংসা করতে গিয়ে মৌলভীবাজার শহরস্থ অগ্রণী ব্যাংক চৌমুহনা শাখার সিনিয়র অফিসার প্রণজিত পাল উরফে প্রণয়ের সাথে তাদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে ২০১৪ সালের ৩০ জুন রাত ৯টার দিকে মৌলভীবাজার শহরস্থ শমশেরনগর সড়কে চট্টগ্রাম স্যানেটারী দোকানের সামনে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আসামীরা ব্যাংকার প্রণজিত পাল উরফে প্রণয়কে জোরপূর্বক রিকশা থেকে নামায়।
ওই সময় আসামি রিপন ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রণজিতের বাম উরুতে আঘাত করে। এতে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হন প্রণজিত। এ সময় আসামি বিমল পাল, উত্তম পাল, চিত্ত পাল ও আশীষ পাল প্রণজিতকে ধরে রাখেন। পরে আশপাশের লোকজন গুরুতর আহতাবস্থায় প্রণজিতকে উদ্ধার করে প্রথমে একটি ক্লিনিকে পরে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহত প্রণজিত পাল উরফে প্রণয়ের স্ত্রী কাঞ্চন রাণী পাল বাদী হয়ে মৌলভীবাজার সদর থানায় ৫ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং ১ (০২-০৭-২০১৪)। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলা সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক শ, ম কামাল হোসেইন ৫ আসামীকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আসামীদের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর আদালত চার্জগঠন করে এ মামলার বিচারকার্য শুরু করেন।
দীর্ঘ শুনানী ও ৩৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতকাল সোমবার আদালত আসামী রিপন পালকে ১৮৬০ সালের পেনাল কোডের ৩০২ ও ৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে অর্থদন্ডসহ মৃত্যুদন্ড (ফাঁসি) এবং অপর আসামী বিমল পাল, উত্তম পাল, আশীষ পাল ও চিত্ত রঞ্জন পালকে পেনাল কোডের ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে উল্লেখিত অর্থদন্ডসহ যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। রাষ্ট্র পক্ষে এডভোকেট সরওয়ার আহমদ চৌধুরী ও আসামির পক্ষে এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম মামলাটি পরিচালনা করেন।
Discussion about this post