ডেস্ক রিপোর্ট
দীর্ঘ ৫৪ বছরের কর্মস্থল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে চিরবিদায় নিলেন ‘গরিবের আইনজীবী’ খ্যাত অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার। আর কোনো দিন তার পা পড়বে না সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে।
জানাজার মধ্য দিয়ে চিরদিনের জন্য সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন থেকে বিদায় নিলেন মানবদরদি এ আইনজীবী। জানাজায় অংশ নিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকে শেষ বিদায় জানান হাজারো আইনজীবী।
জানাজার আগে আব্দুল বাসেত মজুমদারের ছেলে আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, বাবা ৫৪ বছর এ অঙ্গনে কাজ করেছেন। প্রতিদিন সকালে উঠে বলতেন, রাজা উঠো, তাড়াতাড়ি কোর্টে যেতে হবে। আর কোনো দিন তিনি কোর্টে আসার কথা বলবেন না। প্রধান বিচারপতি বলেন, বাসেত মজুমদার ছিলেন গরিবের আইনজীবী। তার অভাব সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
জানাজায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আপিল বিভাগের সব বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম, বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ অসংখ্য আইনজীবী অংশ নেন।
দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের দিকে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজা শেষে আব্দুল বাসেত মজুমদারের মরদেহে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতিসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর মরদেহ কুমিল্লার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ৮টা ১৮ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মানা যান গরিবের আইনজীবী হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর আব্দুল বাসেত মজুমদারকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত সোমবার (২৫ অক্টোবর) তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। মেরুদণ্ডের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি।
আব্দুল বাসেত মজুমদারের জন্ম ১৯৩৮ সালের ১ জানুয়ারি কুমিল্লার লাকসামে। ১৯৬৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এরপর ১৯৬৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আব্দুল বাসেত মজুমদার বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আব্দুল বাসেত মজুমদার দুস্থ আইনজীবীদের জন্য নিজের নামে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছেন। দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতিতে এ ফান্ড থেকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘ পেশাজীবনে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে আইনি সহায়তা দিয়েছেন তিনি। এ কারণে আইনাঙ্গনে তিনি ‘গরিবের আইনজীবী’ হিসেবে পরিচিত।
Discussion about this post