গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা ১৩ লক্ষ এইচ এস সি পরীক্ষার্থীদের অটোপাশের ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রীর এই ঘোষণা অত্যন্ত যুগোপযোগী, যৌক্তিক এবং মানবিক; মাননীয় মন্ত্রীর এই ঘোষণার কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থী নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রক্ষা পেল! একই সাথে ৭ মাস ধরে পরীক্ষার চিন্তায় থাকা এবং সমস্ত প্রতিকূলতার সাথে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া এই ১৩ লক্ষ পরীক্ষার্থীরা, তাদের পরিবার, আত্মীয়- স্বজনরা কমপক্ষে ১ কোটি মানুষ মানসিকভাবে স্বস্তি পেল, কারণ সবাই করোনার কারণে সমকালীন দেশীয় প্রেক্ষাপটে মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিভিন্নভাবে ট্রমায় আক্রান্ত।
এর ভিতরে পরীক্ষার প্রস্তুতি কন্টিনিউ রাখা আসলেই অনেক বেশি টাফ বিষয়।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বারবার একটি কথা বলে আসছেন শুরু থেকেই যা অত্যন্ত প্রশংসার দাবীদার -‘ মানুষের জীবনের চেয়ে একটি পরীক্ষা কোনদিনই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেণা। পরীক্ষাই মেধা মূল্যায়নের একমাত্র পন্থা নয়।এই ১৩ লক্ষ পরীক্ষার্থীদের সাথে তাদের বাবা মা, আত্মীয়-স্বজন এরা পরীক্ষার সময় সাথে আসে। একটি পরীক্ষার সাথে প্রায় অর্ধ কোটি মানুষের জীবন জড়িত। ‘
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর এই যুগোপযোগী ঘোষণাকে আমি স্যালুট জানাই কারণ একটি মানুষের জীবনে সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হল সময় অপচয়। জীবনের ১ টি বছর তো দূরের কথা,১ দিন নষ্ট করার অধিকার রাষ্ট্রের নাই। এই ১৩ লক্ষ পরীক্ষার্থীদের যদি পরীক্ষার জন্য আরও ৬ মাস অপেক্ষা করতে হত তাহলে তা
কোন দিক দিয়ে রাষ্ট্রের জন্য ভালো ছিলো?
আমরা সময়ের মূল্য দিতে জানিনা এইটাই আমাদের সাথে উন্নত বিশ্বের প্রধান পার্থক্য!
সবকিছুকে যারা রাজনীতির রং দিতে চায় তারা দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু। ভালো কাজের প্রশংসা অবশ্যই করতে হবে,তা না হলে স্বাধীন বাংলাদেশের উদ্দেশ্য কোনদিন অর্জন হবে না।
পক্ষান্তরে, আমরা যদি একই রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের দিকে তাকাই তাহলে হঠাৎ মনে হবে ভিন্ন দেশে বসবাস করছি।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বৈধভাবে কাজের লাইসেন্স দেয়ার জন্য একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করার পর একটি এনরোলমেন্ট প্রসেস সম্পন্ন করতে ৫ বছর জীবন থেকে নষ্ট করে দেয় তথা আক্ষরিক অর্থে আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠা একজন শিক্ষার্থীর জীবন পঙ্গু করে দেয় তার পেশায় প্রবেশের আগেই।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে আইনে স্নাতক, স্নাতকোত্তর করে ৫ বছর বেকার বসিয়ে রাখা গভীর অর্থে আইনাঙ্গনে মেধাবীদের প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়া, অর্থাৎ একটি রাষ্ট্রকে পঙ্গু করে দেয়া!
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ২০১৭ সালের পরে ৩ বছর পর পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা অজস্র স্মারকলিপি, মানববন্ধন এবং অনশনের কারণে ২০২০ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি এম সি কিউ পরীক্ষা নেয় যেখানে ৫০০০০ পরীক্ষার্থীদের ভিতরে পাশ করে মাত্র ৮৫০০ যার পাশের হার মাত্র ১৭%। যা ছিলো বার কাউন্সিলের ইতিহাসে সর্বনিম্ন পাশের হার!
সাধারণত এম সি কিউ পরীক্ষার ২-৩ মাসের ভিতরে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে আজকে ৮ মাস শেষের পথে কিন্তু পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার ঘোষণার পরে(করোনা আরও ২ বছর থাকবে) শিক্ষানবীশরা ৭ জুলাই থেকে লিখিত পরীক্ষা মওকুফের দাবীতে আমরণ প্রতিকী অনশন করে আসছে অদ্যাবধি পর্যন্ত।
আন্দোলনের মুখে গত ২৬ জুলাই বার কাউন্সিল ২৬ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে মর্মে নোটিশ প্রদান করেণ। আন্দোলনরত শিক্ষানবীশরা বারবার বলে আসছিল এই পরীক্ষা হবেনা, আন্দোলন দমানোর জন্য এই পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এই কথা শুধু শিক্ষানবীশরাই বলেন নাই।
মহান জাতীয় সংসদে মাননীয় সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মেজবাহ শিক্ষানবীশদের কথা তুলে ধরেণ এবং সেখানে তিনি বলেন আন্দোলন দমানোর জন্য বার কাউন্সিল ৩ বছর পর করোনার ভিতর পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে,যেখানে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ!
অবশেষে সেই কথাই হল, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ২০ সেপ্টেম্বর এসে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করল।
রেজাল্ট কি পেল শিক্ষানবীশরা —অনেক অপূর্ণ ইচ্ছা নিয়েই করোনার কারণে মারা গেল, কারো বাবা মারা গেল,মা মারা গেল!
ঘুরে ফিরে দিনের পর দিন সময় বয়েই যাচ্ছে আর শিক্ষানবীশদের জীবন যৌবন সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বার কাউন্সিল থেকে শিক্ষানবীশদের যে এত অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল তা নিয়ে তাদের উদ্দেশ্য দাবীর পক্ষে কোন ঘোষণা আসল না আজ পর্যন্ত!
রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা এইচ এস সি পরীক্ষা যেখানে পরীক্ষার্থী ছিলো ১৩ লক্ষ এর ভিতরে গতবার ফেল করেছে এমন সংখ্যা ছিলো প্রায় ৪ লক্ষ্য তাদের যদি জে এস সি এবং এস এস সির রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে অটোপাশের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত দেয়া হয় তাহলে ২০১৭ এবং ২০২০ সালের এম সি কিউ পরীক্ষায় ৯০০০০ শিক্ষানবীশ আইনজীবীদের ভিতরে ১৩০০০ শিক্ষানবীশদের কেন লিখিত পরীক্ষা মওকুফ করে বেকারত্ব থেকে মুক্তি দেয়া হবেনা!?
আমার প্রশ্ন—
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, বার কাউন্সিলের বিজ্ঞ এনরোলমেন্ট কমিটি এবং দেশের সকল বিজ্ঞ আইনজীবীদের কাছে
শিক্ষানবীশরা কেন এত নির্যাতিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত?
শিক্ষানিবীশরা কি এই দেশের নাগরিক নয়?
Discussion about this post