ডেস্ক রিপোর্ট
নির্যাতন করে গৃহকর্মী হত্যা অতপর ফ্রিজিং গাড়িতে মরদেহ গুমের চেষ্টাকালে গ্রেফতার মৌ।
রাজধানীর শাহজাহানপুরে নাদিয়া নামে ১০ বছরের এক শিশু গৃহকর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গৃহকর্ত্রীকে আটক করে একদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
হেফাজতে রাখা হয়েছে নাদিয়ার বড় বোনকেও। সুরতহাল প্রতিবেদনে ওই শিশুকে নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। নাজমা ও নাদিয়া নামে দুই বোন কাজ করে রাজধানী শাহজাহানপুরের শান্তিনিকেতনের একটি বাসায়। নাজমার বয়স ১৪ আর নাদিয়ার বয়স ১০। তাদের গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ে।
রোববার ২৬ ফেব্রুয়ারি গ্রামে থাকা তাদের বাবা নাজিম উদ্দিনকে ফোন করে গৃহকর্ত্রী ফরহাদ বাঁধন মৌ (৫৫) বলেন, নাদিয়া অসুস্থ, দ্রুত ঢাকায় আসতে হবে।
নাজিম উদ্দিন ওইদিন রাতে ঢাকায় আসেন। শাহজাহানপুরের ওই বাসায় গিয়ে দেখেন বড় মেয়ে আছে, ছোট মেয়ে নেই। জানতে চাইলে গৃহকর্ত্রী মৌ জানান, ছোট মেয়ে নাদিয়া হাসপাতালে, সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।
তিনি হাসপাতালে যেতে চাইলে বাধা দেন এবং বলেন রাতে বা সকালে নাদিয়াকে বাসায় আনা হবে। পরদিন সকালে নাজিম উদ্দিনকে না জানিয়ে ফ্রিজিং গাড়িতে করে নাদিয়াকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান গৃহকর্ত্রী মৌ। সঙ্গে নেন বড় মেয়ে নাজমাকেও।
এ ঘটনায় হতচকিত নাজিম উদ্দিন ৯৯৯-এ ফোন দেন। পুলিশ মগবাজার এলাকা থেকে ওই ফ্রিজিং গাড়িসহ মৌকে আটক করে এবং শিশু নাদিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় সোমবার রাতে শাহজাহানপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নাদিয়ার বাবা নাজিম উদ্দিন। ওই মামলায় গৃহকর্ত্রী মৌকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) তাকে আদালতে সোপর্দ করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ বলছে, শিশু নাদিয়ার মৃত্যু হয়েছে দুই দিন আগেই। পুলিশকে না জানিয়ে সম্ভবত লাশ গুম করার চেষ্টায় ছিলেন গৃহকর্ত্রী মৌ। এ ব্যাপারে রিমান্ডে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
মঙ্গলবার রাতে মোবাইল ফোনে নাদিয়ার বাবা গণমাধ্যমকে বলেন, মরদেহ নিয়ে তিনি একা গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। বড় মেয়ে নাজমাকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। সে কোনো কথা বলছেন না। তাকে কিছু একটা খাওয়ানো হয়েছে বলে দাবি করছেন সে।
নাদিয়ার মৃত্যুর খবরে শাহজাহানপুরের শান্তিনিকেতনের ওই বাসার সামনে জড়ো হওয়া লোকজন বলছেন, নাদিয়াকে প্রায়ই নির্যাতন করতেন গৃহকর্ত্রী মৌ। রাস্তাঘাটেও নাদিয়াকে পেটাতেন তিনি। নির্যাতনের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে নাদিয়া। পাড়ার ফার্মেসি থেকে তার জন্য ওষুধ কেনেন মৌ।
শাহজাহানপুর থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নাদিয়ার বড় বোন নাজমা পাঁচ বছর ধরে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে আসছে। আর নাদিয়া কাজ করছিল দেড় বছর ধরে। দুই বোনই মৌকে মা বলে ডাকত। মৌ নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। তিনি ‘সাপ্তাহিক অপরাধ অনুসন্ধান’ নামে একটি পত্রিকায় কাজ করেন বলে দাবি করেন। শাহজাহানপুরের ওই বাসায় মৌ একা থাকেন।
শাহজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনির হোসেন মোল্লা বলেন, রোববার ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে নাদিয়াকে শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যান নূরে আলম নামের এক হোটেল কর্মী। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানান, নাদিয়া মারা গেছে। এরপর নাদিয়ার মরদেহ নিয়ে বাসায় আসেন মৌ।
সেদিন সারাদিন মরদেহ বাসায় রেখে নাদিয়ার বাবা-মাকে খবর দেন তিনি। তারা সোমবার ঢাকায় আসেন। সোমবার সকালে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি এনে নাদিয়ার মরদেহ ভেতরে ঢুকিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যাচ্ছিলেন মৌ। পরে ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
Discussion about this post