বাংলাদেশ বার কউন্সিল সরকারের একটি সংবিধিবদ্ধ স্বায়াত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, এটা আমাদের সকলের জানা। উক্ত প্রতিষ্ঠানটি আইনজীবিদের আইন পেশায় অন্তর্ভুক্তিকরণ পরীক্ষা, নিবন্ধন, তালিকাভুক্তিকরণ, আইনজীবীদের পেশাগত আচরণবিধি নিয়ন্ত্রণ, আইনজীবীদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা, স্বার্থরক্ষা, বার কাউন্সিলের তহবিল ব্যবস্থাপনা সহ যাবতীয় কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকেন। এই সংস্থাটির সর্বপ্রথম ও প্রধান কাজ হল একজন ল’ গ্রাজুয়েট কে এডভোকেট হিসাবে তালিকাভুক্তি করা, এটা বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাক্টিশনেরস অন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার,১৯৭২ এর ১০ নং অনুচ্ছেদের ১ বিধি অনুযায়ী।
কিভাবে একজন ল’গ্রাজুয়েট কে এডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত করবে তার নিয়মকানুনগুলো বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাক্টিশনারস অন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২এর ৬ নং অধ্যায়ের ৫৮,৫৯,৬০,৬০ক,৬০খ,৬০গ বিধিতে বর্ণিত আছে, উক্ত নিয়ম অনুযায়ী বার কাউন্সিল একজন ল’ গ্রাজুয়েট কে এডভোকেট বা উকিল হিসেবে তালিকাভুক্ত করে থাকেন। এখন প্রশ্ন হলো কেন শিক্ষানবিস আইনজীবীরা বা ল’গ্রাজুয়েটরা রাস্তায় আন্দোলন করছে? এখানে ল’গ্রাজুয়েট কারা? এখানে ল’গ্রাজুয়েট হলো ব্যারিস্টারগণ, বাংলাদেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের, ইউজিসি কর্তৃক অনুমোদিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স এবং মাস্টার্স পাশকৃতরা এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পাশকৃত এলবি ডিগ্রী ধারীরা রয়েছেন, এখানে কমবেশি ৬৫০০০ আইন শিক্ষায় শিক্ষিত লোকজন রয়েছেন, এসকল ল’গ্রাজুয়েট ধারীদের জীবনের গতিপথ ও পেশাগত অধিকার বাংলাদেশ সংবিধান নিশ্চিত করেছে সংবিধানের ৪০ নং অনুচ্ছেদ দ্বারা। ৪০ নং অনুচ্ছেদ বিশ্লেষণ যদি করি তাহলে দাঁড়ায় “আইন দ্বারা আরোপিত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে কোন পেশা গ্রহণের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে “এখানে আইনগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে যদি বলা হয় তাহলে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা তাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২ এর ২৭ অনুচ্ছেদ পালন করেছে, তদানুযায়ী কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এর আইনগত দায়িত্ব হল পরীক্ষা নেওয়া কিন্তু কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডার,১৯৭২ এর ১০ নং অনুচ্ছেদের ১নং বিধির কার্যটি করার জন্য যে দায়বদ্ধতা রয়েছে তা পালন করতে সম্পুর্ন ব্যর্থ হয়েছেন ২০১৫ সাল থেকে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সংবিধানের ১৫২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনজীবীদের কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষানবিশ আইনজীবীরাও বার কাউন্সিলের অবিচ্ছেদ্য অংশ, কারণ সকল শিক্ষানবিশ আইনজীবী হইতেই এডভোকেট বা উকিল হয়,
এখন যদি “কর্তৃপক্ষের “সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করি তাহলে দ্বারায়
The moral or legal right or ability to control.
Or
A group of people with the official responsibility for a particular area of activity.The official power to make decision for other people or to tell them what they must do. এখানে কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ অথরিটির সঙ্গার মধ্যে তিনটি উপাদান অন্যতম Morality, responsibility, decision.
একটি কর্তৃপক্ষের ডিসিশন সবসময় কনক্লুসিভ হবে কিন্তু বাংলাদেশ বার কাউন্সিল শিক্ষানবিশদের আন্দোলনের মুখে ২৬ শে সেপ্টেম্বর এর পরীক্ষার ডেট দিয়েছে তা ছিল কন্ট্রাডিক্টরি, এটা একটি দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ আধো করতে পরে কিনা তা বোধগম্য নয়।এখন আমরা যদি . Morality এর কথা বিশ্লেষণ করি তাহলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বনাম দারুল ইহসান মামলায় মহামান্য অ্যাপিলেড ডিভিশনের ৭ নাম্বার নির্দেশনায় এই মত প্রকাশ করেন যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সেমিস্টারে ৫০ জনের অতিরিক্ত ভর্তি করতে পারবেন না, যদি করেন তাহলে ১০লাখ টাকা জরিমানা এবং বেশি ছাত্র ভর্তির জন্য তদানুযায়ী বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১০ লক্ষ টাকা আদায় করছেন, কিন্তু উক্ত মামলার ১২ নাম্বার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি ক্যালেন্ডার এর মধ্যে একটি নিবন্ধন পরীক্ষার সমগ্র কার্যক্রম সম্পাদন করার নির্দেশনা থাকলেও শিক্ষানবিশ আইনজীবীদে জীবনের ও অধিকারের বেলায় উক্ত জাজমেন্টের নির্দেশনা পালন করতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ব্যর্থ হয়েছেন,তাহলে এখানে মোরালিটির প্রশ্ন মারত্মক ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
এবার আসি “Responsibility “বাংলাদেশ বার কাউন্সিল শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের অভিভাবক এই শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা ২০১৭ সালে পরীক্ষার জন্য আন্দোলন করেছে পরীক্ষা হলো। পরীক্ষার পর রিভিউর জন্য আন্দোলন করলো রভিউর দাবি মানা হলোনা, প্রশ্ন হল রিভিউর জন্য আন্দোলন করবে কেন? ওএমআর শিট এর ব্যবস্থা পরীক্ষা থাকবে না কেন?ওএমআর শিট পরীক্ষারই অংশ নয় কি?পরীক্ষা পদ্ধতি সচ্ছতা, জবাবদিহিতার আওতায় রাখতে অবশ্যই সকল পরীক্ষায় এসব এবং ব্যবস্থা রাখা আছে, বারকাউন্সিল এর উচিত এসব নিশ্চিত করা তাই নয় কি?ওএমআর এর ব্যবস্হা কেন বার কাউন্সিল করছেনা এটা সকলের কাছে পরীক্ষা পদ্ধতির সংক্রান্তে সন্ধেহের জন্ম দিচ্ছে,যাক আন্দোলনের পর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বলা হলো ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই পরীক্ষা হবে, হলো না আবার পরীক্ষার জন্য রাস্তায় নামল শিক্ষানবিশরা, সেই আন্দোলনের ফলাফল হিসেবে ২০২০ সালে পরীক্ষা হলো, পরীক্ষা হলো MCQ সর্বকালের শ্রেষ্ঠ কঠিন প্রশ্ন যা মোকাবেলা করে পাস করেছে মোট কমবেশি ৯০০০০০ শিক্ষানবিশদের মধ্যে কম বেশি ১৩০০০ জন তাদের মধ্যে ইতিমধ্যেই ৩০ জনের মতো করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। যাই হোক শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা ২০১৫ সাল থেকে অপেক্ষায় আছে আইনজীবী হবে পেশায় ঢুকবে কিন্তু পারেনি কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা না নেয়ার কারণে। শিক্ষানবিশ এর জীবন ও জীবিকা থমকে আছে দীর্ঘ পাঁচ বছর।
আজ শিক্ষানবিশ কেন লিখিত পরীক্ষার জন্য আন্দোলন করছে, কারণ জীবন থেকে অনেকেরই পাঁচ বছর চলে গেছে, যদি লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় তাহলে আরো দুই বছর চলে যাবে, সবচেয়ে বড় কথা হলো করোনা মহামারীতে ১৩০০০ শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের জীবন রক্ষার অধিকার রয়েছে যা সংবিধানের ৩২নং অনুচ্ছেদ দ্বারা স্বীকৃত, ৩২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী” মানুষের জীবন রক্ষার অধিকার থাকবে” করোনা মহামারীতে সারা বিশ্বের মানুষ যখন মৃত্যুর মুখে পতিত হবার ভয়ে ঘর ঘরমুখী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সহ সকলে যখন একমত কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে না, এমনকি পরীক্ষাও নেবে না, অটোপ্রমোশনের ব্যবস্থা করবেন, সেখানে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ অত্যান্ত সাহসী ভুমিকায় ১৩০০০শিক্ষানবিশ পরিবারের ১৩০০০সন্তানের জীবনের মূল্য ভ্রুক্ষেপ না করে শিক্ষানবিশ আইনজীবী দেরকে লিখিত পরীক্ষা মওকুফের আন্দোলনের চাপে পরিকল্পিতভাবে আগামী ২৬শে সেপ্টেম্বর পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কন্ডিশনাল ডেট ঘোষণা করেন, সাম্প্রতি কালের কণ্ঠে প্রকাশিত বাংলাদেশ বারকাউন্সিল স্পষ্ট ঘোষণা করেন যে নির্ধারিত তারিখে পরীক্ষা হবেই কিন্তু নোটিশে উল্লেখ থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল পাওয়া সাপেক্ষে, আবার পরবর্তীতে নোটিশ বিহীন মিডিয়ার মাধ্যমে, কালের কন্ঠ পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিতে রাজি না হওয়ার কারণে ঢাকার বিভিন্ন কলেজে স্কুলে পরীক্ষা নিবে কিন্তু কর্তৃপক্ষ আজ অফিসিয়াল ভাবে ঘোষণা করেনি বা অফিসিয়াল নোটিশ দিয়ে জানায়নি যে কোথায় পরীক্ষা হবে বা শর্তসাপেক্ষেই নোটিশ পরিবর্তন করে নিশ্চিত করতে পারেনি।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নিন্ম লিখিত আইন,
[সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ,নিয়ন্ত্রন ও নির্মূল)আইন, ২০১৮ এর ২৪ ধারা ”
১)যদি কোন ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণু বিস্তার ঘটানো বা বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করেন বা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অপর কোন ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যাক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসার সময় সংক্রমণের ঝুঁকি বিষয়টি তাহার নিকট গোপন করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
২) যদি কোন ব্যক্তি উপরোক্ত অপরাধ করে থাকেন তাহলে ৬ মাসের কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব ১লাক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে জরিমানা হতে পারে।]
কে উপেক্ষা করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল শিক্ষানবিশ আইনজীবী লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে, ৬৫ দিন আন্দোলনরত শিক্ষনবিশ আইনজীবীরা পরীক্ষার বিপক্ষে ছিল না কখনও, আজও নেই কিন্তু করোনাকালীন মহামারী ও বারকাউন্সিল এর ব্যর্থতায় ও আপারগতায় জীবন থেকে ইতিমধ্যে পাঁচটি বছর হারিয়ে যাওয়ায় শিক্ষানবিস আইনজীবীরা আজ দিশেহারা।
Discussion about this post