দেশের নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ভারতে শুরু হতে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে ৪০ জন বিচারক ভারতে যাবেন। ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভূপালে এ প্রশিক্ষণ চলবে। আগামী অক্টোবর মাসে ১৫ দিনের জন্য প্রশিক্ষণ দেবে ভারতের ভূপালের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি। এ জন্য বাংলাদেশের বিচারকরা অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে ভারতে যাবেন।
হাইকোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) আজিজুল হক জাগো নিউজকে বলেন, প্রশিক্ষণের জন্য নিম্ন আদালতের সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজ পদমর্যাদার ৪০ জনকে মনোনীত করা হয়েছে। এসব বিচারকদের ভারতে পাঠানোর জন্য তাদের নাম আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রণালয় তাদের ভারতে পাঠাবে। ভারতের ভূপালের সুরাজ নগরে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি অবস্থিত। সেখানে দেশের ৪০ জন বিচারককে ১৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ চলবে অক্টোবরের ১০ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত।
আজিজুল হক বলেন, প্রথম পর্যায়ের প্রশিক্ষণ শেষ হলে আগামী নভেম্বর মাসে দ্বিতীয় ধাপের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। এরপর হবে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে। এভাবে পর্যায়ক্রমে দেশের নিম্ন আদালতের সব বিচারক অর্থাৎ দেড় হাজারের বেশি বিচারককে প্রশিক্ষণ দেবে ভারত।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীন হওয়ার পর ভারতে বাংলাদেশের কোনো বিচারক আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ নেননি। এখন থেকে শুধু বিচার বিভাগের কর্মকর্তা বা বিচারকরা ওই ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমিতে তালিম নেবেন। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা ভারতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিতেন।
জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম দিকে দেশের নিম্ন আদালতে দেড় হাজারের মতো বিচারক কর্মরত ছিলেন।
এর মধ্যে জেলা জজ ১৮১ জন, অতিরিক্ত জেলা জজ ২২০ জন, যুগ্ম-জেলা জজ ৩৩৩ জন, সিনিয়র সহকারী জজ ২৬০ ও সহকারী জজ ৪৫০ জন। এ দিকে এ বছরের জানুয়ারি মাসে ৮০ জনের মতো সহকারী জজ নিয়োগ দেয় সরকার।
ইতোমধ্যে কিছু বিচারকও অবসরে গেছেন। প্রশিক্ষণের সিলেবাসে থাকছে দেওয়ানি-ফৌজদারি আইন, মানবাধিকার আইন, মেডিকো-লিগ্যাল জুরিসপ্রুডেন্স, পরিবেশ আইন, চুক্তি আইন ও আদালতের ব্যবস্থাপনা। ভারতের দেওয়ানি-ফৌজদারি আইনের সঙ্গে দেশের প্রচলিত আইনের মিল রয়েছে। দেশের বিচার প্রক্রিয়ায় আইনজীবীরা প্রশ্ন-উত্তর পর্বে ভারতের অনেক রায়ের উল্লেখ করে থাকেন। এজন্য বিচারকরা প্রশিক্ষণ নিলে দেশীয় আইনি ব্যবস্থা উন্নত হবে।
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম জানান, দেশের বিচার বিভাগকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে চেষ্টা করছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। প্রধান বিচারপতি গত বছরের নভেম্বরে ভারত সফরে যান। দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পরামর্শ করেন প্রধান বিচারপতি। পরামর্শে প্রশিক্ষণের বিষয়টি পাকা হয়। পরে ভারতের কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের আইন মন্ত্রণালয়ের একটি সমঝোতা এবং ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমির সঙ্গে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আরেকটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
এ দিকে নিম্ন আদালতের ৪৫০ জন বিচারককে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা গ্রহণের জন্য গত ২৮ মার্চ আইন মন্ত্রণালয় ও অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। সরকারের তহবিল থেকে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের মধ্যে ৫৪০ জন বিচারককে পর্যায়ক্রমে অস্ট্রেলিয়ায় প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হবে।
গত মে মাসে নিম্ন আদালতের প্রেষণে থাকা ১৭ জন বিচারকের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন সুপ্রিম কোর্ট। পরে আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে জঠিলতা নিরসন হলে ৪০ জন বিচারককে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয়। তারা সেখানে তিন মাসের কোর্সে অংশ নিয়েছেন।
Discussion about this post