ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী কোন মুসলমান মারা গেলে তার ফেলে যাওয়া সম্পত্তি বা ত্যাজ্য সম্পত্তি কিভাবে কাদের মধ্যে বন্টন করা হবে সে সম্পর্কিত বিধানকে মুসলিম উত্তরাধিকার বা ফারায়েজ বলে।
উত্তরাধিকারের ভিত্তি: সম্পত্তির মালিকের মৃত্যুর পর তার বৈধ ওয়ারিশগণের তার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার সৃষ্টি হয়, জন্মগত অধিকার স্বীকৃত হয় ইহাই হচ্ছে উত্তরাধিকারের ভিত্তি।
উত্তরাধিকারের আইনের উৎস:
১. কোরআন
২. হাদিস
৩. ইজমা
৪. কিয়াস
৫. আরবীয় প্রথা
৬. বিধিবদ্ধ আইন
৭. আদালতের সিদ্ধান্ত
১. কোরআন : উত্তরাধিকার আইনের প্রথম ও প্রধান উৎস আল কোরআন। আল কোরআনের সূরা নেসায়ের সপ্তম, অষ্টম, একাদশ দ্বাদশ এবং একশত ছিয়াত্তর আয়াতে প্রত্যক্ষভাবে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে বলা আছে।
যেমন- মুসলিম উত্তরাধিকার বা ফারায়েজ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সূরা নিসায় বলা আছে যে, ১২ জন সম্পত্তির অংশীদার। যাদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী। পুরুষগণ হলেন মুসলিম আইনের কোরআনের পবিত্র বিধান অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশগণ বা উত্তরাধিকারীগণ মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে সুনির্দিষ্ট অংশ লাভ করিতে বাধ্য থাকে।
২। হাদিস : এক কথায় হাদিস হলো হযরতের উক্তি, নির্দেশাবলি এবং তার জীবনের কার্যাবলির মহাসংকলন। মুসলিম আইন বিজ্ঞানের বিধান মোতাবেক যে সকল বিষয় সমূহ হাদিসের ক্ষেত্রে অপরিহার্য তা নিম্নরূপ-
ক. হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর অভিমত, উক্ত, শিক্ষা, উপদেশ, অনুশাসন এবং বাণীর সংকলন বিষয়ক মন্তব্য।
খ. হযরতের দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রণালি, কর্মতৎপরতা এবং হযরত কর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলি বিষয়ক তৎপরতা।
গ. হযরতের পছন্দনীয় কার্যবলি এবং অপছন্দনীয় কার্যসমূহের বিবরণমূলক বক্তব্য।
ঘ. হযরত কর্তৃক তার সাহাবীদের ক্ষেত্রে ইঙ্গিতবাহী সম্মতি বা নীরব সমর্থন।
৩। ইজমা: প্রকৃত অর্থে উলেমাগণের ঐক্যমত্যই হইল ইজমা এবং উহা অভ্রান্ত বলিয়া ধরিয়া নেওয়া হয়। কোরআন, হাদিস এবং সুন্নাহর মাধ্যমে যে আইন প্রণয়ন কাজ চলে আসছিল তা হযরতের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে যায় অথচ নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হতে লাগল যার সমাধানের জন্য কোরআন, সুন্নাহ কিংবা হাদিসের মধ্যে কোন নির্দেশ পাওয়া যেত না। এমতাবস্থায় অন্য কোন উপায়ে ঐ সব সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন হয়ে পড়ত। এই উদ্দেশ্যে আইনবিদগণ আইনের যে নীতির উদ্ভব করেছিলেন উহাই ইজমা।
৪। কিয়াস : যখন কোন সমস্যা সমাধানের জন্য কোরআন, সুন্নাহ বা ইজমার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া না যায় তখন কিয়াস অর্থ্যৎ ‘ফলপ্রসূ যুক্তি’-ও দ্বারা সমাধান কারাকে কিয়াস বলা হয়।
৫। আরবীয় প্রথা: মুসলিম আইনের পঞ্চম উৎস- হলো প্রাক ইসলমি প্রথা। কোরআন, হাদিস, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস ব্যতীত আইনবিদগণ যে উৎসটির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন সেটা হলো রীতি বা প্রথা। বহু পুরাতন আরব প্রথা কোরআনের আয়াত দ্বারা নাকচ করা হয়েছে। যা কোরআন কর্তৃক নাকচ করা হয়নি এবং যা সুন্নাহ কর্তৃক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গৃহতি হয়েছে, উহা মুসলিম আইনের বিধি হিসাবে বর্তমান রয়েছে।
৬। বিধিবদ্ধ আইন : বাংলাদেশে মুসরমানদের উপর শুধু মুসলিম ব্যক্তিগত আইনই প্রয়োগ করা হয়। উত্তরাধিকার, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উইল, হিসাব এবং ওয়াক্ফ আইন সম্পর্কে ও কতিপয় আইন বিধিবদ্ধ করা হয়েছে এবং ঐ প্রকারের আইনগুলোকে ৬ষ্ঠ উৎস: বলে মুসলিম আইন বিকাশে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিধিবদ্ধ আইন হিসাবে আইন সভা দ্বারা পাসকৃত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইনগুলো হলো:
১. শরীয়া আইন, ১৯৩৭।
২. মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৭
৩. মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ (অধ্যাদেশ নং ৮)
৪. মুসলিম বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯৭৪।
৭। আদালতের সিদ্ধান্ত : দেশের উচ্চ আদালতের কোন জটিল বিষয়ের সিদ্ধান্তও মুসলিম আইনের উৎস হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
Discussion about this post