সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টঃ
সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের মধ্যে পার্থক্য জানার আগে জেনে নেই সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট কি?
সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট এর সংজ্ঞাঃ
- সুপ্রিম কোর্ট এর সংজ্ঞাঃ-
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইন পাশ হয়েছিল। আইনে ঘোষিত আছে যে, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ নিয়ে গঠিত হবে। ঢাকা হাইকোর্ট ভেঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগ গঠিত হয়েছিল এবং পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট ভেঙ্গে আপীল বিভাগ গঠিত হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগকে একত্রে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বলা হয়।
- হাইকোর্টের এর সংজ্ঞাঃ-
হাইকোর্ট বিভাগ বা উচ্চ আদালত বিভাগ হল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীম কোর্টের নিম্ন বিভাগ (উচ্চ বিভাগ হল আপীল বিভাগ)। এ বিভাগ প্রধান বিচারপতির অধীনে হাইকোর্ট বিভাগের অন্যান্য বিচারপতিদের সমন্বয়ে গঠিত। হাইকোর্ট বিভাগ মূল বিচারকার্য পর্যালোচনার ক্ষমতা রাখে এবং দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় বিষয়ে আপীল শুনানী করতে পারেন।বাংলাদেশের সংবিধানের ১০১ ধারায় হাইকোর্টের এখতিয়ার বর্ণিত আছে। হাইকোর্ট বিভাগ মূল মামলা, আপীল, রিভিশন, রেফারেন্স ও অন্যান্য বিচারকার্য সম্পাদন করবে। এছাড়াও, বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিকেল ১০২ এর অধীনে রিট আবেদন এবং কোম্পানী বিষয়ে নির্দিষ্ট সীমিত ক্ষেত্রে মূল এখতিয়ার আছে।
ঢাকা হাইকোর্ট (১৯৪৭ – ১৯৫৫)
পুরাতন হাইকোর্ট ভবন ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার পর পাকিস্তান (প্রাদেশিক সংবিধান) আদেশ ১৯৪৭ অনুযায়ী ঢাকায় আপীল, সিভিল ও মূল বিচার বিভাগ সহ আলাদা হাইকোর্ট গঠিত হয়, যা ঢাকা হাইকোর্ট নামে পরিচিত ছিল।
সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের মধ্যে পার্থক্য:-
সুপ্রিম কোর্ট ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইন পাশ হয়েছিল। আইনে ঘোষিত আছে যে, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ নিয়ে গঠিত হবে। ঢাকা হাইকোর্ট ভেঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগ গঠিত হয়েছিল এবং পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট নিয়ে আপীল বিভাগ গঠিত হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিভাগ (১৯৭১ – বর্তমান পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট নামে চালু রয়েছে। কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগ প্রধান বিচারপতি ও হাইকোর্ট বিভাগের অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত। হাইকোর্ট বিভাগ মূল বিচারকার্য পর্যালোচনার ক্ষমতা রাখে এবং দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় বিষয়ে আপীল শুনানী করতে পারেন।বাংলাদেশের সংবিধানের ১০১ ধারায় হাইকোর্টের এখতিয়ার বর্ণিত আছে। হাইকোর্ট বিভাগ মূল মামলা, আপীল ও অন্যান্য বিচারকার্য সম্পাদন করবে। এছাড়াও, বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিকেল ১০২ এর অধীনে রিট আবেদন এবং কোম্পানী এবং সেনাবিভাগ বিষয় হিসেবে নির্দিষ্ট সীমিত ক্ষেত্রে মূল এখতিয়ার আছে।
সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ-
সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট আপিল বিভাগের পৃথক কার্যের এখতিয়ার আছে। এ দুটি কোর্টের ক্ষমতা ও কাজ নিয়েই সুপ্রিম কোর্ট। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ মিলে সুপ্রিম কোর্ট সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে দেশের সংবিধান ও মৌলিক অধিকার রক্ষা করে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। আপিল বিভাগের ক্ষমতা ও কাজ । আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়, ডিক্রি বা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ করে শুনানির ব্যবস্থা করতে পারে।রাষ্ট্রপতি আইনের কোনো ব্যাখ্যা চাইলে আপিল বিভাগ এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়ে থাকে।ন্যায়বিচারের স্বার্থে কোনো ব্যক্তিকে আদালতের সামনে হাজির হতে ও দলিলপত্র পেশ করার আদেশ জারি করতে পারে।আপীল বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন হাইকোর্ট বিভাগের জন্য এবং সুপ্রীম কোর্টের যে কোন বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন অধঃস্তন সকল আদালতের জন্য অবশ্যপালনীয় হবে।এভাবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনের ব্যাখ্যা, ন্যায়বিচার সংরক্ষণ ও পরামর্শ দান করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট হচ্ছে দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালত এবং এর বিচারকবৃন্দ প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযু্ক্ত হয়ে থাকেন। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি দেশের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে থাকেন। সংবিধানের ৯৫ ধারায় বিচারপতি পদে নিয়োগের যোগ্যতা বর্ণিত আছে, কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক না হলে এবং সুপ্রীম কোর্টে অন্যূন দশ বৎসরকাল এ্যাডভোকেট না থেকে থাকলে, অথবা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে অন্যূন দশ বৎসর কোন বিচার বিভাগীয় পদে অধিষ্ঠান না করে থাকলে, অথবা সুপ্রীমকোর্টের বিচারক পদে নিয়োগলাভের জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকলে তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকপদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদের বিধানাবলী সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতির নিকট সুপ্রীম কোর্টের কোন বিভাগের বিচারকসংখ্যা সাময়িকভাবে বৃদ্ধি করা উচিত মর্মে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে তিনি যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন এক বা একাধিক ব্যক্তিকে অনধিক দুই বৎসরের জন্য সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিযুক্ত করতে পারবেন। কিংবা তিনি উপযুক্ত বিবেচনা করলে হাইকোর্ট বিভাগের কোন বিচারককে যে কোন অস্থায়ী মেয়াদের জন্য আপীল বিভাগের আসন গ্রহণের ব্যবস্থা করিতে পারিবেন। তবে শর্ত আছে যে, অতিরিক্ত বিচারকরূপে নিযুক্ত (কোন ব্যক্তিকে বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের অধীন বিচারকরূপে নিযুক্ত) হতে, কিংবা ৯৮ অনুচ্ছেদের অধীন আরও এক মেয়াদের জন্য অতিরিক্ত বিচারকরূপে নিযুক্ত হতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই নিবৃত্ত করবে না।
সুপ্রিমকোর্টকে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার সর্বোচ্চ আদালত বলা হয় । তাই সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের সিদ্ধান্ত আইন বলে গণ্য হয় । রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগ করেন । বিচারপতিদের কার্যকালের মেয়াদ ৬৭ বছর পর্যন্ত । এই সুপ্রিমকোর্ট একাধারে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত এবং আপিল আদালত হিসেবে কাজ করে । দেশের বিভিন্ন জেলার মামলার আপীল সংক্রান্ত শুনানি সুপ্রিম কোর্টে হয়। একমাত্র সাংবিধানিক প্রতিবিধানের ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিক সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাতে পারেন । সুপ্রিমকোর্ট দেশে নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলির সুরক্ষার ব্যাপারে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে । সুপ্রিমকোর্টকে বাংলাদেশ সংবিধানের ‘সংরক্ষক, ব্যাখ্যাকর্তা ও অভিভাবক’ বলা হয় ।
হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ-
হাইকোর্ট বিভাগ মূল বিচারকার্য পর্যালোচনার ক্ষমতা রাখে এবং দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় বিষয়ে আপীল শুনানী করতে পারে।হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা ও কাজ হলো নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে।কোনো ব্যক্তিকে মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কোনো কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারে অথবা এ ধরনের কোনো কাজ করাকে বেআইনি ঘোষণা করতে পারে।অধস্তন কোনো আদালতের মামলায় সংবিধানের ব্যাখ্যাজনিত জটিলতা দেখা দিলে উক্ত মামলা হাইকোর্টে স্থানান্তর করে মীমাংসা করতে পারে।অধস্তন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ করে।সকল অধস্তন আদালতের কার্যবিধি প্রণয়ন ও পরিচালনা করে।
সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট এর বিচারপতির সংখ্যাঃ-
- সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির সংখ্যাঃ-
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে ১০২ জন বিচারপতি কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে ৮ জন আপিল বিভাগে এবং ৯৪ জন হাইকোর্ট বিভাগে রয়েছেন।
- হাইকোর্টের বিচারপতিঃ-
হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত ৮৫ জন স্থায়ী বিচারপতি এবং ৯ জন অতিরিক্ত বিচারপতি।[১] তার মধ্যে ০৩ জন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে কর্মরত আছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর গুরুত্বঃ-
সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট ছাড়া ও বিচার বিভাগের গুরুত্ব অনেক। বাংলাদেশ সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে বিচার বিভাগ অন্যতম। নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, অপরাধীর শাস্তিরবিধান এবং দুর্বলকে সবলের হাত থেকে রক্ষার জন্য নিরপেক্ষ বিচার বিভাগের গুরুত্ব অপরিসীম। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করা বিচার বিভাগের কাজ। বিচার বিভাগ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। বিচার বিভাগ আইনের অনুশাসন ও দেশের সংবিধানকে অক্ষুন্ন রাখে।
বিচার বিভাগের গঠনঃ-
বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সুপ্রিম কোর্ট, অধস্তন আদালত এবং প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল নিয়ে গঠিত।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টঃ-
বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ আদালতের নাম সুপ্রিম কোর্ট। এর রয়েছে দুটি বিভাগ, যথা- আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ। সুপ্রিম কোর্টের একজন প্রধান বিচারপতি রয়েছেন, যাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি বলা হয়। রাষ্ট্রপতি তাকে নিযুক্ত করেন। প্রত্যেক বিভাগের জন্য যতজন বিচারক প্রয়োজন ততজন বিচারককে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত। প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগের বিচারপতিদের নিয়োগ দেন।প্রধান বিচারপতি ও আপীল বিভাগে নিযুক্ত বিচারকগণ কেবল আপীল বিভাগে এবং অন্যান্য বিচারক কেবল হাইকোর্ট বিভাগে আসন গ্রহণ করেন। প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিগণ বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন। রাজধানীতে সুপ্রীম কোর্টের স্থায়ী আসন আছে, তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে অন্য যে স্থান বা স্থানসমূহ নির্ধারণ করবেন, সেই স্থান বা স্থানসমূহে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হতে হলে তাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে কমপক্ষে ১০ বছর এডভোকেট হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা বাংলাদেশে বিচার বিভাগীয় পদে ১০ বছর বিচারক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণ ৬৭ বছর পর্যন্ত স্বীয় পদে কর্মরত থাকতে পারেন।বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। বাংলাদেশের সংবিধানের ষষ্ঠ অধ্যায়ে সুপ্রীম কোর্ট প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আইনি বিধান রয়েছে। সংবিধানের ধারা ১০০-এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের রমনায় সুপ্রীম কোর্ট অবস্থিত।এটা সচরাচর হাইকোর্ট নামে পরিচিত; কারণ ১৯৭১ সালের পূর্বে এই ভবনে পূর্ব পাকিস্তানের উচ্চ আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হতো।বাংলাদেশের সংবিধানের ষষ্ঠ অধ্যায়ের ৯৪ ধারায় সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আইনি বিধান ব্যক্ত করা হয়েছে। এই ধারার (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট” নামে বাংলাদেশের একটি সর্বোচ্চ আদালত থাকিবে এবং আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ লইয়া তাহা গঠিত হইবে। এই ধারার (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “প্রধান বিচারপতি এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যেরূপ সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজন বোধ করিবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হইবে”; আরো বলা হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি “বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি” নামে অভিহিত হইবেন। পরবর্তী অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগে নিযুক্ত বিচারকগণ কেবল উক্ত বিভাগে এবং অন্যান্য বিচারক কেবল হাইকোর্ট বিভাগে আসন গ্রহণ করিবেন।”; এবং চতুর্থ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারক বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন।
সংবিধানের ধারা-১০০-এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন অবস্থিত হবে। তবে বিধান আছে যে, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ক্রমে প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে অন্য যে স্থান বা স্থানসমূহ নির্ধারণ করবেন, সেই স্থান বা স্থানসমূহে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে পারবে।
সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট এখতিয়ারঃ-
সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট-এর দুটি বিভাগ আছেঃ আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ।সংবিধানের ১০১ ধারায় হাইকোর্টের এখতিয়ার বর্ণিত আছে। ১০৩ ধারায় আপিল বিভাগের এখতিয়ার বর্ণিত আছে।হাইকোর্ট বিভাগ নিম্ন আদালত এবং ট্রাইবুনাল থেকে আপিল শুনানি করে থাকে। এছাড়াও, বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিকেল ১০২ এর অধীনে রিট আবেদন , এবং কোম্পানি এবং সেনাবিভাগ বিষয় হিসেবে নির্দিষ্ট সীমিত ক্ষেত্রে মূল এখতিয়ার আছে। হাইকোর্ট বিভাগ থেকে আপিল শুনানির এখতিয়ার রয়েছে আপিল বিভাগের।[৪][৫] সুপ্রিম কোর্ট নির্বাহী শাখা হতে স্বাধীন এবং রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত ক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে আদেশ দিতে পারে।[৬]।
বেঞ্চ গঠনঃ-
এক বা একাধিক বিচারকের সমন্বয়ে প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠন করতে পারবেন।
বিচারপতি নিয়োগঃ-
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ সম্পর্কে বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে। ৯৫(১) অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করবেন। সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বলা হয়েছে, ‘এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাঁহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন।’ অর্থাৎ প্রধান বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রির পরামর্শ গ্রহণে বাধ্য নন।হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসাবে প্রথমে দুই বছর প্রাথমিক ভাবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নিবন্ধিত হয়ে উকিলতি করা এবং সংবিধানের ৯৮ বিধানের অধীনে জুডিশিয়াল সার্ভিসে নিযুক্ত অতিরিক্ত বিচারক । বর্তমানে এই অনুপাত হচ্ছে ০০% – ০০%। এই সময়ের সফল সমাপ্তির পরে এবং প্রধান বিচারপতি কর্তৃক সুপারিশের উপর একজন অতিরিক্ত জজকে সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি স্থায়ী নিয়োগ দেন। আপিল বিভাগের বিচারক একই বিধান অধীন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত করা হয়। সব ধরনের নিয়োগ সংবিধানের ১৪৮ এর বিধান অনুযায়ী শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হয়। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক ৬৭ বছর পর্যন্ত সংবিধানের বিধান (১৩) দ্বারা বর্ধিত হিসাবে তিনি বিচারপতি থাকবেন ( সংশোধনী আইন ২০০৪ (২০০৪ এর ১৪)।
লেখকঃ ল ফর ন্যাশনস, ইমেইলঃ lawfornations.abm@gmail.com, মোবাইল: 01842459590.
Discussion about this post