নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন সড়ক পরিবহন আইন আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে। নতুন আইনে সব ধারায় আগের চেয়ে সাজা বাড়ানো হয়েছে। ফলে আইনটি কার্যকর হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সড়কে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে গত বুধবার আইনটি কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন হয়েছে। আইনটি পাসের প্রায় এক বছর দুই মাস পর এ ঘোষণা এল। নতুন সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর শাস্তির বিধান রাখা রয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘দণ্ডবিধির ৩০৪-বি ধারায় যাই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে’।
একই সঙ্গে এটি জামিন অযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। আইনে পেশাদার-অপেশাদার চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে অনধিক ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান থাকছে।
শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাস করা হয়। ওই বছর ৮ অক্টোবর এর গেজেট জারি করা হয়। তবে আইনে বলা হয়, সরকার আইনটি কার্যকরের তারিখ ঠিক করে এর প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
এ সুযোগে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো আইন পরিবর্তনের দাবিতে টানা ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘট পালন করে। সভা, সেমিনার ও স্মারকলিপির মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে সাজা কমানোর জন্য সরকাকে চাপ দিতে থাকে। আইনটি কার্যকরের বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে সরকার। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ওই কমিটির সদস্য।
সড়ক মন্ত্রণালয় ও তিন মন্ত্রীর কমিটির কার্যক্রম এবং মালিক-শ্রমিক সংগঠন সূত্র জানিয়েছে, তিন মন্ত্রীর কমিটি মালিক-শ্রমিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন। কমিটি ইতিমধ্যে তাদের সুপারিশ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে দিয়েছে। এতে আইনের কিছু ধারায় পরিবর্তনের সুপারিশ আছে। তবে আইন কার্যকর করার আগে পরিবর্তন করলে সরকারকে সমালোচনায় পড়তে হবে- এ চিন্তা থেকে কোনো পরিবর্তন ছাড়াই আইনটি কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে আগে আইনটি কার্যকর করা হবে। সংশোধনের বিষয়টি পরে বিবেচনায় নেওয়া হবে।
নিরাপদ সড়ক চাই–এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, নতুন আইনে সাজা বা অনেক বিষয় আমাদের চাওয়া অনুযায়ী হয়নি। তারপরও যা আছে তা অতীতের চেয়ে অনেক ভালো। কারণ অতীতে মালিক–শ্রমিক সংগঠনগুলো আন্দোলন করে আইনকে দুর্বল করে দিয়েছে। সরকার সাহস করে সড়ক দুর্ঘটনার দায়ে সাজা বাড়িয়েছে। পরবর্তী সময়ে যাতে এটা পরিবর্তন না হয়ে যায়, সেটাই আশা করছেন তিনি।
Discussion about this post