রিয়াজ উদ্দিন রিপনঃ
মুসলিম বিবাহের বৈধতার জন্য নির্ধারিত কিছু শর্তাবলী পালন করতে হয়। অন্যথায় বিবাহটি আইন সঙ্গত বলে গন্য হবেনা এবং আদালত কর্তৃক এ বিয়ে অবৈধ বলে গণ্য হবে।
প্রস্তাব ও গ্রহন (ইজাব ও কবুল)
অন্যান্য চুক্তির মতই বিবাহের জন্য প্রস্তাব পেশ করা এবং অপর পক্ষ কর্তৃক এটি গ্রহন করা আবশ্যক। আর তা অবশ্যই প্রকাশ্যে কোন প্রকার দ্ব্যর্থকতা ছাড়া বা অন্য ধরনের অভিপ্রায় ব্যতিরেকে করতে হবে। কোন মহিলা সম্পর্কে পরিতুষ্ট হলে কোন ব্যক্তি ঐ মহিলার নিকট বা তাঁর পিতামাতা বা অভিভাবক (ওলী) এর নিকট প্রস্তাব করবে। অবশ্যই কোন ইদ্দত পালনরতা মহিলার নিকট প্রস্তাব পেশ করা যাবেনা। একইভাবে একজন মহিলাও কোন পুরুষের নিকট প্রস্তাব করতে পারবে। যখন ঐ প্রস্তাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয় তখন তা একটি চুক্তিতে পরিণত হয়। পক্ষগন আইনত উপযুক্ত না হলে ক্ষমতা প্রাপ্ত কোন সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রতিনিধি কর্তৃক প্রস্তাব পেশ করা যায়।
বিবাহে অভিভাবকত্ব (ওলী)
বিবাহের জন্য কোন অভিভাবক কোন অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক বা বালিকার পক্ষে বৈবাহিক চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারেন। উক্ত অভিভাবক আদালত কর্তৃক নিযুক্ত হতে পারেন এবং আদালতের অনুমতি ব্যতিরেকে প্রস্তাবিত বিবাহ প্রদান করা উচিত নয়।
হানাফী মতবাদ অনুযায়ী –
ক) পিতা তাঁর সন্তানের স্বাভাবিক অভিভাবক, তাঁর অবর্তমানে অভিভাবকত্ব ন্যস্ত হয় –
খ) পিতামহ- যতই উর্দ্ধগামী হোক তাঁর অবর্তমানে অন্যান্য পুরুষ জ্ঞাতী যথা,
গ) আপন ভাই,
ঘ) বৈমাত্র ভাই,
ঙ) আপন ভাই- এর পুত্র,
চ) বৈমাত্র ভাই¬- এর পুত্র,
ছ) আপন চাচা,
জ) বৈমাত্র চাচা,
ঝ) আপন চাচার পুত্র,
ঞ) বৈমাত্র চাচার পুত্র,
ট) পিতার আপন চাচা,
ঠ) বৈমাত্র চাচা,
ড) আপন চাচার পুত্রের পুত্র,
ঢ) আপন চাচার পুত্রের পুত্র,
ণ) এরপর তাদের অধস্তন অনুযায়ী অভিভাবক ন্যাস্ত হবে মাতা, কন্যা, পুত্রের কন্যা বা কন্যার কন্যা এদের অধঃস্তনরা, আপন বোন, বৈপিতৃভাই ও বোন এদের অধঃস্তনরা, তারপর ফুফু, মামা, খালা, মামার কন্যারা।
পক্ষসমূহের আইনগত যোগ্যতা
দাসত্বের শৃঙ্খল হতে মুক্ত সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন সাবালক সহ প্রত্যেক মুসলমান বিবাহ চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারবে। বিবাহ চুক্তির বৈধতার জন্য চুক্তিভুক্ত পক্ষদ্বয়ের মধ্যে কতিপয় শর্ত যেমন- জ্ঞান সম্পন্ন, সাবালকত্ব এবং স্বাধীন থাকা আবশ্যক।
সাক্ষীর উপস্থিতি
যদি একটি বিবাহের উভয়পক্ষই মুসলমান হয়, তবে বিবাহটির বৈধতার জন্য সাক্ষীর উপস্থিতি অত্যাবশ্যক হবে। পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়, “এবং তোমাদের মধ্যে হতে দুইজন পুরুষ ডাকিয়া আন, কিন্তু যদি দুইজন পুরুষ সাক্ষী না পাওয়া যায়, তবে একজন পুরুষ বা দুইজন মহিলা” (সূরা বাকারা-২৮২)।
বিবাহের ক্ষেত্রে সমতা (কুফু)
হানাফী মতবাদ অনুযায়ী, বিবাহের ক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে সমতা একটি প্রয়োজনীয় শর্ত। সমতা প্রয়োজন এই জন্য যে, একটি বিবাহ সভ্য আইনের মাধ্যমে একটি যথোপযুক্ত মিলনের বৈশিষ্ট্য বহন করতে পারে।
হানাফি মতবাদ অনুযায়ী সমতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিন্মোক্ত বিষয়সমূহ বিবেচ্য :
১) বংশ, ২) ইসলাম ধর্ম, ৩) চরিত্র, ৪) স্বাধীনতা, ৫) সম্পদ বা ধনদৌলত, ৬) পেশা এবং ৭) শিক্ষা
Discussion about this post