মোঃ শহিদুল ইসলাম (সাগর)
প্রথমে কেউ আইন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে যখন কোন একজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে আইন পেশায় শিক্ষানবিস হিসেবে কাজ করেন তখন দিনশেষে তাকে সর্বোচ্চ ২০০- ৩০০ টাকা দিয়ে থাকেন। এটা দিয়ে সকালের নাস্তা, দুপুরের লাঞ্চ এবং যাতায়াতের ভাড়া দেওয়ার পরে দিনশেষে সারাদিন সিনিয়রের কাছ থেকে যা শিখেন তা নিয়েই বাসায় ফিরতে হয়। কিন্তু এলাকার লোকজনের অনেক আশা, প্রত্যাশা এবং অনেক দাবি তা মাস শেষে মূলধন হিসেবে পকেটে যা থাকে তা দিয়েই তাদের দাবি পূরণ করতে হয়।
আর অপরদিকে একজন জুনিয়র আইনজীবীরই বা কি করনীয়, হয়তো এর চেয়ে একটু বেশি। দিনশেষে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা তার পকেটে এসে পড়ে কিন্তু সারাদিনের খরচ বাদে হয়তো পকেটের জমা থাকে ২০০ টাকা মূলধন হিসেবে। সমাজের লোকজনের দাবি-দাওয়া এদের ক্ষেত্রে একটু বেশিই থাকে। কিন্তু কি আর করা দাবী তো পূরণ করতেই হবে অবশেষে যেটুকু বাকি থাকে সেটুকুই মাস শেষে নীরব কান্না।
সিনিয়র আইনজীবীদের অবস্থা:-(আমার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত)
হয়তো তাদের আয়ের অবস্থা আকাশ সমতুল্য কিন্তু ব্যয়ের দিকে তাকালে জুনিয়র আইনজীবীগণ নীরব কান্না করতে পারে কিন্তু ওনাদের কাছে নীরব কান্নাও যেন অপরিচিত। তবে এটা সবার ক্ষেত্রে নয় হাতে গোনা দুই একজন সিনিয়র বাদে সবাই ভাল আছেন। এই লকডাউন, শাটডাউন যে নামেই ডাকুন না কেন তাদের ব্যাংকের দরজা কিন্তু খোলা। জমানো টাকা এ যেন সোনার হরিণ। আয় আছে, ব্যয়ও আছে পাশাপাশি সোনার হরিণও আছে।
ডাক্তার/হাসপাতাল/ফার্মেসীর অবস্থা:-
আমি কখনো মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা দেখেছি আর তা হলো এই ডাক্তার সমাজ। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও, জীবনের ঝুঁকি আছে এটা জানা সত্ত্বেও, পরিবার-পরিজনকে দূরে রেখে এভাবে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে যুদ্ধ করাটা শুধু ডাক্তারকেই দেখেছি। হয়তো এটাও সম্ভব হয়েছে সরকারের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য কিন্তু এই সুবিধাই বা কতোটুকু। যাই হোক দিন শেষে তাদের আমি করোনা যোদ্ধাই বলবো।
হাসপাতালের কথা যদি বলি তাহলে আমি এক নামে এদের শুধু কসাইখানায় বলবো, যেখানে এই করোনার কারণে সবার ইনকাম বন্ধ সেখানে এ যেন এক কসাইখানা। আপনারাও তো একটা দায়িত্ব নিতে পারতেন, বেড ভাড়া সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় অন্তত লাভের অংশ টুকু বাদ দিয়ে শুধু খরচের অংশটুকু রেখে বিল করে ডাক্তারের মতো এক কাতারে দাড়িয়ে করোণা যোদ্ধা হতে পারতেন।কিন্তু পারলে দুই পয়সার বিল চার পয়সায় করতে যেন আপনাদের হাত কাঁপে না। পারলে মরা মানুষকে আইসিওতে রেখে লক্ষ-লক্ষ টাকা বিল করা এ যেন এক নতুন কায়দা।
আর ফার্মেসির কথা আর কি বলবো, যেখানে সমস্ত দোকানপাট, অফিস-আদালত বন্ধ সেখানে ফার্মেসি খোলা এ যেন রসের হাড়ি। দিনশেষে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন। একটু মানব সেবা করুন, ওষুধের দাম কেমন সেটা যাদের ফার্মেসী আছে তারা ভালো জানেন। যে দামে আগে বিক্রি করতেন এ করোনাকালীন সময়ে দামটা কমিয়ে দিয়ে একটু নজির সৃষ্টি করুন। কিন্তু কমানোর তো কোন কারণই নাই এ যেন ওষুধ সরবরাহ কম এর দোহাই দিয়ে আকাশচুম্বী দামের স্টিকার লাগিয়ে বিক্রি করা আরেক ফন্দি।
পথ শিশু/মানুষের অবস্থা:-
সরকারতো ঘোষণা দিয়েছেন লকডাউন বা শাটডাউন। এটা অবশ্য আমাদের নিজেদেরকে সুরক্ষা করার জন্যই কিন্তু যাদের ঘরই নাই, যারা সব সময় পথে পথে ঘোরেন, পথেই যাদের খাওয়া-দাওয়া, পথেই যাদের বিছানা। দিনশেষে মানুষের কাছ থেকে চেয়ে দু-চার পয়সা যারা পেত, হয়তো এটা দিয়েই তাদের পেট চলে যেত। আবার হয়তো খাবার দোকানের সামনে গিয়ে হাত পেতে যাদের পেটের ক্ষুধা মেটাতো তারা আজ এই সাতটি দিন কিভাবে পেটে পাথর বেঁধে থাকবে। এ যেন জন্মই আজন্ম পাপ।
পশুপাখি জীবজন্তুদের অবস্থা:-
কথায় আছে যেখানে কর্ম আছে সেখানে নাকি খাদ্যের অভাব হয় না। কিন্তু এই লকডাউনে যেখানে কর্মই নাই সেখানে শুধু মানুষের খাদ্য কেন কুকুর, বিড়াল, পশু পাখিদের খাদ্যেরও অভাব এ যেন ৪৩ এর দুর্ভিক্ষ। একটা সুস্থ পৃথিবীর প্রত্যাশায় চেয়ে আছে কোটি-লক্ষ প্রাণ, চেয়ে আছে আঠারো হাজার মাখলুকাত। ক্ষমা করো, রক্ষা করো এই অবলা জাতিকে, জীবজন্তুকে।
মধ্যবিত্তদের অবস্থা:-
এদের অবস্থার আর কি বলবো। কথায় আছে হয় মেরে দাও, নাই শুয়ে পড়ো। তেমনি হয় নিম্নবিত্ত হও নতুবা উচ্চবিত্ত হও। মধ্যবিত্ত এ যেন এক অভিশাপ। না পারে হাত পেতে চাইতে, না পারে কান্না করতে এ যেন এক ঘাতক ব্যাধি।
অবশেষে কবির ভাষায় বলবো, জীবে যে করে প্রেম সে বীষে ঈশ্বর।
Discussion about this post