তথ্য অধিকার আইন
তথ্য অধিকার আইন এর বিধানাবলী সাপেক্ষে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকবে এবং কোন নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহাকে তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবেন৷
“আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান” উক্তিটির প্রবক্তা “এ ভি ডাইসি” ।তথ্য অধিকার আইন,২০০৯ এর ৪র্থ ধারায় প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার আছে । তথ্য অধিকার আইন সাধারণত জনগণের তথ্য পাওয়ার স্বাধীনতা সংক্রান্ত আইন নামে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের আইনকে আলোকিত আইন বলে।কিছু কিছু দেশে এ আইন তথ্য স্বাধীনতা আইন নামে পরিচিত।তথ্যসূত্রে জানা যায় যে, এ ধরনের আইন বিভিন্ন শিরোনামে পৃথিবীর ৭০টি দেশে প্রচলিত আছে। ১৭৬৬ সালে প্রথম সুইডেনে এ ধরনের আইন প্রবর্তিত হয় যা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আইন নামে পরিচিত।
ধারণাগত ও ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকে তথ্য অধিকার আইন মূলতঃ একটি আইনি প্রক্রিয়া মাত্র। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারি তথ্য জনগণকে প্রদান করতে হয়। অনেক দেশেই তথ্য প্রাপ্তির অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। তবে সুনির্দিষ্ট আইনের অভাবে জনগণ সহজে তথ্য লাভ করতে সক্ষম হয় না। কোনো নাগরিক বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যে সংস্থাকে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানায়,তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা সে প্রতিষ্ঠানের উপরই বর্তায় অন্য কারো উপর নয়। অধিকাংশ দেশের আইনের বিধানে এ বিষয়টি স্বীকৃত। যদি সংশ্লিষ্ট সংস্থা তথ্য প্রদানে অপরাগতা প্রকাশ করে তাহলে তার জন্য উপযুক্ত কারণ জানাতে হয়।
সার্কভুক্ত বেশিরভাগ রাষ্ট্রই তথ্য অধিকার আইন প্রবর্তন করেছেন। ২০০২ সালে পাকিস্তান তথ্য স্বাধীনতা অধ্যাদেশ বলবৎ করেন। ভারতে এ ধরনের আইন ২০০৫ সালে গৃহীত হয় যা তথ্য অধিকার আইন নামে পরিচিত এবং বাংলাদেশে ২০০৯ সালে জনগণের তথ্য পাওয়ার স্বাধীনতার জন্যে “তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯” বলবৎ করা হয়। তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯( ২০০৯ সনের ২০ নং আইন )
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯
তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত বিধান করিবার লক্ষ্যে প্রণীত আইন।যেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে চিন্তা, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতা নাগরিকগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত এবং তথ্য প্রাপ্তির অধিকার চিন্তা, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ; এবং জনগণ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক ও জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক; এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা হইলে সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারী ও বিদেশী অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারী সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাইবে, দুর্নীতি হ্রাস পাইবে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হইবে; এবং সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারী ও বিদেশী অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারী সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়; সে জন্যে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ বলবৎ করা হয়।
তথ্য অধিকার আইনের ফরম (আবেদন ও আপিল ফরম)
তথ্য প্রাপ্তির আবেদন ফরম (‘ক’)
তথ্য প্রাপ্তির আপিল ফরম (‘গ’)
প্রশিক্ষণ
তথ্য অধিকার আইনের প্রশিক্ষণ এখন সরকারি দপ্তরসমূহে নিয়োজিত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ এখন অনলাইনেই তথ্য অধিকার আইনের প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন| যে তথ্যটি ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে অনলাইন প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন।তথ্য অধিকার আইনের অনলাইন প্রশিক্ষণের উদ্বোধন এবং অফলাইন প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেছেন।তথ্য অধিকার আইন এবং তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ এই দুইয়ের সমন্ময়ে দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নেওয়ার সুযোগে এই প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা চালু করা হয়।আমরা জানি বিশ্বে বর্তমানে ৬.৭ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।
আমাদের দেশে প্রায় ১২ কোটি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। সেক্ষেত্রে সরকারের পেপারলেস অফিস ব্যবস্থাপনায় অনলাইন প্রশিক্ষণ একটি অনেক বড় মহৎ উদ্যোগ। প্রত্যেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যদি তথ্য অধিকার আইনকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তবে শুধু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাই নয় বরং সকল কর্মকর্তা এই আইন সম্পর্কে জানতে পারবেন । প্রাচীনকাল থেকে তথ্য গোপন করার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে তথ্য দেওয়ার মানসিকতা তৈরি হবে।
তথ্য অধিকার আইনের অধীন তথ্য অধিকার নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ উহার যাবতীয় তথ্যের ক্যাটালগ এবং ইনডেক্স প্রস্তুত করিয়া যথাযথভাবে সংরক্ষণ করিবেন৷ প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ যেই সকল তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষণের উপযুক্ত বলিয়া মনে করিবেন সেই সকল তথ্য, যুক্তিসংগত সময়সীমার মধ্যে, কম্পিউটারে সংরক্ষণ করিবে এবং তথ্য লাভের সুবিধার্থে সমগ্র দেশে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে উহার সংযোগ স্থাপন করিবেন৷ তথ্য কমিশন, প্রবিধান দ্বারা, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য অনুসরণীয় নির্দেশনা প্রদান করিবে এবং সকল কর্তৃপক্ষ উহা অনুসরণ করিবেন৷
তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর একটি বিশ্লেষণ
আমরা জানি ২৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস। অবাধ তথ্যপ্রবাহ এবং তথ্যে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য দিবসটি পালিত হয়।প্রতিপাদ্য বিষয় ‘Good laws and Practices for open Societies; Powering Sustainable Development with Access to Information.’ তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ নিঃসন্দেহে একটি উত্তম আইন। তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা। জনগণের ক্ষমতায়নের মাইলফলক। আইনটির অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, দেশের প্রচলিত অন্য সব আইনে কর্তৃপক্ষ জনগণের ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে; কিন্তু এ আইনে জনগণ কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষমতা আরোপ করে।
এটি প্রকৃতই জনগণের আইন। সর্বজনীন আইন। শ্রেণিগত ভেদাভেদ-নির্বিশেষে সর্বস্তরের নাগরিককে রাষ্ট্রের তথ্য পাওয়ার অধিকার আছে। আইনের ৪ ধারায় রয়েছে, ‘Subject to the provisions of this Act, every citizen shall have the right to information from the authority, and the authority shall, on demand from a citizen, be bound to provide him with the information.’
বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্র, যার অর্থই হলো জনগণের প্রাধান্য। আইনটির মূল ভিত্তি সংবিধানের ৭ ও ৩৯ ধারা। সংবিধান মতে, জনগণ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক।। এতে সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারি ও বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি পাবে, দুর্নীতি হ্রাস পাবে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। প্রকৃতপক্ষে তথ্যের অধিকার ছাড়া সংবিধানে বর্ণিত নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত চিন্তা, বিবেক, বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা অকল্পনীয়।
তথ্য অধিকার, তথ্যের আদান-প্রদান এর অবিচ্ছেদ্য অংশ। আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব এই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে।তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে সমাজের অবহেলিত, পিছিয়ে পড়া, সুবিধাবঞ্চিত, ঝুঁকিপূর্ণ, অরক্ষিত ও প্রান্তিক জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায় নিশ্চিত করে তাদের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। তাই তথ্য অধিকারকে বলা হয় Right of all Rights. এটি সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদ পূরণের পূর্বশর্ত। তথ্য অধিকার আইনটি সর্বজনীন, ধনী-দরিদ্র-নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে, জনগণকে সব কাজে অংশগ্রহণের অধিকার দেয়, উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসে। আইনটি জনগণের ক্ষমতায়নের প্রকৃত হাতিয়ার। এটি প্রকৃতই একটি উৎকৃষ্ট আইন, যা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ও সংবিধানের মূল চেতনারই প্রতিফলন।
অন্যদিকে সংবিধানের ২১(২) মতে, প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োজিত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য জনগণের সেবার চেষ্টা করা। বিশ্বব্যাপী কর্তৃপক্ষের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছে। নাগরিকের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, দ্রুত ও নির্ঝঞ্ঝাট সেবা নিশ্চিতকরণের বিষয়গুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। আমাদের দেশের প্রতিটি কর্তৃপক্ষকে APA (Annual Performance Agreement), NIS (National Integrity Strategy), Citizen Charter, Grievance Redress System (GRS), One stop service, Innovation, Digital Bangladesh-এর চর্চা করতে হচ্ছে। এসব কাজে সফলতার পূর্বশর্ত হলো অবাধ তথ্য প্রবাহ ও তথ্যে অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণ।
আইনটির ৩(ক) ও (খ) এবং ৬(২) ধারার মাধ্যমে তথ্য প্রদানে সব বাধা অপসারণ করা হয়েছে।তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে প্রথমত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, অতঃপর আপিল কর্মকর্তা ও সব শেষে তথ্য কমিশনে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি করা হয়েছে। তথ্য চেয়ে না পাওয়ার কারণে দায়ী ব্যক্তিকে জরিমানা, ক্ষতিপূরণের আদেশ করে বিভাগীয় মামলা রুজুর সুপারিশ করার বিধান রাখা হয়েছে। সুতরাং তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এটি একটি অসাধারণ পদক্ষেপ, যা আইনটিকে শক্তিশালী করেছে।
‘জাতীয় আইন ও আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী জনসাধারণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা ও মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষাদান।’ এ লক্ষ্যমাত্রার কর্মসম্পাদন পরিমাপকল্পে প্রস্তাবিত বৈশ্বিক সূচক (১৬.১০.২) হলো জনসাধারণের তথ্যে অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাংবিধানিক এবং/অথবা নিশ্চয়তামূলক নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়নকারী দেশের সংখ্যা। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বৈশ্বিক সূচকের নিরিখে বাংলাদেশের অবস্থান সমপর্যায়ের অনেক দেশের তুলনায় অগ্রগামী। আমাদের সংবিধান জনসাধারণের তথ্য অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষাদানে একটি বিশাল রক্ষাকবচ। সংবিধানের এই চেতনায় ঋদ্ধ আমাদের তথ্য অধিকার আইন। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের ১৬.১০ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এটি শুধু এসডিজি ১৬.১০-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক নয়, এসডিজির অন্য সব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রাসঙ্গিক, সহায়ক ও অপরিহার্য বললে ভুল হবে না। এ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার, গণমাধ্যম ও সুধীসমাজ প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হবে এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের সব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে মনিটর করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের মর্যাদা
বাংলাদেশে ‘তথ্য অধিকার আইন’ প্রণয়ন করে জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র (UDHR) এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি (ICPPR) অনুযায়ী জনসাধারণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করেছে এবং মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষা দান করেছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে এবং ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
তথ্যের অবাধপ্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণে সরকারি প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ প্রশংসনীয়। ২০০৯ সালে এ আইন প্রণয়নের সঙ্গে সঙ্গে এর বাস্তবায়নকল্পে স্বাধীন ও শক্তিশালী তথ্য কমিশন গঠিত হয়েছে এবং তথ্য অধিকার বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণে কৌশলপত্র প্রণয়নসহ অনেক পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে।
আইনের বাস্তবায়ন মনিটরিং ও পরিবীক্ষণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যন্ত চার স্তরে শক্তিশালী কমিটি গঠন করেছে। তথ্য অধিকার আইন প্রণয়নোত্তর সময়ে আমাদের গণমাধ্যম অবাধ, বিস্তৃত ও কর্মচঞ্চল হয়েছে। আমরা জানি, অবাধ তথ্য প্রবাহের জন্য প্রয়োজন ইন্টারনেটের ব্যাপক বিস্তৃতি ও সহজলভ্যতা। এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জনগণের দোরগোড়ায় তথ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে দেশের সব জেলা, উপজেলায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে সমন্বিত নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ মোবাইল নেটওয়ার্কে প্রভূত উন্নতি সাধন করে প্রবেশ করে 4G যুগে। এরই মধ্যে দেশ আরো দ্রুতগতির ইন্টারনেটে 5G সেবা কিভাবে পাওয়া যায় সেই প্রচেষ্টার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
জনশিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ইত্যাদি মানব উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য ইন্টারনেটে অভিগম্যতা ও মোবাইল ফোন অপরিহার্য। বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৫ কোটির বেশি, বিটিআরসির প্রকাশিত তথ্য মতে গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮৮ হাজার ৬৮৭ মিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় ৯ কোটির কাছাকাছি চলে আসছে।
সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নকল্পে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্প সারা দেশে প্রায় ৪৫০০+ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (One stop digital centre) গড়ে তুলেছে।
তথ্য অধিকার আইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো অবাধ তথ্য প্রবাহ ও তথ্য অধিকার নিশ্চিতকল্পে তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা এবং স্বতঃপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ ও প্রচার। আইনের আওতায় তথ্য অধিকার (তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা) প্রবিধানমালা ২০১২ ও তথ্য অধিকার (তথ্য প্রকাশ ও প্রচার) প্রবিধানমালা ২০১০ প্রণীত হয়েছে। এ ছাড়া তথ্য প্রাপ্তি, অভিযোগ দায়ের, নিষ্পত্তি ইত্যাদিসংক্রান্ত পৃথক বিধি, প্রবিধি ও সহায়িকা প্রণীত হয়েছে। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন ২০১১ প্রণয়ন এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) বিধিমালা ২০১৭ জারি করা হয়েছে। আইনের আওতায় মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ওয়েবপোর্টাল (২৫ হাজার ওয়েবসাইট সংবলিত) এখন বাংলাদেশের। সরকার সম্প্রতি তথ্য কমিশনের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একটি ১৩ তলা নিজস্ব ভবন তৈরির জন্য ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। অতি শিগগির এর কাজ শুরু হবে।
ব্লগারদের বিরুদ্ধে তথ্য আইন প্রয়োগ –বিস্তারিত পড়ুন
তথ্য কমিশন তথ্য অধিকার বাস্তবায়নে জনসচেতনতামূলক বিশেষ কার্যক্রম, তথ্য প্রদানকারীদের দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিত অনলাইন ও অফলাইন প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ছাড়া সুধীসমাজের অনেকেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এবার সারা দেশে কেন্দ্রে, জেলায়, উপজেলায় আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস ২০১৮ উদ্যাপনের জন্য নানা রকম কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তথ্য কমিশন জনগণের তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ। এসব উদ্যোগের ফলে তথ্য অধিকারে বিভিন্ন ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে, স্বচ্ছতা, গতিশীলতা বাড়ছে। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শত বছরের গোপনীয়তার সংস্কৃতির কঠিন বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসছে। এখানেই আইনটির উপযোগিতা ও উৎকর্ষ প্রতিভাত হচ্ছে।
এত কিছুর পরও প্রশ্ন থেকে যায়, এহেন একটি উত্তম আইনের প্রয়োগ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে কি? জনগণ কি প্রয়োজনীয় সব ক্ষেত্রে তা অনুশীলন করছে বা করতে পারছে? আইনটি চর্চায় কর্তৃপক্ষের কি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সংবেদনশীলতা, দক্ষতা বা প্রস্তুতি রয়েছে কি । আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে তথ্যের বিশাল চাহিদার তুলনায় তথ্য প্রাপ্তির আবেদন এখনো অনেক কম। নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য, অজ্ঞতা, অসচেতনতা, প্রশাসনিক পদ্ধতি সম্পর্কে অনভিজ্ঞতা এর মূল কারণ।
লেখকঃ ল ফর ন্যাশনস, ইমেইলঃ lawfornations.abm@gmail.com, ওয়েবসাইটঃ www.lawfornations.com, মোবাইল: 01842459590.
Discussion about this post