মো:জাকির হোসেন (সাতক্ষীরা প্রতিনিধি)
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলায় সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ তিনজনের সর্বোচ্চ ১০ বছর করে এবং চার্জশিটভুক্ত বাকী ৪৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
একই সাথে তাদের জরিমানাও করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: হুমায়ুন কবীর এক জনার্কীণ আদালতে এই রায় ঘোষণা দেন।
উক্ত রায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আরিফুর রহমান ও রিপনকে ১০ বছর করে, আব্দুল কাদের বাচ্চুর নয় বছর, আব্দুর রাজ্জাকের সাড়ে ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছেএছাড়া সাজাপ্রাপ্ত অন্যান্য আসামিরা হলেন, শেখ তামিম আজাদ মেরিন, আব্দুর রাকিব মোল্লা, আক্তারুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম, আব্দুল মজিদ,
অ্যাড. আব্দুস সামাদ, হাসান আলী, ইয়াছিন আলী, ময়না, আব্দুস সাত্তার, আব্দুর রব, রিংকু ও আব্দুস সামাদকে চার বছর ছয় মাস করে, আশরাফ হোসেন, নজরুল ইসলাম, রোমেল, তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, মাজহারুল ইসলাম, আব্দুল মালেক, জহুরুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, গোলাম রসুল, অ্যাড. আব্দুস সাত্তার, মো: আলাউদ্দিন, আলতাফ হোসেন, সঞ্জু, নাজমুল হোসেন, শাহাবুদ্দিন, সাহেব আলী, সিরাজুল ইসলাম, টাইগার খোকন, জাবিদ রায়হান লাকী, রকিব, ট্রলি শহীদুল, কনক,

শেখ কামরুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, ইয়াছিন আলী, শেলী, শাহিনুর রহমান, বিদার মোড়ল, সোহাগ হোসেন, মাহাফুজুর মোল্লা, আব্দুল গফ্ফার গাজী ও মাহাফুজুর রহমান সাবু। এদের মধ্যে ১৩ জনকে সাড়ে ৪ বছর ও ৩২ জনকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আদালতে মোট ৫০ জন আসামির মধ্যে ৩৪জন উপস্থিত ছিলেন। বাকীরা পলাতক রয়েছেন। সাতক্ষীরা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এড. আব্দুল লতিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দেখে যশোরে ফেরার পথে জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালিন সাংসদ হাবিবুল ইসলামের হাবিবের নির্দেশে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে বিএনপি ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা একটি যাত্রীবাহী বাস রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়।
এসময় গুলিবর্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। হামলায় বিরোধীদলীয় নেতা প্রাণে রক্ষা পেলেও তার গাড়িবহরে থাকা সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়র শেখ মুজিবর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী ফাতেমা জাহান সাথী, জোবায়দুল হক রাসেল, শেখ হাসিনার ক্যামেরাম্যান শহীদুল হক জীবন ও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন।
কলারোয়ার তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মোসলেম উদ্দিন এ ঘটনায় কলারোয়া থানায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি এজাহার জমা দেন। থানা মামলাটি রেকর্ড না করায় একই বছরের ২ সেপ্টেম্বর তিনি সাতক্ষীরার আমলি আদালতে মামলাটি করেন। এ মামলা খারিজ হয়ে যাবার পর হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। এসময় তদন্ত করে পুলিশ তৎকালীন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়।

মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর পর ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে কোয়াশমেন্ট করেন আসামিরা। এরপর চলতি বছরের ২২ অক্টোবর মামলাটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ৯০ দিনের মধ্যে বিচার কার্য শেষ করার জন্য সাতক্ষীরা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রিট আদালতকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর মামলাটির বিচার কার্য নতুন করে শুরু হয়।
এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ৫০ জনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই রায়ে খুশি হয়ে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীরা বিজয় মিশিল করেছে।
Discussion about this post