ডেস্ক রিপোর্ট
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, খ্যাতিমান সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক বিচারপতি তাফাজ্জাল হোসেন (টিএইচ) খানের মৃত্যুতে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ বসবে না।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগ বেঞ্চে বসলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী ও আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল টিএইচ খানের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, সিনিয়র আইনজীবী টিএইচ খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগ (আপিল ও হাইকোর্ট) পরিচালনা করা হবে না।
এর আগে রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল ৫ টায় বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা ও নিউমোনিয়া নিয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান টিএইচ খান। দেশের প্রবীণ এই আইনজীবীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে আজ বেলা সাড়ে ১১টায় টিএইচ খানের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার ঔটি গ্রামে দাফন করা হবে তাকে।
টিএইচ খান ১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার ঔটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহের ফুলপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন তিনি। বেশ কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ কলেজে অধ্যাপনাও করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ এই আইনজীবী।
১৯৫১ সালের ১৪ মার্চ তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হন। ১৯৬৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ১৯৭৩ সালের জুলাই মাস থেকে আবার আইন পেশায় ফিরে আসেন।
১৯৭৪ সালে তিনি প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর আইন, শিক্ষা, ধর্ম, ভূমি ও রাজস্ব এবং ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদের নেতৃত্বে নতুন সামরিক আইন জারি করা হলে তিনি আবার আইন পেশায় ফিরে যান। ১৯৮৬ সালে এরশাদের নির্বাচনের বিরোধিতা করায় গ্রেপ্তার হন।
১৯৯২ সালে টিএইচ খান সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কমিশনের মেম্বার এবং একই বছর জাতিসংঘের বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৯৫ সালে টিএইচ খান সাউথ এশিয়া জোন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে বিচারকার্য পরিচালনা করে দেশে ফিরে এসে আবার আইন পেশা শুরু করেন।
Discussion about this post