মোঃমনিরুজ্জামানঃ-
ট্রেনে আমি জানালার পাশে বসে ভূমি আইন পড়তেছি।হঠাৎ মেয়ে কন্ঠ ভেসে আসলো কানে ” জানালার পাশের সিটটা আমাকে দেওয়া যাবে?
আমি বললাম সুন্দরী মেয়েদের জানালার পাশেই বসতে হয়,এতে প্রকৃতির আলো-বাতাসও খুশি হয়, এটাই প্রকৃতির আইন।
মেয়েটা হাসতে হাসতে বললো এটা কোন আইনের কতো ধারা?
আমি জানালার পাশের সিট ছেড়ে তার সিটে বসতে বসতে বললাম বাংলাদেশের আইনে এটা এখনো আইন হয়নি তবে আমি সংসদ সদস্য হলে এই আইন তৈরি করবো, এখন এন্টিনাটাল পাবলিসিটি করতেছি।
সে আমার সিটে বসতে বসতে বললো এন্টিনাটাল পাবলিসিটি কি?
এন্টিনাটাল পাবলিসিটি হলো কোন আইন পাশ করার পূর্বে সেই আইনের একটি খসড়া তৈরি করে প্রকাশ করা। যেন উক্ত আইনকে সাধারণ মানুষ বিচার বিবেচনা করতে পারে। অর্থাৎ আইনে কোন ভুল ত্রুটি বা অন্য আইনের সাথে সাংঘর্ষিক কি না বা জনস্বার্থের কল্যাণে কিনা তা জনগণ বুঝতে পারে।
ওহ আচ্ছা, আপনি কি আইনজীবী?
নাহ এখনো না তবে আইনের ছাত্র।
তো হবু উকিল সাহেব, আপনি সংসদ সদস্য হলে কি শুধু সুন্দরী মেয়েদের নিয়েই আইন তৈরি করবেন?
না, প্রথমে একটা পুরুষ নির্যাতন দমন আইন তৈরি করবো।
ইন্টারেস্টিং, পুরুষ নির্যাতন দমন আইন কেন?
আসলে বাংলাদেশে নারী নির্যাতন দমন আইন আছে কিন্তু পুরুষ নির্যাতন দমন আইন নাই।এটা কি বৈষম্য না?
সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।
অথচ নারীদের জন্য আইন আছে কিন্তু পুরুষদের জন্য এমন কোন স্পেশাল আইন নাই।
কিন্তু এখন সমাজের দিকে তাকিয়ে দেখুন পুরুষাই বেশি নির্যাতিত হচ্ছে। অথচ মামলা করতেছে নারীরা, প্রথম আলোর একটা রিপোর্ট পড়লাম, দেখলাম এই আইনে মিথ্যা মামলাই বেশি।
আচ্ছা মিথ্যা মামলা করলে কোন শাস্তি হয় না?
হুম হয়।নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলা দায়ের করলে অনধিক সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড হবে এবং এর সাথে অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবে।তবে এ জন্য ট্রাইব্যুনালে লিখিত অভিযোগ করতে হবে।
ট্রাইব্যুনাল আবার কি? আমিতো জানতাম অভিযোগ থানায় বা আদালতে করতে হয়।
ট্রাইব্যুনাল হলো সংবিধান বা অন্য কোন আইন দ্বারা গঠিত এক ধরনের বিশেষ বিচারিক প্রতিষ্ঠান, যেটি নির্দিষ্ট কিছু বিষয় নিষ্পত্তির কাজ করে থাকে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ এর ২৬ ধারায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের কথা বলা আছে। এখানে বলা আছে এই আইনের অপরাধ বিচার করার জন্য প্রত্যক জেলায় একটি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থাকবে।এই ট্রাইব্যুনালের বিচারক হবেন জেলা ও দায়রা জজ সমমানের বিচারক।
শুধু জেলা ও দায়রা জজ?
জেলা ও দায়রা জজ বলতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজও অন্তর্ভুক্ত।
আচ্ছা এই আইনে শুধু জেলা ও দায়রা জজরা বিচার করবে কেন?
অন্য কোন জজ বা ম্যাজিস্টেটরা বিচার করতে পারবে না কেন?
আসলে ম্যাজিস্টেটরা সব বিচার করতে পারে না।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩২ ধারা অনুযায়ী তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট সর্বচ্চো দুই বৎসরের কারাদণ্ড এবং দুই হাজার টাকার অর্থদণ্ড দিতে পারে।দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত সর্বচ্চো তিন বৎসরের কারাদণ্ড এবং পাচ হাজার টাকার অর্থদণ্ড দিতে পারে।
মেট্রোপলিটন এবং প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট সর্বচ্চো পাঁচ বৎসরের কারাদণ্ড এবং দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিতে পারে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩১ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড দিতে পারে জেলা জজ।যেহেতু এই আইনে কিছু অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদন্ড আছে যেমন ধারা ৪(১) অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি দহনকারী, ক্ষয়কারী অথবা বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা কোন শিশু বা নারীর মৃত্যু ঘটান বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করেন তবে সেই ব্যক্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবে এবং ইহার অতিরিক্ত সর্বোচ্চো ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবে।
আবার ধারা ৪(২)(ক) অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি দহনকারী, ক্ষয়কারী অথবা বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা কোন শিশু বা নারীর দৃষ্টিশক্তি বা শ্রবনশক্তি নষ্ট বা মুখমণ্ডল, স্তন বা যৌনাঙ্গ বিকৃত বা নষ্ট করেন তবে সেই ব্যক্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবে এবং ইহার অতিরিক্ত সর্বোচ্চো ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবে।
আবার ধারা ৮ অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি মুক্তিপন আদায়ের উদ্দেশ্যে কোন নারী বা শিশুকে আটক করেন তবে সেই ব্যক্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবে এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবে।
আবার ধারা ৯(২) অনুযায়ী কোন ব্যক্তি যদি কোন শিশু বা নারীকে ধর্ষন করে মৃত্যু ঘটান তবে সেই ব্যক্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবে এবং ইহার অতিরিক্ত সর্বনিম্ম ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবে।ধারা ৯(৩) অনুযায়ী দলবদ্ধভাবে ধর্ষন করে মৃত্যু ঘটালে দলের প্রত্যেকে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবে এবং ইহার অতিরিক্ত সর্বনিম্ম ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবে।
ধারা ১১ অনুযায়ী যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটালে মৃত্যুদন্ড হবে।
ধারা ১২ অনুযায়ী ভিক্ষাবৃত্তির উদ্দেশ্যে শিশুর অঙ্গহানি করলে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবে এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবে।
এজন্যই এই আইনের বিচার জেলাজজ সমমানের বিচারকের করতে হয়।
ধীরে ধীরে এই সুন্দরী মেয়ের সাথে আমার গল্প বেশ ভালোই জমে উঠলো।কোন রোমান্টিক গল্প না, এটাকে বলা চলে লিগ্যাল গল্প।ভাবতে লাগলাম আচ্ছা অপরিচিত সুন্দরী মেয়ের সাথে গল্প করা কি লিগ্যাল হচ্ছে? হচ্ছেই তো করো সাথে গল্প করাতো আর অপরাধ না,দন্ডবিধির কোন ধারাতেই এটা অপরাধ না।কবি বলেছেন সুন্দরী মেয়ে দেখলে গল্প করো।সুন্দর কিছু অনুভূতি পাবে।কোন কবি বলছে এটা জানি না।
আমার ভাবনা কেটে গেল তার প্রশ্নে।
বললো অনেকতো গল্প হলো কিন্তু আপনার নামই জানা হলো না।
আপনার নাম কি?
আমার নাম শেখ মনিরুজ্জামান। ডাকনাম মনির, আপনি যদি বরিশাইল্লা হন তবে মনু বলে ডাকতে পারেন।
জি না আমি বরিশাইল্লা না আমি মৌমিসিঙ্গা।
জানি মেয়েটা খুব আবেগ নিয়ে বসে আছে যাতে আমি তার নাম জিজ্ঞেস করি।এই আবেগি অবস্থায় মেয়েটাকে খুব সুন্দর লাগতেছে।তার নাম জিজ্ঞেস করে এই আবেগ শেষ করে তার সৌন্দর্য নষ্ট করতে চাচ্ছি না।তাই তার নাম জিজ্ঞেস করলাম না।
কিছুক্ষণ নিরবতার পর, হয়তো কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তারপরও জিজ্ঞেস করলো আচ্ছা এই আইনেতো অর্থদন্ড অনেক টাকা কোন অপরাধীর কাছে যদি এতো টাকা না থাকে?
এই আইনের ১৫ ধারায় বলা আছে তার বিদ্যমান সম্পদ থেকে আদায় করা সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে তিনি যে সম্পদের মালিক হবেন সেই সম্পদ থেকে আদায় করা হবে।
আর একটা কথা বলে রাখি কোন সাংবাদিক যদি সংবাদ মাধ্যমে নির্যাতিতা নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ করে তাহলে সে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অনুর্ধ্ব ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবে।
অনেক কথা হলো ময়মনসিংহ স্টেশনে এসে গেছি।এখন নামতে হবে।আপনার কিছু বলার থাকলে বলুন।
জানি মেয়েটা তার পরিচয় আমায় দিতে চাচ্ছে, নাম,ফোন নাম্বার, ফেসবুক আইডি ইত্যাদি। কিন্তু আমি ঐসব না জিজ্ঞেস করে বললাম এমন নীল শাড়ি পরে ঘোরাঘুরি করবেননা, নীল শাড়িতে আপনাকে অতিরিক্ত বেশি সুন্দর লাগে।
মেয়েটা একটা হাসি দিল, হাসতে হাসতে বললো শেখ মনিরুজ্জামান নামেই কি আপনার ফেসবুক আইডি?
আমি বললাম হুম।
আচ্ছা ভালো থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ। বলেই মেয়েটা ট্রেন থেকে নেমে গেল।আর আমি আমার গন্তব্যের উদ্দেশ্য আবার যাত্রা শুধু করলাম জানালার পাশে বসে ল্যন্ড ল পড়তে পড়তে……।
লেখকঃ
মোঃমনিরুজ্জামান
শিক্ষার্থী,আইন বিভাগ
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
Discussion about this post