চেক ডিজঅনার সম্পর্কে বিস্তারিত
চেক ডিজঅনার এর মামলার বিষয়ে এই আলোচনা থেকে আমরা যা জানবো তার শিরোনাম নিচে দেওয়া হলোঃ-
- চেক কি?
- চেক এর সংজ্ঞা
- চেক ডিজঅনারের নতুন আইন
- কি কি কারণে চেক ডিজঅনার হতে পারে এবং চেক ডিজঅনার হলে কি করণীয়?
- হারানো চেক উদ্ধারের জন্য মামলা
- চেক মামলার রায়
- চেক ডিজঅনার মামলার আপিল
- চেক ডিজঅনার মামলায় অপরাধ
- ডিজঅনার হলেই সাজা হবে কি
চলুন দেখে নেই চেক ডিজঅনার সম্পর্কে বিস্তারিত খুঁটিনাটি বিষয় সমূহ। এর বিষয়গুলো জানা থাকলে আমরা প্রতারণার হাত থেকে খুব সহজেই প্রতিকার পেতে পারি এবং প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে পারি।
চেক কি?
চেক মূলত বিশেষ ভাবে মূদ্রিত এক ধরনের কাগজ যা ব্যাংক কৃর্তৃক অনুমদিত গ্রাহকের হিসাবের বিপরীতে প্রদান করা হয় তাকে চেক বলা হয়।
চেক এর সংজ্ঞা?
যে ব্যাংক হতে গ্রাহককে চেক প্রদান করা হয় সেই গ্রাহক কোন নিদিষ্ট ব্যক্তিকে বা তার নির্দেশে অপর কোন ব্যক্তিকে বা কোন বাহককে চাহিবা মাত্র প্রদান করতে বাধ্য বা পরিশোধ করার জন্য ব্যাংককে লিখিত আকারে যে আদেশ দেওয়া হয় তাকে চেক বলা হয়।
চেক ডিজঅনারের নতুন আইনঃ-
আমরা জানি পূর্বে শুধুমাত্র চেক ডিজঅনার হলেই চেকদাতাকে সাজা দেওয়া হতো কিন্তু এখন এ আইনের পরিবর্তন করা হয়েছে। চেকগ্রহীতার টাকা পাওয়ার কোনও কারণ আছে কিনা,সেটি দেখা হতো না। এখন চেকগ্রহীতাকে প্রমাণ করতে হবে চেকদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে লেনদেন সম্পর্কিত কোনও বৈধ চুক্তি ছিল এবং মনে রাখতে হবে চেক প্রাপ্তির বৈধ কোনও প্রমাণ না দিতে পারলে চেকদাতার আর কোন সাজা হবে না।

কি কি কারণে চেক ডিজঅনার হতে পারে এবং এটি হলে করণীয় কি?
মনে রাখত হবে ডিজঅনার হওয়া চেকের বাহক নিজে হলে সেটা কোন অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। কিন্তু যদি যে একাউন্টধারী অন্য কাউকে চেক প্রদান করেন এবং সেটি যদি ব্যাংকে প্রত্যাখ্যাত হয়, তবে সে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে বলে গণ্য হবে।
মনে রাখবেন আপনি যদি কাউকে চেক প্রদান করেন এবং সে চেকের তারিখ অনুযায়ী আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমান টাকা না থাকে এবং যাকে চেক প্রদান করেছেন সে যদি তারিখ অনুযায়ী ব্যাংক থেকে চেক ফেরত আসে তাহলে চেক ডিজঅনার হয়ে যাবে।আর চেক ডিজঅনার হলে আপনার নামে মামলা করতে পারবে। মনে রাখতে হবে এটি একটি অপরাধ।
মনে রাখবেন যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চেক দেয়া হয়েছে তিনিই মামলা করতে পারবেন এবং মামলা করার ক্ষেত্রে তারিখ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চেক ডিজঅনার হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশ পাঠাতে হয়। নোটিশ পাঠিয়ে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হয়। অতপর ৩০ দিনের মধ্যে মামলা করতে হয়।
আরো একটি গুরূত্বপূর্ণ বিষয় হলো চেক প্রদান করার সময় থেকে ছয় মাস পর্যন্ত চেকের মেয়াদ থাকে। তবে চেকের মেয়াদ শেষে একাউন্টধারী তারিখ কেটে দিয়ে পুনরায় নতুন করে তারিখ লিখে সাক্ষর করে মেয়াদ বাড়াতে পারবেন।লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার ত্রিশ দিনের মধ্যে একাউন্টধারীকে টাকা পরিশোধ করতে হয়।
যদি লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার পরেও টাকা পরিশোধ না করে তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে বা মামলার অধিকার তৈরী হয়। নোটিশ সরাসরি প্রাপক বরাবর বা তার বসবাসের ঠিকানা বা বাংলাদেশে তার ব্যবসায়িক ঠিকানা বরাবর প্রাপ্তি স্বীকারপত্রসহ রেজিস্টার্ড ডাকে নোটিশ প্রেরন করতে হয়।এছাড়া একটি জাতীয় বাংলা দৈনিক পত্র্রিকায বিজ্ঞপ্তি আকারে নোটিশ প্রকাশ করতে হয়।

হারানো চেক উদ্ধারের জন্য মামলাঃ-
চেক হারিয়ে গেলে সাথে সাথে নিকস্থ থানায় জিডি দায়ের করে ব্যাংকের মাধ্যেমে আপনার চেক টি বন্ধ করে দিতে পারেন এবং হারোনো চেক ফেরত পাবার জন্য/উদ্ধার করার জন্য মামলাও করা যায়।তবে চেক উদ্ধারের ক্ষেত্রে মামলা না করে জিডি করাই উত্তম।
প্রকৃত নিয়মনুযায়ী চেক বই হারিয়ে গেলে নিকস্থ থানায় সাধারণ ডায়রিভুক্ত বা জিডি করে উহার সত্বায়িত কপিসহ অ্যাকাউন্টধারী ব্যক্তি তাহার নিদিষ্ট শাখায় নতুন চেক বই ইস্যুর জন্য লিখিত অনুরোধ পত্র প্রেরণ করবেন/ দাখিল করবেন।
চেক মামলার রায়ঃ-
বিচারপ্রার্থীকে চেকের মামলায় আপীল করতে আর হাইকোর্টে আসতে হবে না।চেক ডিজঅনার মামলা শুধুমাত্র যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে শুনানি হবে এবং যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতেই আপিল করতে হবে।চেক ডিজঅনারের মামলা পূর্বে যুগ্ম দায়রা জজ এবং অতিরিক্ত অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত শুনানি করতো।
এই বিধানটি বৈষম্যমূলক যাহা বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ এবং ৩১ এর সাথে সাংঘর্ষিক।রায়ের নির্দেশনা মতে ১৩৮ ধারার চেকের মামলার বিচার কেবলমাত্র যুগ্ম দায়রা জজ আদালত করতে পারবে। দায়রা জজ অথবা অতিরিক্ত দায়রা জজ চেকের মামলার বিচার করতে পারবে না।
চেক ডিজঅনার মামলার আপিলঃ-
মামলার আপিলের ক্ষেত্রে ব্যাংক তহবিল অপর্যাপ্ততার কারণে ব্যাংক চেক প্রত্যাখ্যাত হবার অপরাধে চেকের মামলায় আদালত কারাদণ্ড প্রদান করলে তার বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে। কিন্তু তাকে প্রত্যাখ্যাত চেকের মূল্যের ৫০ শতাংশ অর্থ আদালতে জমা দিয়ে আপিল দায়ের করতে হবে।

চেক ডিজঅনার মামলায় অপরাধঃ-
বর্তমান আইন অনুযায়ী চেক ডিজঅনার মামলার অপরাধে আদালত এক বছর মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত বা চেকে বর্ণিত অর্থের তিনগুণ অর্থদণ্ড বা উভয় দন্ডে দণ্ডিত করতে পারেন এবং আদালত অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে বিবেচনা মোতাবেক কারাদণ্ডের শাস্তি বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড প্রদান করতে পারবেন।
ডিজঅনার হলেই সাজা হবে কি?
আমরা আগেই জেনেছি পূর্বে শুধুমাত্র চেক ডিজঅনার হলেই চেকদাতাকে সাজা দেওয়া হতো কিন্তু এই আইনের বর্তমানে পরিবর্তন আনা হয়েছে। চেকগ্রহীতার টাকা পাওয়ার কোনও কারণ আছে কিনা,সেটি দেখা হতো না। এখন চেকগ্রহীতাকে প্রমাণ করতে হবে চেকদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে লেনদেন সম্পর্কিত কোনও বৈধ চুক্তি ছিল এবং মনে রাখতে হবে চেক প্রাপ্তির বৈধ কোনও প্রমাণ না দিতে পারলে চেকদাতার আর কোন সাজা হবে না।
পরিশেষে বলা যায় যে চেক ডিজঅনার মামলার ক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত সকল বিষয়গুলো জানা থাকলে চেকের মামলায় প্রতারণার হাত থকে বাঁচা সম্ভব ।
চেক নিয়ে প্রতারিত হলে, কি কি উপায়ে টাকা উদ্ধার করবেন বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করূন
লেখকঃ ল ফর ন্যাশনস, ইমেইলঃ lawfornations.abm@gmail.com, মোবাইল: 01842459590.
আরো জানুন চেক প্রতারণার মামলায় ৩ বার চেক ডিজঅনার করানোর ভুল পরামর্শ প্রসংগে বিস্তারিত
Discussion about this post