একটা বড় যৌক্তিক আন্দোলন দাঁড় করাতে ইস্যু প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ইস্যু দুই রকম থাকে। একটি অরিজিনাল অপরটি মতলবী। অরিজিনাল ইস্যুতে দিনে দিনে আন্দোলন জমাট বাঁধে। পর্যায়ক্রমে যৌক্তিক দাবীর প্রতি একাত্বতা ও সংহতি প্রকাশ করতে থাকে অনেকে। আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আন্দোলন সফল হয়।
অন্যদিকে মতলবী আন্দোলনে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর লাভ-স্বার্থের প্রশ্ন জড়িত থাকে। স্বভাবত কারনেই আন্দোলনটি স্বতঃস্ফূর্ত হয় না। আন্দোলনকারীদের সংখ্যা বাড়ে না। আন্দোলন সফল করার জন্য ভিন্ন উপায় বের করা হয়।
আন্দোলন সফলতায় দীর্ঘায়ু হওয়ার পিছনে নিম্নোক্ত কারণগুলি হতে পারেঃ-
প্রথমত,বর্তমানে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের যৌক্তিক দাবীর স্বপক্ষে অনেকের মতানৈক্যতা রয়েছে। প্রিলিমিনারী পাশ-ফেল। ঘরের শত্রু বিভিষন! সমগোত্রীয়রা চায়না তাঁদের প্রতিযোগী বাড়ুক। ইভেন প্রিলিমিনারী অকৃতকার্যদের বেশিরভাগই চায় না কৃতকার্যরা এ আন্দোলনে জয়ী হোক। হয়তবা এটা তাঁদের হিংসাত্মক মনোঃভাব কিংবা না বুঝতে পারাই হতে পারে। লেজকাঁটা শেয়াল সব সময়ই চাইবে স্বজাতীদেরও লেজটা কাঁটা থাক। এত সহজ সমীকরণ কেন যে ওই প্রিয় বন্ধুরা বোঝেনা প্রিলিমিনারী পাশকৃতদের যত তারাতারি সামনের প্রসেস সমাপ্ত হবে তত তারাতারি আবার নতুন প্রিলিমিনারী পরীক্ষার ডেট দিবে। আসলে বোঝেনা তা হয়তবা ঠিক না। এখানে তাঁদের নিজের ক্ষতি হলেও হিংসাত্মক মনোঃভাবের বহিপ্রকাশ ঘটে। এমনকি প্রিলিপাশকৃতদের অনেকে যৌক্তিক দাবীর স্বপক্ষে অবস্থান থাকলেও তা স্বশরীরে আন্দোলনে উপস্থিতি নাই। কিংবা অনেকের আন্দোলনে যোগদানের ইচ্ছা থাকলেও করোনার সংক্রামনের ভয়ে ঘরে বসে ফেসবুকে আন্দোলন ও যুক্তি প্রদর্শন করা। ফলে আন্দোলনে উপস্থিতি কম।
দ্বিতীয়ত, এ আইনজীবী তালিকাভূক্তির পরীক্ষায় দীর্ঘ জটিলতার সাগর পাড়ি দিয়ে অনেকে ইতিমধ্যে কিনারে পৌছে ওপাড়ে গিয়ে আজ বিজ্ঞ । তাঁদের ধারনা আমরা এত অনিয়মের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে লাইসেন্স পেয়েছি। আর আজকের নবীনরা এত সহজেই তালিকাভূক্ত হলে তো আমাদের পরিশ্রম ওদের কাছে তেমন গুরুত্ব পাবে না, এমনকি অংশিদার বৃদ্ধি হচ্ছে। প্রসঙ্গত কারনেই এদের মধ্য থেকে অনেকেই আজ এ আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান।
তৃতীয়ত, বার কাউন্সিলের অধিকাংশ সদস্যরাই বর্তমান ক্ষমতাশীন দলের বিশ্বস্তের আস্থাভাজন ব্যক্তিত্ব। আর মহামান্য হাইকোর্টের মোস্ট সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে সুপরিচিত। জস,ক্ষ্যতি,সম্মান,
ক্ষমতার কোন কমতি নাই। যার ফলে বর্তমান আন্দোলনে মানবিকতায় তাঁরা তেমন তোয়াক্কা করছে না।
চতুর্থত, এ আন্দোলন যে সঠিক তা বিজ্ঞ সিনিয়র অনেক আইনজীবী-ই তা উপলব্ধি করতে পেরেছে। কিন্তু বড় দাদা যে পরিবারের কর্তা,তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে হিতে বিপরীত হয় কিনা? ভবিষ্যতে আমারও তো নির্বাচন তথা পদ-পদবীর বিষয় আছে তখন তো বড় দাদাকেই পাশে লাগবে বরং চোখ-কান বন্ধ রাখাই শ্রেয়।
পঞ্চমত,সামনে বার কাউন্সিলের নির্বাচন আছে। বর্তমান কমিটির অনেকেই ওই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবে না। সেজন্য নতুন প্রার্থীরা বর্তমান কমিটির কার্যক্রমের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলবে না। কারণ বড় দাদা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে না পারলেও তো তাঁর সমর্থন ও সহযোগীতা আমার একান্ত প্রয়োজন আছে। সেকারনেই আত্মনীতির অবস্থানে চুপ থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ষষ্ঠত, আন্দোলনের যৌক্তিক দিকগুলো তুলে ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে না। ফলে আন্দোলনের সময় আরো দীর্ঘায়ু হচ্ছে।
পরিশেষে বলতে চাই, প্রতিটা সফল আন্দোলনের পিছনে করতে হয়েছে ধৈর্য্য সহকারে আন্দোলন। ঠিক তেমনি এ আন্দোলন যদি সফলতা লাভ করে তাহলে বর্তমান-ভবিষ্যত শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের জন্য বিরাট উপকার হবে। নিজেদের অধিকার নিজেদেরকেই আদায় করতে হবে। কেউ সামনের সিড়ি দেখায় দিবে না। প্রয়োজনে আন্দোলনের ভিন্ন উপায় বের করে
আলো জ্বালিয়ে হলেও সামনে এগিয়ে যেতে হবে। একবার যখন ভুল পথে পা দিয়েই ফেলেছি তবে এ থেকে উত্তরনের উপায় বের করতেই হবে যে কোন প্রকারে। সেজন্য বলবো এখানে প্রিলিমিনারী পাশ-ফেল এটা বড় কথা নয় স্বার্থটা আমাদের সকলের। তাই আসুন আমাদের অধিকার আদায়ে সবাই একাত্বতা ঘোষনা করে আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তুলে নিজের ও পরিবার তথা সমাজের কাছে মাথা তুলে দাঁড়াই।
Discussion about this post