সাইবার ক্রাইম (ফেক আইডি/পরিচয় প্রতারণা) ও তার শাস্তি
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বিড়ম্বনার একটি পরিচিত ধরণ হলো পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণ। পরিচয় প্রতারণা তথা ভুয়া আইডির মাধ্যমে রাজনৈতিক উস্কানি, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো, কটূক্তি, ছবি বিকৃতি, অন্যের ছবির সঙ্গে ছবি জুড়ে দেওয়া, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের ছবি প্রকাশ- ইত্যাদি বেড়েই চলেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ফেক বা ভূয়া আইডির ছড়াছড়ি, কেউবা মেয়েদের নামে আইডি খুলে,কেউবা খ্যাতনামা ব্যক্তিদের পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। মানহানিকর বা বিভ্রান্তিমূলক কিছু পোস্ট করলে, ছবি বা ভিডিও আপলোড করলে, কারও নামে অ্যাকাউন্ট খুলে বিভ্রান্তমূলক পোস্ট দিলে, কোনো স্ট্যাটাস দিলে কিংবা শেয়ার বা লাইক দিলেও সাইবার অপরাধ হতে পারে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর মাধ্যমে এমন অপরাধ দমনের জন্য কঠোন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণ কি?
সাধারণ অর্থে, পরিচয় প্রতারণা বলতে ডিজিটাল ডিভাইস বা ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচয় গোপন করে উপস্থিত হওয়াকে বুঝায়।অন্য কারো নাম, পরিচয়,পদবী, মর্যাদা ব্যবহার করে এই ধরনের একাউন্ট সাধারণত প্রতারণার উদ্দেশ্যে খোলা হয়। এর ফলে মানুষ নানাভাবে হয়রানির শিকার হন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪ ধারা অনুযায়ী, পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণ বলতে বুঝায়,
(১) যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে বা জ্ঞাতসরে কোন কম্পিউটার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম,কম্পিউার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক,কোনো ডিজিটাল ডিভাইস বা ডিজিটাল সিস্টেম বা ডিজিটাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করিয়া-
ক) প্রতারণা করিবার বা ঠকাইবার উদ্দেশ্যে অপর কোন ব্যক্তির পরিচয় ধারণ করেন বা অন্য কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত কোনো তথ্য নিজের বলিয়া প্রদর্শন করেন, বা
খ) উদ্দেশ্যমূলকভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে কোনো জীবিত বা মৃত ব্যক্তিসত্তা নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যে নিজের বলিয়া ধারণ করেন,
অ) নিজের বা অপর কোন ব্যক্তির সুবিধা লাভ করা বা করিয়ে দেয়া,
আ) কোন সম্পত্তি বা সম্পত্তির স্বার্থ প্রাপ্তি,
ই) অপর কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিসত্তার রূপ ধারণ করিয়া কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিসত্তার ক্ষতিসাধন,
তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণের শাস্তি:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪ ধারা অনুযায়ী,
১. যদি কোন ব্যক্তি উক্তরুপ কোন অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।
২. যদি কোনো ব্যক্তি উক্তরূপ অপরাধ দ্বিতীয় বা পুন: পুন: সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ বছর বা অনধিক ১০ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন ।
অপরাধের শিকার হলে কিংবা ফেঁসে গেলে করণীয় :
কোনো কারণে আপনি যদি এমন সাইবার অপরাধের শিকার হন, তাহলে আপনার নজরে আসা মাত্রই আপনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বিষয়টি অবগত করে রাখতে পারেন। প্রয়োজনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে রাখতে পারেন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনেও (বিটিআরসি) লিখিতভাবে জানিয়ে রাখতে পারেন। এতে করে কেউ আপনাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করলে আপনি কিছুটা সুরক্ষা পেতে পারেন।
কেউ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য কেউ চুরি করলে বা আপনি যদি সাইবার অপরাধের গুরুতর শিকার হন এবং প্রতিকার পেতে চান, তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন,২০১৮ এর আশ্রয় নিতে পারেন। এ আইনের আওতায় থানায় এজাহার দায়ের করতে পারেন।
যদি সাইবার অপরাধের অভিযোগে মিথ্যাভাবে ফেঁসে যান, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বুঝিয়ে বলতে হবে যে আপনি পরিস্থিতির শিকার। যদি আদালতে আপনাকে প্রেরণ করা হয় তাহলে আদালতে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করে যেতে হবে।
সর্বোপরি আইনের আশ্রয় নেওয়ার পাশাপাশি সচেতন হওয়া জরুরি।
Discussion about this post