সন্ত্রাসবাদ (Terrorism)
আকিব হাসান সাদঃ
সন্ত্রাসবাদ বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। ১১ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর পৃথিবীর সব দেশই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
প্রকৃতিগতভাবে সন্ত্রাসবাদকে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। কারো কাছে যেই কাজটি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও সন্ত্রাসী,অন্যদের কাছে তারা স্বাধীনতার সৈনিক।
তাছাড়া সরকার বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াকে যেমন সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তেমনি সরকারের কর্মকান্ডও কখনো কখনো সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তাছাড়া সন্ত্রাসীদের অস্ত্র,অর্থ বা অন্য কোনরূপ সমর্থনের বিষয়টিও এ প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ। Federal Bureau of Investigation(FBI) সন্ত্রাসবাদকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে যে Terrorism is the unlawful use of force or violence against person or any segment thereof in furtherance of political and social objective। অর্থাৎ সন্ত্রাস হল রাজনৈতিক ও সামাজিক উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যক্তি বা তার কোনো অংশের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ বা সহিংসতার বেআইনি ব্যবহার।
সবচেয়ে প্রাচীন যে গোষ্ঠীর কর্মকান্ডের সাথে আধুনিক সন্ত্রাসী সংগঠনের যে মিল খুঁজে পাওয়া যায়, তা হচ্ছে ” Zealots ” বা উগ্রবাদী। ইহুদিদের এই গোষ্ঠীটি রোমানদের কাছে ” Sicarii ” বা ” Dagger men ” নামে পরিচিত।
এই গোষ্ঠীটি রোমান দখলদার বাহিনীর সদস্যদের গুপ্ত হত্যার সাথে জড়িত ছিল। এমনকি যেসব ইহুদি রোমানদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজিয়ে রাখত,তাদেরকেও তারা হত্যা করতো। তাদের বিশ্বাস ছিলো যে,রোমানদের প্রজা হিসেবে তারা তাদের ইহুদি ধর্মের প্রতি অনুগত থাকতে পারবে না।
এভাবে ” Zealots ” দের বিক্ষোভ প্রকাশ পায় যদিও তারা পরবর্তীতে আত্নহত্যার পথটাই বেছে নেয়।
” Assassins ” বা গুপ্ত ঘাতকরা হচ্ছে এমন গোষ্ঠী যাদের সাথে বর্তমান সমাজের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। শিয়া সম্প্রদায়ের ” নিজারী ইসলামী ” সম্প্রদায় এই পথ বেছে নিয়েছিল তাদের বিপক্ষ দলের নেতাদের হত্যা করার জন্য। নিজেদের সমর্থক গোষ্ঠীর সল্পতার কারণে তারা সম্মুখ যুদ্ধ এড়িয়ে নিজেদের একজন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করত যে তার নিজের জীবনের বিনিময়ে শত্রুপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যক্তিকে হত্যা করতো।
প্রাচীন গুপ্ত ঘাতকীয় সন্ত্রাসবাদের সেই প্রথা কখনওই শেষ হয়নি।মধ্যযুগে সম্রাট বা রাজা বাদশাহরা অনেকেই এর শিকার হলে ঐসব কর্মকান্ডকে ঠিক সন্ত্রাসী কাজের সাথে তুলনা করা যায় না। রাজ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে এ ধরনের হত্যা সংঘটিত হত। মধ্যযুগে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু দল গ্রামাঞ্চলে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে লুটপাট করত যাকে ডাকাতির পর্যায়ে ফেলা যায়।
” Terrorist বা Terrorism ” শব্দগুলো সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয় ফরাসি বিপ্লবের সময়। বিপ্লবী সরকার ১৭৯৫ সালে ” সন্ত্রাসবাদ ” শব্দের ব্যবহার করে ” Reign of terror ” বা সন্ত্রাসের রাজত্বকে বোঝানোর উদ্দেশ্যে। রাজশক্তির অত্যাচারে অতীষ্ট ব্যক্তিদের বিদ্রোহকে সন্ত্রাসী কাজের সাথে তুলনা করতেন তখনকার শাসকরা।
অনেকের মতে আধুনিক সন্ত্রাসবাদের যুগ শুরু হয় ১৯৬৮ সালে যখন ” Popular Front for the Liberation of Palestine – PFLP ” নামক সংগঠনটি তেলাবিব থেকে রোম রুটের একটি বিমান হাইজাক করে। এই হাইজ্যাকের কারণ ছিল, ঐ এয়ারলাইনারটি ছিল ইসরায়েলের এবং হাইজ্যাকের লক্ষ্যও ছিল ইসরাইল।
পৃথিবীতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডগুলো বিভিন্নভাবে নানা পদ্ধতিতে সংঘটিত হয়। এদের মধ্যে অন্যতম বহুল পরিচিত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডগুলোর পদ্ধতিগুলো হচ্ছে
বোমা বিস্ফোরণ, অপহরণ, অস্ত্র হামলা ও হত্যা, সরকারি সম্পত্তিতে বা বেসরকারি স্থাপনায় অথবা সেবা-প্রদানকারী সংস্থায় আগুন ধরিয়ে ক্ষতিসাধন করা বা ” Arsons and Fire Bombing “,ছিনতাই বা হাইজ্যাকিং ইত্যাদি।
সন্ত্রাসগোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগে রয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী, জাতিগত সন্ত্রাসী বা Ethnocentric, জাতীয়তাবাদী বা Nationalistic, বিপ্লবী, ধর্মীয় উগ্রপন্থি, রাজনৈতিক গোষ্ঠী, সামাজিক গোষ্ঠী, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠী।
Discussion about this post