এডভোকেট মো: হাবিবুল হকঃ
পৃথিবীর ইতিহাসে মুসলিমরাই পন্ডিত জাতী কিন্তু আজকের দুনিয়ায় মুসলিমরা জ্ঞানহীন জাতীতে পরিণত
হয়েছে। তাদের মৌলিক জ্ঞান ফারায়েয বেমালুম ভুলে গিয়েছে। ফলে অনেক পরিবারে যুগ যুগ ধরে মামলা-
মোকাদ্দামা চলছে।
তবে আশার কথা হচ্ছে, যুবকদের হৃদয়ে ইসলামী জাগরণ সৃষ্টি হতে চলেছে। অনেক যুবক নিজেকে এখন ইসলামীকরণ করতে শুরু করছে।ইসলামী জ্ঞান বিকাশের লড়াইও শুরু করেছে অনেকে। তাদের উদ্দেশ্যেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
মুসলিম ফারায়েয
আইনে কে কতটুকু সম্পত্তি পাবে? ফারায়েয শাস্ত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কি? ফারায়েয শাস্ত্রের বন্টন পদ্ধতি
কি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা থাকলে মুসলিম পরিবারে ঝগরা বিবাদ কমে যেত; বিশেষ করে সম্পদ বন্টন
নিয়ে কোন ঝামেলা হত না। মুসলিম ফারায়েজ সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক:-
ফারায়েয কি?
ফারায়েয শব্দটি হচ্ছে আরবি। শাব্দিক অর্থ হলো- ফরয করা হয়েছে এমন বিষয়, আবশ্যকীয় বিষয়, অকাট্যভাবে প্রমাণিত বিষয়। ইসলামী পরিভাষায় ফারায়েয বলা হয়, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার সম্পত্তিকে।
উত্তরাধিকার সম্পত্তিকে ইসলামে ফারায়েয নামে নামকরণ করার কারণ হচ্ছে, শরীয়তে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন নীতি আল্লাহ তা’লা বিশেষভাবে ফরয করেছেন এবং প্রত্যকের অংশ কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত এবং এর মাঝে কমবেশি করার কোন সুযোগ নেই।
তাই উত্তরাধিকার সম্পত্তিকে শরীয়তে ফরায়েয বলা হয়। মুসলিমদের উত্তরাধিকার সম্পত্তির বন্টন পদ্ধতিকে পরিভাষায় ফারায়েয শাস্ত্র হিসাবে জ্ঞানীদের কাছে বিবেচিত।
কে কতটুকু সম্পত্তির অংশ পাবে?
এই সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা নিসাতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি ফারায়েজ আইন অনুযায়ী তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন হবে।
নিম্নরুপ সমূহ:-
১. মৃত ব্যক্তির পর্যাপ্ত সম্পত্তি থাকলে সেখান থেকে তার দাফন কাফনের যাবতীয় খরচ মেটাতে হবে।
২. তিনি যদি জীবিত থাকা অবস্থায় কোন ধার-দেনা করে থাকেন তবে তাও রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে পরিশোধ করে দিতে হবে।
৩. তার স্ত্রী বা স্ত্রীদের দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকলে বা আংশিক অপরিশোধিত থাকলে তা পরিশোধ করে দিতে হবে। মোট কথা স্ত্রীর সম্পূর্ণ দেনমোহর স্বামী মৃত অথবা জীবিত যাই থাকুক না কেন তা স্বামীর সম্পত্তি থেকে আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ পরিশোধ করে দিতে হবে।
৪. মৃত ব্যক্তি কোন দান কিংবা উইল করে গেলে তা প্রাপককে দিয়ে দিতে হবে। উপরের সব কাজ সম্পন্ন করার পরে মৃত ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পত্তি ফারায়েজ আইন অনুযায়ী তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কোন সন্তানকে ত্যাজ্য বলে ধরা হয় না। ফলে সম্পত্তি থেকে তাকেও বঞ্চিত করা যায় না।
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি পাবে না, সৎ ছেলে-মেয়ে, সৎ বাবা বা সৎ মায়ের সম্পত্তি পায় না।একই ভাবে সৎ বাবা বা সৎ মা, সৎ ছেলে-মেয়ের সম্পত্তি পায় না।
কেউ কাউকে হত্যা করলে হত্যাকারী তার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না।জীবিত থাকা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে কেউ কারো সম্পত্তি পাবে না।
জারজ সন্তান তার মা ও মায়ের আত্নীয়দের থেকে সম্পত্তি সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী পাবে (মুসলিম হানাফী আইন অনুসারে)।
মৃত ব্যক্তির কোন উত্তরাধিকার না থাকলে এবং তা তিনি জীবিতকালে কাউকে না দেয়ার ব্যবস্থা করে গেলে সরকার তার সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে।
অংশীদারগণ :
স্বামী
পিতা
আপন বোন
স্ত্রী
মাতা
বৈমাত্রেয় বোন
দাদা
দাদী বা নানী
বৈপিত্রেয় ভাই
কন্যা
পুত্রের কন্যা
বৈপিত্রেয় বোন।
উত্তরাধিকার আইনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ
আল কোরআনে বর্ণিত নির্দিষ্ট অংশের ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে ।
যথা :- ১/২ , ১/৩ , ১/৪ , ১/৬ , ২/৩ , এবং ১/৮
জবিউল ফুরুজঃ
এদের অংশ পবিত্র কোরআন শরীফে নির্ধারণ করে দেয়া আছে।
স্জবিউল ফুরুজ হল ১২ জন
এদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ এবং বাকি ৮ জন মহিলা।
৪ জন পুরুষ হল –
(১) স্বামী, (২) পিতা , (৩) দাদা , (৪) সৎ ভাই (বৈপিত্রেয়)।
৮ জন মহিলা-
(১) স্ত্রী , (২) কন্যা , (৩) পুত্রের কন্যা , (৪) মাতা,(৫) দাদি এবং নানি
,
(৬) সহোদর বোন, (৭) সৎ বোন (বৈমাত্রেয়),(৮) সৎ বোন (বৈপিত্রেয়)।
আসাবা বা অবশিষ্টভোগীঃ
(১)। আসবা গণের চারটি শ্রেণী আছেঃ
শ্রেণী (১): (১)) পুত্র , (২))কন্যা , (৩))পুত্রের পুত্র, (৪)) পুত্রের কন্যা
শ্রেণী (২): (১))পিতা , (২))দাদা
শ্রেণী (৩):
(১))সহোদর ভাই,
(২))সহোদর বোন,
(৩))সৎ ভাই (বৈমাত্রেয়),
(৪))সৎ বোন(বৈমাত্রেয়),
(৫))সহোদর ভাইয়ের পুত্র,
(৬))সৎ ভাই(বৈমাত্রেয়)-এর পুত্র,
(৭))সহোদর ভাইয়ের পুত্রের পুত্র ,
(৮)) সৎ ভাই(বৈমাত্রেয়)-এর পুত্রের পুত্র ।
শ্রেণী (৪):
(১))চাচা,
(২))চাচা (বৈমাত্রেয়),
(৩))চাচাতো ভাই,
(৪))চাচাতো ভাই (বৈমাত্রেয়),
(৫))চাচাতো ভাইয়ের পুত্র,
(৬))চাচাতো ভাই (বৈমাত্রেয়) এর পুত্র ,
(৭))চাচাতো ভাইয়ের পুত্রের পুত্র,
(৮))চাচাতো ভাই (বৈমাত্রেয়)এর পুত্রের পুত্র
শুধুমাত্র পুরুষ অথবা মহিলা আসাবা হিসাবে থাকলে,
অবশিষ্টাংশের সম্পুর্ণ অংশ পুরুষ অথবা মহিলা পাবেন, কিন্তু
একই শ্রেণীর পুরুষ ও মহিলা একত্রে আসাবা হিসাবে থাকল
পুরুষ ও মহিলাগণ ২:১ অনুপাতে অবশিষ্টভোগী হবেন।
যারা সম্পওিতে অংশিদার হিসেবে কোন নির্দিষ্ট অংশ গ্রহন করে না কিন্তু অংশিদারদের অংশপ্রাপ্তির পর অবশিষ্টাংশ উওরাধিকারী হতে পারে তারাই অবশিষ্টভোগী বা আসাবা । যাবিল আরহাম হচ্ছে যাদের সাথে মৃত ব্যক্তির রক্তের সম্পর্ক রয়েছে কিন্তু সরাসরি মৃত ব্যক্তির উওরাধীকার নয় ।
মোঃ হাবিবুল হক
এডভোকেট
জজ কোর্ট, ঢাকা
মোবাইল নং: ০১৮১৩৬১৩৬৭৯
Discussion about this post