করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সারা দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর প্রায় ১৩ হাজার আইনের শিক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা পেছানোর বিষয়ে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

পরীক্ষা পেছানোর বাপারে আইনমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বার কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করবো। এ সপ্তাহে আমার সঙ্গে তাদের কথা হতে পারে।’
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহা) আমলে বারের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হাজার হাজার শিক্ষার্থীর খাতা মূল্যায়নেরর ভার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ওপর অর্পণ করা হয়। কিন্তু মামলার জট বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও নিষ্পত্তি ও রায় লেখার পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব বিচারপতিদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই বিচারপতিদের ওপর অর্পিত অতিরিক্ত দায়িত্ব কমিয়ে আনতে খাতা মূল্যায়নের ভার পুনরায় আইনজীবীদের হাতে ফিরিয়ে আনতে কোনও বিধি প্রণয়ন বা সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে? বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রশ্নে আনিসুল হকের উত্তর, ‘এসকে সিনহা অনেক কিছুর অমূলক পরিবর্তন করেছিলেন। সেগুলো নিয়ে আমরা কথা বলবো। এটি সুবিধা-অসুবিধার বিষয়। যেটি বাস্তবিকভাবে সুবিধার হবে, সেটিই করা হবে বলে আমি আশা করি। এ বিষয়ে বারের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।

করোনার পরিস্থিতির কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। তা সত্ত্বেও বার কাউন্সিলের পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগের বিরুদ্ধে সংসদ অধিবেশনে প্রশ্ন তোলেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। গত ৭ সেপ্টেম্বর সংসদ অধিবেশনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বার কাউন্সিল আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে নিয়মিত পরীক্ষার ব্যত্যয় ঘটিয়ে আসছে। তবে ৬৫ দিন ধরে প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের আন্দোলন দমাতে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বার কাউন্সিল এমন সিদ্ধান্ত কীভাবে নিলো? ১৩ হাজার শিক্ষার্থীর একত্রিত হওয়ার কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে হাজার গুনে।
পূর্বে শুধু মৌখিক পরীক্ষার (ভাইভা) মাধ্যমে আইনজীবীদের সনদ প্রদান করা হতো। তবে দিনে দিনে শিক্ষার্থীদের চাপ বাড়তে থাকায় আইনজীবী হতে গেলে বর্তমানেেএম সি কিউ, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। তাছাড়া এই তিন ধাপের যেকোনও একটি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা একবার উত্তীর্ণ হলে পরবর্তী পরীক্ষায় তারা দ্বিতীয় ও শেষবারের মতো অংশগ্রহণের সুযোগ পান। তবে দ্বিতীয়বারেও অনুত্তীর্ণ হলে তাদের পুনরায় শুরু থেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। সেই অনুযায়ী ২০১৭ সালে ৩৪ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে লিখিত পরীক্ষায় দ্বিতীয় ও শেষবারের মতো বাদ পড়া ৩ হাজার ৫৯০ শিক্ষার্থী এবং ২০২০ সালে প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবীর মধ্যে এমসিকিউতে উত্তীর্ণ ৮ হাজার ৭৬৪ শিক্ষার্থীসহ মোট ১২ হাজার ৮৫৮ জন সনদ প্রত্যাশী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন।
২০১৭ সালে দেওয়া ১২ টি নির্দেশনা সংবলিত আপিল বিভাগের রায় প্রতিপালন না করে গত কয়েক বছর ধরে পরীক্ষা গ্রহণ ও খাতা রিভিউ এবং খাতায় ওয়েমার্ক সুবিধা প্রদান না করাসহ বেশ কিছু দাবিতে আন্দোলন করেছেন শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা। আন্দোলনের মুখে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বার কাউন্সিল।
Discussion about this post