ডেস্ক রিপোর্ট: হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের গেইটের সামনে সাংবাদিকদের মারধর করে মোটরসাইকেল, ক্যামেরা ও মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গত ১৬ আগস্ট হবিগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়াসিন আরাফাত এই আদেশ দেন।
এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী শিবলী খায়ের নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের গেটের সামনে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার তথ্য ও সংবাদ সংগ্রহের সময় দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার সাংবাদিকদের মারধর করে মোটরসাইকেল, ক্যামেরা এবং মোবাইল ছিনতাই করে একদল দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় পরদিন ওই পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক তারেক হাবিব বাদী হয়ে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি সাইদুর রহমানকে প্রধান আসামি করে নয়জনের নাম উল্লেখ করে হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। মামলা নম্বর- সিআর ৫/২১।
আইনজীবী আরও বলেন, বিচারক মামলার শুনানি শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন। গত ১৮ জুলাই পিবিআই তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা পেয়ে সাতজনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করে। ১৬ আগস্ট বিচারক প্রতিবেদন আমলে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী খালেদ আহম্মেদ বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা আসামিরা হলেন হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি, শহরতলীর বড় বহুলা গ্রামের যুবলীগ নেতা সাব্বির আহমেদ রনি, শহরের পুরান মুন্সেফি এলাকার কৌশিক আচার্য্য পায়েল, যশেরআব্দা এলাকার সৈকত দেবনাথ ও অজ্ঞাত দুইজন।
মামলার বাদী তারেক হাবিব বলেন, আদালতে মামলা দায়ের করায় ইতোমধ্যে তাঁকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ তাঁর ওপর একাধিকবার হামলার চেষ্টা চালানো হয়েছে। তাঁর ছবি ও নাম ব্যবহার করে ফেইক আইডি তৈরি করে হয়রানির চেষ্টা করে আসছে। তিনি জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানান।
পদ-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, গরু চুরির মামলা, পত্রিকা অফিসে হামলা, ইয়াবা ইস্যু, মন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচির্পূণ মন্তব্যসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ। এত অভিযোগ থাকার পরও অনেকটাই নীরব কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ছাত্রলীগের কেউ যেন কোনো ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড না করতে পারে সে বিষয়ে সব সময়ই সতর্ক থাকি। তারপরও যদি কেউ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের বিষয়ে আমাদের কাছে কিছু অভিযোগ আসছে। আমরা খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
হবিগঞ্জ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ:
গরু চুরির মামলা : ২০১০ সালে হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানায় গরু চুরির মামলা হয় সাধারণ সম্পাদক মাহির বিরুদ্ধে। মামলা নম্বর ৭, তারিখ ৯/৩/২০২০। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনেও মাহির নাম ছিল। গরু চুরির মামলার বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি বলেন, ‘গরু চুরির ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভুল করে আমার নাম দিয়েছিলেন, পরে আদালত আমাকে নির্দোষ ঘোষণা করেন।’
পত্রিকা অফিসে হামলা : এ ছাড়া গত ১৯ এপ্রিল হবিগঞ্জের স্থানীয় একটি পত্রিকার অফিসে মাহির নেতৃত্বে হামলা করা হয়। এরপর পত্রিকাটির সম্পাদকের বাসভবনেও হামলা করেন মাহি। এ ছাড়া মাহির বিরুদ্ধে ভূমি দখল ও চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
ইয়াবা ইস্যু : ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট ৩০০ পিস ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় মাহির অন্যতম সহযোগী বানিয়াচং উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদ হোসেন খান। এ ঘটনায় মাহমুদ হোসেন খানকে শৃঙ্গলাভঙ্গের অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এ ছাড়া মাহির সঙ্গে কারো মতপার্থক্য হলেই ইয়াবা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ারও হুমকি দিয়ে থাকেন তিনি। এমন একাধিক ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল।
মন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচির্পূণ মন্তব্য : বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন আহমদকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন মহিবুর রহমান মাহি। এজন্য তাঁকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে জেলা ছাত্রলীগের একাংশ।
Discussion about this post