এস এম মাসুম বিল্লাহ
মানবিক গ্রাউন্ড কথাটা সঠিক হয় না। ৪০১ ধারা নিজেই একটা মানবিক ধারা, যার বেনিফিট বেগম জিয়া অলরেডি নিচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, এটা স্কুলের টিউশন ফি কমানোর কোনো দরখাস্ত নয়।প্রকৃতপক্ষে, গ্রাউন্ডটা হবে, মানবাধিকার গ্রাউন্ড।
বিভিন্ন দেশের ইমিগ্রেশন আইন বা ভিসা আইনে দণ্ডিত ব্যক্তিকে সাধারণত ভিসা দেয়া হয় না। দিলেও সেটা প্রতিষ্ঠিত একটা ব্যতিক্রমের মধ্যে পড়তে হবে। অপরাধীর দণ্ড স্থগিতকরণ বা হ্রাসকরণ অপরাধীকে নির্দোষ বানিয়ে দেয় না। তার দণ্ডাদেশ সক্রিয় থাকে।
১. খালেদা জিয়ার বিদেশ যাবার আবেদন নামঞ্জুর হচ্ছে বলে সরকার স্পষ্ট করেছে। আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলাদাভাবে গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল একটা ‘দারুণ’ বাক্য ব্যবহার করেছেন! তিনি বলেছেন, ‘এই বঞ্চনা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ’। বঞ্চনার ইংরেজি ডেপ্রিভেশন, যা বহুমাত্রিক।
বলাবাহুল্য, নামঞ্জুরের ইংরেজি নট গ্র্যান্টেড। ডেপ্রিভেশন হতে হলে ‘এনটাইটেলমেন্ট’ থাকতে হয়, আর মঞ্জুর ব্যাপারটাতে প্রার্থীর প্রত্যাশা থাকে বেশি। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার আওতা, ব্যাখ্যা, প্রকৃতি এখন আলোচনায়। স্বীকার করে নিই যে, আমাদের ফৌজদারি সংহিতার (সিআরপিসি, ১৮৯৮) অধীনে সরকার যে অপরাধীর সাজা স্থগিত বা মওকুফ (আংশিক বা সম্পূর্ণ) করে দিতে পারে তা কিছুদিন আগেও আমি জানতাম না। শুধু সাংবিধানিক-বিধান রাষ্ট্রপতির ক্ষমার কথা জানতাম (অনুচ্ছেদ ৪৯)।
যাহোক, কিছু বিষয় খোলাসা হওয়া দরকার। আরও বলে নিই যে, বিষয়টি শুধু আইনি নয়, এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক এড়ানো যায় না। তবুও আইনি বাহাসটা আরও ঋদ্ধ হওয়া দরকার এখনকার এবং ভবিষ্যৎ প্রয়োজনে।
খন্দকার মাহবুব হোসেনের মতে, সরকার আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পরিষ্কার করি, সরকার কখনও আইন ব্যাখ্যা করে না, প্রয়োগ করে না, আর আইন ব্যাখ্যা করেন আদালত। তাই ধারা ৪০১-এর ব্যাপারে সরকারের, বিশেষ করে আইনমন্ত্রীর অবস্থানকে আইন ব্যাখ্যা না বলে, অ্যাপ্রোচ বা দৃষ্টিভঙ্গি বললে ভালো হয়। এবারে আসি আমার বিশ্লেষণে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একাত্তর জার্নাল অনুষ্ঠানে (১০ মে ২০২১) খালেদা জিয়ার আবেদনটি নামঞ্জুর করার পক্ষে একটা টেকনিক্যাল যুক্তির অবতারণা করেছেন। তা হলো খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে সিআরপিসির ৪০১ ধারার সুবিধা পেয়েছেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার তার ১৭ বছরের সাজা আপাতত স্থগিত করে তাকে শর্তসাপেক্ষে নিজ বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছেন। যেহেতু ৪০১ ধারা সরকার তার ক্ষেত্রে অনুশীলন করেছে, দ্বিতীয়বার আবার তা ভোগ করার সুযোগ নেই।
এর একটা মানে এই হয় যে, নতুন সুবিধার (বিদেশ যাওয়ার) আবেদন মানে হলো আগের শর্ত না মানা। আমি মনে করি সরকারের এই ‘রিজোনিং’ আক্ষরিক দিক দিয়ে ঠিক আছে। কিন্তু এতে কিছু ভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। এই ভ্রান্তি নিরসনে ধারা ৪০১-এর সঙ্গে যুক্ত আরও কিছু আইনি বিষয় আলোচনায় নিয়ে আসতে হবে।
২. ক্ষমা প্রদর্শন বা শাস্তি কমানো কিংবা মওকুফ করা সরকারের নির্বাহী বিভাগের একটা গুরুত্বপূর্ণ সার্বভৌম কাজের অনুশীলন। কোনো অনিশ্চিত বা অস্পষ্ট ব্যাপারে রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা অনুশীলন করা উচিত নয়। কেননা, বিভিন্ন দেশের ইমিগ্রেশন আইন বা ভিসা আইনে দণ্ডিত ব্যক্তিকে সাধারণত ভিসা দেয়া হয় না। দিলেও সেটা প্রতিষ্ঠিত একটা ব্যতিক্রমের মধ্যে পড়তে হবে। অপরাধীর দণ্ড স্থগিতকরণ বা হ্রাসকরণ অপরাধীকে নির্দোষ বানিয়ে দেয় না। তার দণ্ডাদেশ সক্রিয় থাকে। তাই ধরা যাক রাষ্ট্র যদি, কোনো দণ্ডিতের সাজা স্থগিত করে বা কমিয়ে তাকে বিদেশ যাবার অনুমতি দেয়, খুবই সম্ভব, যে দেশে তিনি যাবেন সে দেশের ইমিগ্রেশন আইন ১৭ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।
এই অনিশ্চয়তার কারণে, রাষ্ট্রীয় নির্বাহী-সার্বভৌম ক্ষমতা অন্য দেশের ভিসা আইনের মুখাপেক্ষী করা যায় না। প্রার্থী তার আবেদনে কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্য-দেশের নাম উল্লেখ না করলে এই অনিশ্চয়তা বাড়ে। অধিকন্তু, লন্ডন, ব্যাংকক এবং সিঙ্গাপুরসহ বেশ কিছু দেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এই ভবিষ্যবাদিতা তীব্রতর হয়। সিআরপিসি ঘরোয়া আইন হওয়ায় ধারা ৪০১-এর ক্ষমতা দেশের অভ্যন্তরে কার্যকরযোগ্য বলে ভাবতে হবে।
৩. এই জটিলতার সঙ্গে আর একটা অভ্যন্তরীণ আইনি দিক যুক্ত আছে এখানে। সেটা হলো- পাসপোর্ট আইন। পাসপোর্ট আদেশ ১৯৭৩-এর মুখবন্ধে বলা আছে যে, পাসপোর্ট ব্যবস্থা পরিচালিত হবে ‘জনস্বার্থে’। এই আইনের ৬ (২) ধারায় বলা আছে যে, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি কোনো অপরাধে কমপক্ষে দুই বছর দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি পাসপোর্ট পাবার যোগ্য নন (নবায়নের ক্ষেত্রেও একই)।
তাই যেখানে আইনের অজ্ঞামূলক নিষেধ দেখতে পাচ্ছি, সেখানে একেবারে ইউটার্ন নিয়ে কোনো দণ্ডিত ব্যক্তিকে পাসপোর্ট রি-ইস্যু করে সামগ্রিক আইনি কাঠামোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া যায় না, বিশেষত দণ্ডিত যদি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হন, এবং খুবই সম্ভাবনা থাকে যে, তিনি বিদেশে গিয়ে আরেকজন পলাতক দণ্ডিত ব্যক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত হবেন।
৪. ফৌজদারি আইনে শাস্তি স্থগিত বা হ্রাস বা ক্ষমা করার বিধান নিয়মিত অন্যান্য বিধানের সঙ্গে সমান্তরাল কোনো বিধান নয়। ৪০১ ধারা সিআরপিসির সমতলে বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপও নয়। অপরাধ আইনের কঠোর ইন্টারপ্রিটেশন হয় অভিযুক্তের পক্ষে। আর ৪০১ ধারার মতো বেনিফিট কজগুলো অভিযুক্তের পক্ষে নয়, দণ্ডিতের ক্ষেত্রে পরম ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে ব্যবহার করার একটা পথ।
অনেকটা সংবিধানের ১০৪-এ যেমন কমপ্লিট জাস্টিসের অজুহাতে আদালতের মূল রায়কে খাটো করা যায় না অনেকটা সেরকম। সেজন্যই, ৪০১ ধারার সিদ্ধান্ত নিতে, সংশ্লিষ্ট আদালতের সুচিন্তিত লিখিত মতামত নেবার বিধান আছে। এসব বিধান রাখা হয় এই জন্য যে, ফৌজদারি আইনকেও জীবনের আইন হতে হয়। এটার ব্যবহার হতে হয় পরম সার্বভৌমিক ও সামগ্রিক। এর জলের দরের মতন ব্যবহার করার আবেদন সিআরপিসির অন্যান্য বিধানের প্রয়োজনীয়তাকে ম্লান ও অর্থহীন করে দেয়।
সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক আইনে, ৪০১ ধারার অধীনে সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত বিচারিকভাবে যাচাইযোগ্য। তাই ৪০১ ধারাকে ‘সরকার ইচ্ছে করলে ব্যবহার করতে পারে’ মতবাদে ফেলার সুযোগ নেই। ৪০১ ধারার মানে হলো সরকার ‘পারে’ কিন্তু ‘ইচ্ছে করলেই’ পারে না।
এই ‘ইচ্ছে’ শুধু সিআরপিসি বলে নয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও অন্যান্য আইনসাপেক্ষ। এটা এমন নয় যে, জেনারেল জিয়া নামের একজন সামরিক শাসক ইচ্ছে করলেন আর বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক-রশিদ-ডালিম-হুদাদের পরিবারসহ প্লেনে উঠিয়ে ব্যংকক বা ত্রিপোলি পাঠিয়ে দিলেন, বা আবার নিয়ে আসলেন বা কোথাও রাষ্ট্রদূত বা এই জাতীয় কিছু একটা বানিয়ে দিলেন। অথবা সামরিক ফরমান দিয়ে সংবিধানে যুক্ত করে দিলেন যে, জাতির পিতার খুনিদের বিচার চাওয়া যাবে না।
খুনির ইনডেমনিটিকে যারা আইনের শাসন ও সংবিধানিকতা ভাবেন, কেবল তাদের পক্ষেই ৪০১ ধারার অমন মানে ভাবা সম্ভব, তারা ভাবেন যে খুন করে বা অপরাধ করে বিদেশে গেলে তা দেশের আইনে জায়েজ থাকা উচিত। টিপ্পনীতে বলে রাখি, জোসেফ কেসে জোসেফ ১৯ বছর জেল খেটে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়েছিল।
৫. বেগম খালেদা জিয়া যদি সত্যিই বিদেশে যেতে চান এবং তার মেডিক্যা রিপোর্ট সাপোর্ট করে (ড্যাব নেতাদের রিপোর্ট নয়) তাহলে একটাই আইনি পথ খোলা আছে, যদিও তার সফলতা, আবার বলছি, কিছু ব্যাপারের ওপর নির্ভর করছে। তাহলো সংবিধানের ৪৯ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতির কাছে দাক্ষিণ্য আবেদন করা। ৪০১ ধারার অধীনেও সরকারের (এখানে প্রধানমন্ত্রীর) কাছে দণ্ড মওকুফের আবেদন সম্ভব। কিন্তু আইনমন্ত্রীর রিজনিং যদি খেয়াল করি তাহলে সেটি আর তেমন খোলা নেই, যদিও আবেদন করলে তার ভাগ্যে কী হবে, তা বলা মুশকিল। আর একটা কারণেও ৪০১-এর অধীনে মওকুফ আবেদন কোনো কাজে আসবে না, তাহলো ৪০১-এর মওকুফ আবেদনকারীকে নির্দোষ করে না। এ বিষয়ে লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে।
সুতরাং বাকি থাকল সংবিধানের ৪৯ নং অনুচ্ছেদের অধীনে ক্ষমা আবেদন। আর এটার জন্যে তার আইনজীবীদের প্রথমেই আদালতের রায় মেনে নিতে হবে। মজার ব্যাপার হলো, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা যতটা না খালেদা জিয়ার আইনজীবী, তার চেয়ে বেশি বিএনপির আইনজীবী। তাই তারা কখনই গ্রহণ করেন না যে, খালেদার আইন অনুযায়ী বিচার হয়েছে। তারা তাকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেয়ে প্রমাণ করতে চান যে, তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বিনা কারণে জেলে আছেন।
মির্জা ফখরুল বলছেন, আমাদের বিচার বিভাগের ‘দ্বৈত নীতি’ বেগম জিয়ার জামিন না পাবার জন্যে দায়ী। অবশ্য ‘দ্বৈত নীতি’ বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন ভেঙে বলেননি। আমাদের বিচারিক সিস্টেমের কাঠামোগত ও কার্যগত দুর্বলতা তো কলোনিয়াল আমলের পিছুটান। অনেকে মনে করতে পারেন, বিএনপির নেতা বা আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার জেলে থাকা প্রসূত জনপ্রিয়তা খরচ করতে চেয়েছেন। স্মরণ করতে পারি, তার জামিন আবেদনই ছিল ১২০০ পৃষ্ঠার। কোনো বিচারক আর কাঁহাতক ১২০০ পৃষ্ঠার জামিন আবেদন গ্রহণ করতে যাবেন, আর সেখানে কি যুক্তিইবা থাকতে পারে?
৬. রাষ্ট্রপতির কাছে মার্সি পিটিশন দিতে হলে, আবেদনকারীকে রায় মেনে নিতে হবে। উচ্চ আদালতে আপিল প্রত্যাহার করতে হবে, অনেকের মতে প্রত্যাহার না করলেও চলে। রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা পেলেই কেবল, ফৌজদারি দণ্ড প্রশমন হয়, এবং দণ্ডিত তার হারানো সিভিল অধিকারগুলো ফেরত পান। তখন আর সেটা ইমিগ্রেশন আইন বা ভিসা আইন বা অতিরাষ্ট্রীক অন্য কোনো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় না। তখন আবেদনকারী বিদেশে যেতে পারেন।
ধারা ৪০১ রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার বিশেষাধিকার কেড়ে নেয়নি, নিতেও পারে না, কেননা এটা সংবিধানস্বীকৃত রাজার বিশেষ প্রাধিকার যা অনুশীলনের আওতা প্রায় প্রশ্নাতীত। তবে ৪০১ (৫এ) ধারা মতে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা শর্তসাপেক্ষেও হতে পারে। সেমতে, কোনো শর্ত যদি রাষ্ট্রপতি ক্ষমাপ্রার্থী ব্যক্তিকে দেন, তা দণ্ডদানকারী আদালতের আদেশের সমান ফোর্স পাবে। অবশ্য কোনো আবেদনের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা প্রদর্শন করবেন কি না তার নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। সেটা একটা মঙ্গল ইঙ্গিতের প্রশ্ন (gesture of goodness)।
৭. বিএনপির আইনজীবীদের একটু বোধ হয় হোমওয়ার্ক বাড়াতে হবে। বিন্দ্রা, ম্যাক্সওয়েল, মাহমুদুল ইসলাম একটু ভালোভাবে দেখতে হবে। যেমন ‘তিনবারের প্রধানমন্ত্রী’ যুক্তি জ্ঞাত আইনবিজ্ঞানের কোনো ফর্মুলায় পড়ে না। বরং ‘তিনবারের প্রধানমন্ত্রী’ হবার কারণেই তার ক্ষেত্রে ৪০১ ধারা সতর্কভাবে প্রয়োগ হওয়া উচিত। সুতরাং, ওই পয়েন্টে বার বার তারা হেরে যাবেন।
দ্বিতীয়ত, মানবিক গ্রাউন্ড কথাটা সঠিক হয় না। ৪০১ ধারা নিজেই একটা মানবিক ধারা, যার বেনিফিট বেগম জিয়া অলরেডি নিচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, এটা স্কুলের টিউশন ফি কমানোর কোনো দরখাস্ত নয়।
প্রকৃতপক্ষে, গ্রাউন্ডটা হবে, মানবাধিকার গ্রাউন্ড। বিএনপির আইনজীবীরা একটু পড়াশুনা করলেই, বেগম জিয়ার বর্তমান বয়স, আনফোরসিন করোনা সার্কামস্টেন্সেস, রাইট টু লাইফ, রাইট টু হেলথ, রাইট টু ডিউ প্রসেস, প্রিজাম্পশন অব ইনোসেন্স, বেনিফিট অব টু কনস্ট্রাকশন ইত্যাদি গ্রাউন্ডে ৪০১-এর পিটিশন করতে পারতেন। এ যদি তারা না করতে চান, মনোযোগ দিয়ে তার মামলাগুলো লড়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে আপিল বিভাগের রায় তাদের পক্ষে নিতে চেষ্টা করতে পারেন।
৮. আমার কাছে একটা জিনিস খুব অবাক লাগে। আমি বিএনপি-ঘরানার অনেক মানুষকে চিনি যারা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নামটি পর্যন্ত সম্মানের সঙ্গে উচ্চারণ করেন না। কুরুচিপূর্ণ-অশ্রাব্য সম্বোধন করেন। তারা বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মানেন না, বঙ্গবন্ধু শব্দটিও বিকৃত উচ্চারণে বলতে ও লিখতে দেখি। আবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে এরকম মানুষেরা বলেন যে, ‘ক্যান, শেখ মুজিব তো তাদের ক্ষমা করে দিয়ে গেছেন, আবার বিচার কেন?’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী তনয়ের বিরুদ্ধে একুশে অগাস্টে (২০০৪ ) বোমা হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার ওজনদার প্রমাণাদি রয়েছে। অথচ তাকে ক্ষমা করে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিয়ে মানবিকতা দেখাতে আহ্বান জানাচ্ছে বিএনপি! এ তো সেই আরব বেদুঈনের গল্পের মতো, যে তার ছেলের হত্যাকারীকে আশ্রয় দিয়েছিল, এবং উপঢৌকন দিয়ে বিদায় দেবার মুহূর্তে জানতে পেরছিল যে, আশ্রিত ব্যক্তি তার সন্তানের খুনি! বেদুঈন তখন বললেন যে, ‘যা তোকে ক্ষমা করে দিলাম!’ বিএনপি ঘরানার মানুষজন শেখ হাসিনার কাছে ওই বেদুঈন দৃষ্টান্ত থেকেও বেশি চাইছেন- নিজের খুন-উদ্যোক্তাকে ক্ষমা করে বিদেশ পাঠানো হোক!
খালেদা জিয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন এটা আমাদের প্রার্থনা। তার সুস্থ হয়ে ওঠাটা বর্তমানের বিতর্ক কমিয়ে আনবে। আপাতত এটুকুই বলা সিআরপিসির ৪০১ ধারার আওতা কোনো ফ্লাডগেট ওপেন করে না। এর ব্যবহার অতি সীমিত এবং সতর্কপ্রসূত। আর সাংবিধানিক সুযোগ ৪৯ নম্বর ধারার মার্সি পিটিশনে তারা যাবেন কি না, সেটা তার আইনজীবীরা ভালো বলতে পারবেন।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
Discussion about this post