শ্রীপুরে একই পরিবারের চারজনকে একসাথে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিলো । সাধারণ নাগরিক হিসেবে এগুলো আমাদের সহ্যের সীমারেখা অতিক্রম করে প্রতি নিয়ত ! খুব হতাশ হলেও আমাদের বাঁচতে হয় প্রশ্নহীন ভাবেই !আমরা চারিদিকেই মানবিকতার বিপর্যয়ে পুরোপুরি অসহায় !
যে কারণে লিখছি তা হল এ ঘটনাগুলো যাতে না ঘটে তার জন্য বাংলাদেশের আইনে যে যে বিষয়গুলো আছে তার মধ্যে কিছু বিষয় পরিবর্তন করা জরুরী হয়ে পড়েছে ।
প্রথম প্রশ্নটি হল শিশু কারা, কত বছর বয়স পর্যন্ত শিশু বিবেচনা করে তাদের রাষ্ট্র আলাদাভাবে যত্ন নেবে ?
আরেকটি বিষয় শিশুরা অপরাধ করলে কাউন্সিলিং করার পর তারা সুস্থ্য জীবনে ফিরলো কিনা তা দেখার দায়ভার কারও উপর ন্যস্ত কিনা ? বলা যেতে পারে পরিবার দায়ভার নিতে বাধ্য কিন্তু অপরাধী অপরাধ করার পর আসলে সামাজিকভাবে এর প্রভাব কতটা খারাপ হয় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে শ্রীপুরের এই হত্যা কান্ডটি ।
আলোচিত এই হত্যাকান্ডের জন্য অভিযুক্ত পাঁচজন অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে । তারমধ্যে প্রথমে যে গ্রেফতার হয়েছে তার নাম পারভেজ । ছেলেটির চেহারায় স্পষ্ট সে অপরাধী, সে নেশা করে, সে খারাপ মানুষের তালিকায় আছে !
কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে সে কিশোর বেলাতেও অপরাধী ছিলো । সাত বছর বয়সী একটি মেয়েকে সে খুন করেছিলো কিশোর বয়সেই !এই বয়সের দোহাই দিয়েই সে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আবার ঐ পরিবারকে হুমকিও দিয়েছে । তারপরও শুধু কিশোর বিবেচনায তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ারই ফল এই ফোর মার্ডার ! এবং আশ্চর্য ব্যপার হল পিবিআইকে সে বলেছিলো সে একাই চারজনকে হত্যা করেছে !তারপর গাজীপুর র্যাব-১ এর ঐকান্তিক চেষ্টায় গ্রেফতার হয় অন্যান্যরা । সেখানে দেখা যায় এই ছেলেটি সহ একই পরিবারের কয়েকজন জড়িত এই বিভতস হত্যাকান্ডে!
একটি পরিবারকে শেষ করে দিয়েছে সে !জঘন্যতম একটি উদাহরণ দাঁড় করেছে আমাদের সামনে । ঘুড়ি উড়াতে উড়াতে ছোট্ট মেয়েটি বলছিলো ঘুড়িটি বাবার কাছে পাঠিয়ে দেবে ! সে মেয়েটিকে সহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে !
অপরাধী হয়ে উঠার জন্য সামাজিক ও পারিপার্শিক যে যে ফ্যাক্টরগুলো কাজ করে তার সবগুলোই হয় এ নরপিচাশটি স্পর্শ করে আসছে ছোটবেলা থেকেই ! চোখের সামনে আমাদের এমন শিশু কিশোর হয়ত আরও ঘুরে বেড়ায় । তাদের অসহ্যতা আমাদের চেয়ে চেয়ে দেখতে হয় কারণ তারা ছোট মানুষ বলে তাদের বিচারিক ব্যবস্থা পর্যন্ত দাঁড় করানো যায়না ।
এখন আইনের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি সংশোধনের সময় এসেছে । যদি সে সময় ছেলেটির অপরাধের বিচার তখন করা যেত তবে হয়ত আমাদের এমন হত্যাকান্ড দেখতে হতনা ।
শুধু কাউনিইসলিং নয় বয়স ভেদে সাজা প্রাপ্তির বিষয়টি এখন ভাবতে হবেই ।যারা অপরাধ করবে তাদের অপরাধ বিবেচনায় এমন সাজা দিতে হবে এবং তা দ্রুত বিচারিক মাধ্যমে যাতে তারা আবার অপরাধ করতে ভীত থাকে । আশা করি এ ব্যপারগুলো আইন মন্ত্রনালয় আরও সুক্ষরুপে বিচার বিশ্লেষন করে ব্যবস্থা নেবেন । সকল অপরাধীর শাস্তি নিম্চিত করতেই হবে সাথে সাথে কাউন্সিলিং ও অপরাধীদের আত্ন কর্ম সংস্থানেও নজর রাখতে হবে ।
শ্রীপুরের ঘটনায় দ্রুত গ্রেফতারের জন্য সংশ্লিষ্টজনদের ধন্যবাদ জানাই । রাষ্ট্রের কাছে আবেদন রাখছি এদের সবগুলো ঘৃণ্য মানুষদের ফাঁসি হোক ।
সাঈদ চৌধুরী
সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি
ও রসায়নবিদ
শ্রীপুর, গাজীপুর
Discussion about this post