স্বাভাবিক শিশু কন্যা শিশু হলে এখনও মানুষ অনেকেই খুশি হতে শেখেনি ! সভ্য মানুষ সমাজ হিসেবে আমরা যে সামাজকে চিনি সেখানে সভ্যতার পেছনে একটা “হালুম” বাস বাস করে । হালুম হল ছোট বেলায় কোন শিশুকে ভয় দেখানোয় ব্যবহৃত একটি শব্দ । এই শব্দটির পেছনে বাঘ, ভাল্লুক, শেয়াল আবার কখনও কখনও পেতনি ও রাক্ষসের ছবি অঙ্কিত আছে শিশুদের মনে । সভ্য সমাজের সভ্য মানুষগুলো “হালুম” হয়ে ওঠে তখনই যখন তারা আর নিজেদের মানুষ বলে বিবেচনায় রাখতে পারেনা । যে কথা থেকে হালুমে এলাম সে কথাটি বলার আগে যেটা বলা দরকার সেটা হল একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সন্তান যে ঘরে আছে সে ঘরের কষ্টের ধরণ ।
আমার অফিসের এক কলিগ ছিলেন । তার সন্তান বুদ্ধি প্রতিবন্ধি । সতের বছরের সন্তানটি আজও পর্যন্ত হাত দিয়ে খেতে পারে না, ঘুমোতে গেলে এখনও বালিশ নিতে পারে না, বিছানায় মাঝে মাঝেই এখনও হিসু করে দেয়, বাইরে একা যেতেও পারেনা, বলেনা কথা !
এই বাচ্চাটাকে রেখে বাবা অফিসে চলে যায় । সারা দিন মা বাচ্চাটিকে ঘিরে রাখে । মায়ের মনের আকুতি টুকু কি অনুভব করতে পারেন কেউ ! সতের বছরের কতটা সময় মা নিজের জন্য একটু সময় বের করতে পেরেছে ? কতটা সময় রাতে ছেলেটার বাবার সাথে এই মা খুব আন্তরিক মুহুর্ত কাটাতে পেরেছে ?
একজন প্রতিবন্ধী শিশু ঘরে থাকলে এমনিতেই সে ঘরটি না পাওয়ার হাজার কষ্টের ঘরে পরিনত হয় । তারমধ্যে যে বাবারা এরকম হয় এমনিতেই কন্যা শিশু দেখতে পারেনা সে বাবাদের স্ত্রী যারা মা হন তাদের কি অস্থা ! এমনও হাজারো প্রশ্ন নিয়ে মায়েরা পালন করে যান তার প্রতিবন্ধী বাচ্চাটিকে । এই না পাওয়াগুলো কোন বইয়ে লিপিবদ্ধ না থাকলেও কষ্টের তীব্রতা যে অসম সমীকরণের শেষটুকু নিঃশেষে অবিভাজ্য তা কিন্তু খুব বেশী স্পষ্ট ।
একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কন্যা শিশু ধর্ষিত হয়েছে গতকাল শ্রীপুরের মাওনার শিরিসগুড়ি গ্রামে । তাও আবার ধর্ষণ করেছে শিশুটির চাচা ! হতভাগী মা জানালা দিয়ে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ের আর্তচিৎকার শুনেছে আর হাউমাউ করে কেঁদেছে । মা যতক্ষনে গিয়ে থানায় মামলা করেছে তার আগেই কেউ কেউ এটা আবার আপোষের জন্যও নাকি চেষ্টা করেছে ।
বলা হয়ে থাকে নারীরা ঘরেও নিরাপদ নয় । বলা হয় নারীদের পোষাকের দোষ, নারীরা উগ্র আর নারীরা কথা শোনেনা বলেই ধর্ষণ বাড়ছে । বৃুদ্ধপ্রতিবন্ধী একজন শিশু তাকে লালন পালন করার জন্য যে মা এত কষ্ট করে যান প্রতিদিন সেই মায়ের সামনে যদি শিশুটিকে ধর্ষণের শিকার হতে হয় এবং ধর্ষণের দায় যদি শুধু নারীদের পোষাক, আচরণ আর ব্যবহারের উপরই বর্তায় তবে তা যে আমাদের “হালুম” হয়ে ওঠার একটা পূর্ব লক্ষন সেটা কিন্তু স্বচ্ছ কাচের মতই স্পষ্ট ।
ডাক্তারি পরীক্ষা, তদন্ত, আপোষ করার মানুষিকতা সৃষ্টিতে চাপ প্রয়োগ সব কিছুর পরও যে ব্যপারটি থেকে যায় তা হল বিচার প্রক্রিয়া ! থানা পুলিশ আসামীকে গ্রেফতার করেছে । এখন কি হবে এর বিচার ?
এই বিচারটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে করা হোক । আদালত আমাদের বিশ্বাসের জায়গা । পুলিশ যখন আসামীকে ধরেছে তখন এ বিচার নিয়ে কোন ধরণের দেরী দেখতে চাইনা ।
অনেক দিন থেকেই চেয়ে আসা হচ্ছে শিশু ধর্ষেকদের মৃত্যু দন্ড । কিন্তু শিশু ধর্ষণের যদি ক্যটাগড়ি হয় তবে প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণের শাস্তি আরও কঠিন হতেই হবে ।
আমি সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলছি এই বিচার যেন একটি মাইল ফলক হয় । বিচার না হলে অপরাধ বাড়তেই থাকবে এবং এক সময় এই অপরাধগুলোই সংগঠিত হবে আমাদের চোখের সামনে বা আমাদের সাথেই !আমরা মিথ্যামিথ্যি সভ্য সমাজ, সভ্য সমাজ খেলা করতে চাইনা । আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধ দূর করা সম্ভব এ বিচারটি যেন তারই একটি স্বাক্ষী হয় তাই চাওয়া ।
সাঈদ চৌধুরী
সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি
ও রসায়বিদ
শ্রীপুর, গাজীপুর
Discussion about this post