ডেস্ক রিপোর্ট
কিছু শৌচাগার দখলে রাখার অভিযোগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। মামলা করেছে দোকান মালিক সমিতিও।দক্ষিণ সিটির মালিকানায় শৌচাগার আছে ১০১টি।দখল বা অবৈধভাবে চলছে ৫টি। পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে ৫টি।জায়গা দখল করে দোকান তৈরি করা হয়েছে ৩টি শৌচাগারের।সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণ শেষ হলেও চালু হয়নি ৭টি।
এই শৌচাগারটি একজন কাউন্সিলরের দখলে। এখান থেকে যা আয় হয়, তা তিনি নিয়ে নেন। পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৬টি গণশৌচাগার বা পাবলিক টয়লেট নিয়ে উচ্চ ও নিম্ন আদালতে মামলা চলছে।
যাঁরা এসব শৌচাগার নিয়ন্ত্রণ করছেন, তাঁরা মামলা ঠুকে দিয়ে সিটি করপোরেশনকে রাজস্ব দিচ্ছেন না। করপোরেশনও মামলার কারণে শৌচাগারগুলো নতুন করে ইজারা দিতে পারছে না।
কিছু শৌচাগার দখলে রাখার অভিযোগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। কিছু শৌচাগার দখলে রাখতে মামলা করেছে সংশ্লিষ্ট বিপণিবিতানের দোকান মালিক সমিতি। কিছু শৌচাগার ভেঙে সেখানে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে মানুষ শৌচাগার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
যে কটি শৌচাগার ভেঙে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে তার একটি ছিল পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার এলাকায় ঢাকা ওয়াসার পানির পাম্পসংলগ্ন। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, শৌচাগারের জায়গায় দোতলা ভবন তৈরি করা হয়েছে। নিচতলায় আটটি জুতার দোকান। দোতলায় ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যালয়।
সিটি করপোরেশনের নথিতে এই শৌচাগারের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নেই। ইজারাদারের ঘরে লেখা ‘জনৈক ব্যক্তি’। পরিচালনা পদ্ধতি হিসেবে লেখা আছে, ‘শৌচাগারের জায়গা অবৈধ দখল’। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মীর মাহবুব (রনি) গণমাধ্যমকে বলেন, আসাদ নামের এক ব্যক্তি মোহাম্মদ সাঈদ খোকন মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে দক্ষিণ সিটির প্রশাসকের কাছ থেকে জায়গাটি ইজারা নিয়েছিলেন। পরে সেখানে ভবন করে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। মেয়র সাঈদ খোকনের সময় উচ্ছেদ অভিযানের উদ্যোগ নেওয়া হলে এর বিরুদ্ধে আদালতে রিট হয়।
শৌচাগারের জায়গায় তৈরি করা ভবনে যুবলীগের কার্যালয় থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি তাঁরা নিজেরা তৈরি করে নিয়েছেন।সিদ্দিকবাজারের ওই এলাকায় দেখা গেছে, মানুষ রাস্তার পাশে ও দেয়ালের কোনায় মূত্র ত্যাগ করেন। এতে নোংরা পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
দক্ষিণ সিটির মালিকানায় শৌচাগার আছে মোট ১০১টি। করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ গত নভেম্বরে শৌচাগারগুলোর অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ সিটিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস শৌচাগারগুলো সংস্কার করে তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় ইজারা দিয়ে আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর জন্যই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
দক্ষিণ সিটির ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৬টি শৌচাগার নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট ও নিম্ন আদালতে মামলা করা হয়েছে, দখল বা অবৈধভাবে চলছে ৫টি, জায়গা দখল করে দোকান তৈরি করা হয়েছে ৩টি শৌচাগারের, পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে ৫টি, সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণ শেষ হলেও চালু হয়নি ৭টি এবং নির্মাণ ও সংস্কার চলছে ১৫টিতে।
এর বাইরে বিভিন্ন ব্যক্তি বা সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে চলছে ২৩টি, সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে ৯টি, ব্যক্তি বা বিপণিবিতানের দোকান মালিক সমিতির কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে ৬টি এবং অন্যান্যভাবে চলছে ২টি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফরিদ আহাম্মদ গণমাধ্যমকে বলেন, মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে তাঁরা শৌচাগার ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিচ্ছেন। যেসব শৌচাগার নিয়ে মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে, তা পর্যায়ক্রমে ইজারা দেওয়া হচ্ছে। যেসব শৌচাগার বেদখল, তা দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মামলা ঠুকেছেন যাঁরা
যেসব শৌচাগারের ইজারা দেওয়া ঠেকাতে মামলা করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা নিউমার্কেটের পাঁচটি, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের উত্তর ডি ব্লকের তিনটি, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট দক্ষিণ ব্লকের তিনটি, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের তিনটি, বনলতা মার্কেটের (নিউমার্কেট) তিনটি, বশীর উদ্দিন পার্কের গুলিস্তান পাবলিক টয়লেট, নবাবগঞ্জ পাবলিক টয়লেট, আজিমপুর মোড় পাবলিক টয়লেট, হাজারীবাগ বাজারসংলগ্ন পাবলিক টয়লেট, লালবাগের শহীদনগর পাবলিক টয়লেট এবং পুরান ঢাকার আগা সাদেক রোড পাবলিক টয়লেট ও মালিটোলা পাবলিক টয়লেট।
নিউমার্কেটের পাঁচটি গণশৌচাগারের ইজারা কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ২০০০ সালে নিম্ন আদালতে মামলা করেন বিপণিবিতানটির দোকান মালিক সমিতির নেতারা। সিটি করপোরেশনের নথি বলছে, ১০ বছর পর মামলাটির রায় হয়, যা সিটি করপোরেশনের অনুকূলে যায়। পরে সমিতি ২০০৩ সালে আরেকটি মামলা করে, যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
নিউমার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, মালিক সমিতির তত্ত্বাবধানে দিলে শৌচাগারগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকভাবে হবে। দায়িত্বটি তাদের দিতে আবেদন করা হয়েছে।
আরও দখল
ঢাকার শাহবাগ শিশুপার্কসংলগ্ন গণশৌচাগারটি সিটি করপোরেশনের নথিতে পরিত্যক্ত দেখানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরিত্যক্ত হলেও এটি অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, এর একটি অংশে গুদাম তৈরি করা হয়েছে। আরেকটি অংশে শৌচাগার চালানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, শৌচাগারটি দক্ষিণ সিটির ২১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ও ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক নেতা লিটন শেখ দখলে রেখেছেন। অবশ্য তৌহিদুল গণমাধ্যমকে কাছে দাবি করেন, অভিযোগটি সত্য নয়।
ঢাকার আরমানিটোলা মাঠসংলগ্ন একটি গণশৌচাগার নিয়ে দক্ষিণ সিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এটি ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দখলে। কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, এটি আগে বহিরাগতদের দখলে ছিল। তিনি দখলমুক্ত করে করপোরেশনকে রাজস্ব দিচ্ছেন।
নারীদের দুর্ভোগ বেশি
বেসরকারি সংগঠন ভূমিজ-এর এক জরিপ বলছে, নগরে শৌচাগারের সুবিধা একেবারেই কম। তাই ৯০ শতাংশ নারী ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পানি পান করেন না। নিউমার্কেট এলাকায় বসবাসরত কর্মজীবী নারী রোকসানা মিতা গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকায় গণশৌচাগার এমনিতেই কম, তার মধ্যে কিছুর পরিস্থিতি ভালো। অনেকগুলোতে টাকা বেশি নেওয়া হয়, কিন্তু অপরিচ্ছন্ন থাকে। সিটি করপোরেশনের উচিত সংখ্যা বাড়িয়ে শৌচাগারগুলো সেবার দৃষ্টিতে পরিচালনা করা।
ছবি সংগ্রহীত
Discussion about this post