ডেস্ক রিপোর্ট
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারতীয় নাগরিক ও মা সাদিকা সাঈদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া তার দুই বছর আট মাস বয়সী শিশুসন্তানসহ শিশুটির বাবা বাংলাদেশি নাগরিক শাহিনুর টি আই এম নবীকে হাজির করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও গুলশান থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আগামী রোববার (২১ নভেম্বর) বিকেল তিনটার মধ্যে তাদের আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে।
সাদিকা সাঈদের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (১৭ নভেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ব্যারিস্টার ফাইজা মেহরিন।
গতকাল মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ দম্পতির শিশু সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশি নাগরিক বাবা শাহিনুর টি আই এম নবীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। শিশুকে নিয়ে বাবা শাহিনুর যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন সেজন্য ইমিগ্রেশন পুলিশকে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়।
গতকালই শিশুটির বাবার পক্ষে আইনি লড়াই থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম।
গত ২৬ আগস্ট হাইকোর্ট দুই মাসের জন্য ওই শিশুকে ভারতীয় নাগরিক মা সাদিকা সাঈদের হেফাজতে রাখার আদেশ দেন। ওই আদেশে গুলশান থানায় শিশুটির মায়ের পাসপোর্ট জমা রাখা এবং এ বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে বলেছিলেন আদালত।
রাজধানীতে স্বামীর বাড়িতে বসবাসকারী ভারতীয় নারীকে তার শিশুসহ হাইকোর্টে সশরীরে হাজির হওয়ার ধার্য দিনে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল বেঞ্চ এক আদেশে বলেছিলেন, যেহেতু ওই শিশুর বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়েছে, ফলে শিশুটি তার মায়ের সঙ্গে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে থাকবে। বাবা চাইলে সপ্তাহে তিনদিন তার সন্তানকে সকাল ৯টায় নিতে পারবেন, সেক্ষেত্রে মায়ের কাছে সন্ধ্যার আগেই শিশুকে ফেরত দিয়ে যেতে হবে।
গত ৩০ আগস্ট ওই শিশুকে পরদিন ৩১ আগস্ট সকালের মধ্যে মায়ের আইনজীবীর কাছে হস্তান্তরে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু ওই শিশুর বাবা আইনজীবীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। এ কারণে আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।
ভারতীয় ওই নারীকে ভারতে তার বাবার বাড়িতে যেতে না দেওয়া এবং ঘর থেকে কোথাও বের হতে না দেওয়ার প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে এর আগে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী শিশুসহ ভারতীয় ওই নারীকে আদালতে হাজির করতে ৯ আগস্ট নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
পরে আদালতে তাদের হাজির করেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। এরপর শিশুর মা ও বাবার বক্তব্য শুনে এ আদেশ দেন আদালত।
ওইদিন শুনানি শেষে অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া বলেছিলেন, ভারতের বিয়ে সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে হায়দরাবাদের সাদিকা শেখ নামে এক নারীকে পছন্দ করেন বারিধারার এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। মেয়েটিও হায়দরাবাদের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। ২০১৭ সালে হায়দরাবাদে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন তারা। কয়েক মাস পর ঢাকায় চলে আসেন ওই দম্পতি।
তিনি জানিয়েছিলেন, এরই মধ্যে ওই দম্পতির কোলজুড়ে আসে এক পুত্রসন্তান। তবে সুখের সংসারে তাদের একপর্যায়ে অশান্তি নামে। সাদিকাকে মারধর করেন স্বামী। ভারতের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। বিষয়টি ভারতে মেয়েটির আত্মীয়স্বজনরা জানতে পারেন। এরপর সেদেশ থেকে তাদের পরিবারের পক্ষে প্রথমে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়। তারপরও কোনো সমাধান না পাওয়ায় পরে মেয়েটির বোন মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) কাছে আইনি সহায়তা চান।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ আগস্ট সাদিকা শেখ ও তার শিশুসন্তানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) পরিচালক ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক লুলান চৌধুরী।
Discussion about this post