নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার দিন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে খুনিদের ছোড়া কামানের গোলায় মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডে ১৩ জন নিহত হয়েছিলেন।
এ ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠনের এক যুগের বেশি সময় পার হলেও এখনো এর বিচারকাজ শেষ হয়নি। এ দীর্ঘ সময়ে আদালতে মাত্র ১৮ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে না আসায় মূলত এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে আদালতের অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও তাদের আদালতে হাজির করতে পারছে না পুলিশ।
এদিকে খুনিদের ছোড়া কামানের গোলায় হতাহত দরিদ্র পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। মামলার দ্রুত বিচারের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তাদের পুনর্বাসনের জোর দাবি জানিয়েছে। ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
ঘটনার সময় ২৪ বছরের যুবক ছিলেন মামলার বাদী মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী। বর্তমানে অসুস্থ হয়ে তিনি বিছানায়। জানতে চাইলে তার স্ত্রী শাহনাজ আক্তার মেরিনা যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিনেও এ মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া হতাশাজনক। পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
মেরিনা বলেন, কামানের গোলার ঘটনার পর থেকে অদ্যাবধি কেউ হতদরিদ্র পরিবারগুলোর কোনো ধরনের খবরাখবর নেয়নি। এমনকি কোনো আর্থিক সহায়তাও করেনি।
মামলার বাদী মোহাম্মদ আলী বর্তমানে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। এ মামলাটি নিয়ে তিনি বহু লড়েছেন। তবে বিনিময়ে তিনিসহ ভুক্তভোগী পরিবারগুলো কিছুই পায়নি। প্রধানমন্ত্রী চাইলেই এ পরিবারগুলো মানবেতর জীবনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারে।
জানতে চাইলে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সাইফুল ইসলাম হেলাল যুগান্তরকে বলেন, সাক্ষীদের বিরুদ্ধে সমনের পর অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে দীর্ঘদিন আগে। সাক্ষীদের হাজিরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব স্থানে কয়েক দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপরও আদালতে সাক্ষী হাজির করতে পারছে না পুলিশ। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি এবং এই মামলার আসামিরা একই।
ফলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় কাদের কাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠির জবাবও এখন পর্যন্ত আসেনি।
যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, সে ব্যাপারে গেজেট হয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া দেড় বছর ধরে করোনার প্রাদুর্ভাবে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে এখন নিয়মিত আদালত খুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
হত্যা মামলা ও বিচার : ৪৬ বছর আগে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় মামলা হয় ১৯৯৬ সালে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণের সময় সেনা সদস্যরা কামানের গোলা ছুড়লে তা গিয়ে মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডের ৮ ও ৯ এবং ১৯৬ ও ১৯৭ নম্বর বাড়ির (টিনশেড বস্তি) ওপর পড়ে। ওই ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১৩ জন মারা যান। আর প্রায় ৪০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজন পুরুষ সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান।
Discussion about this post