ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়ে চিনিতে কারসাজির অভিযোগে মীর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম ও সেলস ম্যানেজার জানে আলমকে ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার (৮ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছোলা ও চিনির ডিলার এবং আড়তে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে মীর গ্রুপের অফিস সিলগালা করা হয়।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান অভিযানে নেতৃত্ব দেন। জেলা প্রশাসনের শিক্ষনবিশ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সামাদ শিকদার ও হাসান বিন আলী এবং ক্যাবের সদরঘাট থানা শাখার সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসসহ বাজার নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্যরা অভিযানে সহায়তা দেন। অভিযানে র্যাবের এএসপি জালাল উদ্দিনেরনেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক র্যাব সদস্যও অংশ নেন।
ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান বলেন, মীর গ্রুপের মেসার্স হাজি মীর আহমেদ সওদাগর নামের প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে কর্ণফুলীর ওপারের একটি চিনি কারখানা থেকে ৪৬ টাকা ০৮ পয়সায় চিনি কিনে পাইকারি বাজারে ৫৮ টাকা ০২ পয়সায় বিক্রি করছে। প্রতি কেজিতে তারা ১২ টাকা লাভ করছে। চিনি নিয়ে এ ধরনের ইচ্ছেকৃত কারসাজির অভিযোগে মীর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম ও সেলস ম্যানেজার জানে আলমকে ১০ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তারা দুই টাকা লাভে চিনি বিক্রির মুচলেকা দেন। এ ছাড়া আটক দুই কর্মচারী মফিজুল হক ও সজল সেনগুপ্তকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের বড় একটি অংশের চিনির ভোক্তাদের জিম্মি করে রেখেছিল মীর গ্রুপ। তারা আগামী ২৬ জুন পর্যন্ত কারখানা থেকে ১০টি লটে ২০ হাজার মেট্রিকটন চিনি কিনে রেখেছে প্রতিকেজি ৪৬ টাকা ৮ পয়সা দরে। অথচ বাজারে চিনি বিক্রি করছে ৫৮ টাকা কেজি। তাদের দুটি গুদামে মজুদ আছে ১১২ টন চিনি। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে একেকটি লটে তারা ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা আয় করে। পরিবহন, গুদাম ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, ব্যাংক ঋণের সুদ ইত্যাদি বাবদ ৪০ লাখ টাকা বাদ দিলেও ২ কোটি টাকা লাভ করছে।
তবে মীর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা যে চিনি ৪৬ টাকা কিনেছি সেগুলো এখনো মিল থেকে সরবরাহ দেওয়া হয়নি। এখন যে চিনি বিক্রি করছি তা ৫০ টাকা কেনা। পরিবহন, গুদাম, সুদ ও অন্যান্য খরচ মিলে চার টাকা খরচ আছে কেজিতে। তাই ৫৮ টাকা বিক্রি করতে হয়েছে।
তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ঢাকার যেসব বেসরকারি চিনির মিল চিনি উৎপাদন করে তাদের সঙ্গে মিল রেখেই চিনির দর ওঠানামা করে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব মাত্র চার ঘণ্টার। সেখানে যদি কম দামে চিনি পাওয়া যায় তবে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে আমার কাছ থেকে কেন কিনবে? আমরা নিজেরাই ভোক্তা সাধারণের সুবিধার্থে ন্যায্যমূল্যে ৪৫ টাকা দরে ১০টি পয়েন্টে চিনি বিক্রি করছি।
অভিযানে একতা স্টোর, আদর্শ ভাণ্ডার, মুক্তা স্টোর ও লক্ষ্মী ভাণ্ডারের কেনাবেচার রশিদ পরীক্ষা করা হয়। এসময় কম দামে ছোলা-ডাল কিনে বেশি দামে বিক্রি করায় আশরাফ হোসেন মাসুদের মালিকানাধীন মাসুদ ব্রাদার্সকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রূপন দাশকে সতর্ক করা হয়।
Discussion about this post