সুপ্রিম কোর্টের তরুণ ও মেধাবী আইনজীবী ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খানের মৃত্যু নিয়ে রহস্য। তার শশুর বাড়ীর পক্ষ থেকে বলা ৯ তলা থেকে ‘লাফিয়ে পড়ে ‘আত্মহত্যার কথা বলা হলেও আসিফের বাবা বলছেন,তার ছেলেকে হত্যা করা হতে পারে।

আসিফের ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরা বলছেন, স্ত্রী সাবরিনা শাহিদ নিশিতার সাথে আসিফের দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলহ চলে আসছিল। প্রতিনিয়ত তাদের ঝগড়া লাগতো।
স্ত্রী সাবরিনা স্বামী আসিফের নিয়মিত বিয়ার খাওয়ার যে অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলেছেন তার ঘনিষ্ট সহকর্মীরা। তারা বলছেন,আাসিফের স্ত্রী লুকানোর জন্য এমন মিথ্যাচার করছেন। সাবরিনাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই মৃত্যু রহস্য উৎঘাটন হবে বলে মনে করছেন তারা। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা ব্যারিস্টার আসিফের মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করার জন্য প্রতিবাদে সরব হয়েছেন।
অ্যাডভোকেট এনামুল হোসাইন সুমন তা ফেসবুকে লিখেছেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের তরুণ আইনজীবী ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান (জিশাদ)। শশুরবাড়ির ৯ তলা থেকে বারান্দা দিয়ে নিচেই পড়েন। শশুর বাড়ির সবাই বলছে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু আইনজীবী, বন্ধু, আত্নীয় স্বজনেরা বলছেন তিনি আত্মহত্যার করতে পারেন না। এটা হত্যা। এমনকি হত্যার কয়েকমিনিট পর স্ত্রী ও শশুর বলেছে সে মাদকাসক্ত ছিল, রিহ্যাবে ছিল। প্রকৃতপক্ষে তিনি কখনো রিহ্যাবে ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন ঘনিষ্ট জনেরা। আইনজীবী সমাজ চাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য সামনে চলে উঠুক। মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে দুই ভায়ের মৃত্যু আসলে তার বাবা ও মায়ের জন্য কত কষ্টের সেটা একমাত্র ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ কি বুঝতে পারবে। দাবী একটাই, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সত্যি উদঘাটন হোক।দোষীদের শাস্তি হোক।
আরেক জন আইনজীবী লিখেছেন,সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তরুণ ও মেধাবী সদস্য ব্যারিস্টার ইমতিয়াজের অকাল প্রয়াণে আমরা শোকাহত। তবে তার রহস্যজনক মৃত্যুতে আমাদের দায়দায়িত্ব ও করণীয় সম্পর্কে আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে!
উল্লেখ্য, গতকাল ১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ভোর বেলায় ৯ তলার বারান্দা থেকে ‘লাফিয়ে পড়ে’সুপ্রিম কোর্টের তরুণ আইনজীবী ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদের (৩৩) মৃত্যু হয়। কাঁঠালবাগান এলাকার ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের একটি ভবনের নিচ থেকে ভোরে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়।
আসিফ সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ শহিদুল ইসলাম খানের ছেলে। কাঁঠালবাগান এলাকায় একটি ভবনের নবম তলায় শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন তিনি। ওই ভবনের নিচ থেকে ভোরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়।আসিফকে প্রথমে গ্রিন লাইফ হাসপাতাল, পরে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।
কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর পেয়ে বাসায় গিয়ে নিহতের বাবা-স্ত্রীসহ স্বজনদের বক্তব্য শুনি। স্ত্রীর ভাষ্য, ব্যারিস্টার আসিফ নিয়মিত বিয়ার খেতেন। গতরাতে খেয়েছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। আসিফ রাতে বারান্দায়ই বসা ছিলেন। শেষ রাতে ৯ তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন।
আসিফের শ্যালক নিশাদ জানান, সেদিন রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বাঁধে। একপর্যায়ে আসিফ ৯তলার বারান্দা থেকে রেলিংয়ের ওপর দিয়ে লাফিয়ে নিচে পড়েন।সংকটাপন্ন অবস্থায় আসিফকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে আসিফের বাবা শহিদুল ইসলাম খান বলেন, ছেলের শরীরে তিনি আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন। তাঁকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।আসিফ ব্যারিস্টারি পাশ করে সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস করছিলেন। চার বছর আগে সাবরিনা শাহিদ নিশিতার সঙ্গে প্রেমের বিয়ে হয়। আসিফের পরিবার এটি মেনে নেয়নি। এজন্য আসিফ কাঁঠালবাগান শ্বশুর বাড়িতেই থাকতেন। তাদের কোনো সন্তান নেই।
Discussion about this post