ডেস্ক রিপোর্ট
বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হেফাজতে করিম রেজা (৩০) নামে শিক্ষানবিশ এক আইনজীবী যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার রাতে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেজা বরিশাল মহানগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ড সাগরদী এলাকার হামিদ খান সড়কের বাসিন্দা মো. ইউনুস মিয়ার ছেলে। তিনি সদ্য এলএলবি পাশ করে বরিশালের আদালতে আইন পেশায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্মম নির্যাতনের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রেজার মৃত্যু হয়েছে।
রেজার বাবা মো. ইউনুস মিয়া বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) বরিশাল ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন মাহি তার ছেলেকে (রেজা) মাদকসেবী বলে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাকে ডিবি কার্যলয়ে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালায়। পরে আর ছেলের খোঁজ পাইনি।মহানগর ডিবি পুলিশের কার্যালয় এবং কোতয়ালি মডেল থানায় যোগাযোগ করা হলে পুলিশের পক্ষ থেকে পরিবারকে কোনো প্রকার তথ্যও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নিহতের পরিবার জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে হাসপাতাল থেকে ফোন করে বলা হয় তার ছেলে প্রিজন সেলে ভর্তি আছেন। তার গোপনাঙ্গ থেকে অতিরিক্ত রক্ত ঝড়ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রেজাকে দুই ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। পরের দিন শনিবার রাতে রেজার মৃত্যু হয়। এসআই মহিউদ্দিনের নির্যাতনে রেজা মারা গেছে বলে অভিযোগ করেন পরিবারের সদস্যরা।
রেজার ফুপাতো ভাই মাহফুজ হোসেন জানান, এসআই মহিউদ্দিনের বাড়ি একই এলাকায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ক্ষমতা দেখিয়ে যাকে তাকে ধরে নিয়ে টাকা দাবি ও মারধর করেন। দাবিকৃত টাকা না দিলেই মারধর করে মাদকের অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেন।মাহফুজ হোসেন আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার রেজাকে ধরে তার কাছে সিরিঞ্জ ও প্যাথেডিন পেয়েছে দাবি করে থানায় নেওয়ার কথা বলে ডিবি কার্যলয়ে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।’ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে উল্লেখ করে ওসি স্থানীয়দের বিশৃঙ্খলা পরিহারের আহ্বান জানান।
অভিযুক্ত মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন বলেন, ‘রেজাকে ১৩৬ গ্রাম গাজা ও ৪ অ্যাম্পুল নেশাজাতীয় ইনজেকশনসহ আটক করা হয়। ওইদিন রাত পৌনে ১২টায় তাকে কোতয়ালী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। রাতেই মামলা দায়ের করা হয় এবং পরের দিন আদালত তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই যুবককে নির্যাতনের অভিযোগ মিথ্যা। ‘
এদিকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক জানান, আসামি রেজাকে গ্রহণ করার সময় ফরওয়ার্ডিং কাগজে হাজতির অসুস্থতার কথা উল্লেখ করা হয়। তা ছাড়া, তার শরীরে ক্ষত ছিল। পায়ের বাহু থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ হরেকৃষ্ণ সিকদার জানান, রক্তক্ষরণজনিত কারণে ১ জানুয়ারি ৯টা ৩৫ মিনিটে পুরুষ সার্জারি-১ ইউনিটে তাকে ভর্তি করে কারাগার কর্তৃপক্ষ।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা নিয়ম অনুযায়ী সুস্থভাবে আসামিকে আদালতে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে তাকে হাজতে পাঠানো হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে।
Discussion about this post