কলসভর্তি স্বর্ণের মুদ্রার লোভ দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র। নগরীর বাকলিয়া থানা পুলিশ ওই চক্রের প্রতারণার রহস্য উদঘাটন করেছে।
পুলিশ প্রতারক চক্রের সদস্য সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে। এছাড়া আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারে বাকলিয়া থানা পুলিশ নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।
বাকলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, নগরীর কালা মিয়া বাজার এলাকায় একটি বাসা থেকে সোর্সের দেয়া তথ্য মোতাবেক তিনটি পেতলের কলস উদ্ধার করেছি। আমরা চারজনকে আপাতত আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখাচ্ছি। তবে মূল প্রতারককে এখনও আটক করতে পারিনি।
আটক চারজন হল, ইউনূস আহমেদ চৌধুরী (৬৫) ও তার ছেলে শহীদুল ইসলাম চৌধুরী (৩৭) এবং পুলিশের সোর্স পারভেজ শেখ (৩৭) ও তার সহযোগী মো.শফি (২৬)।
ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, প্রতারক চক্রের মূল হোতা হিসেবে ইউনূস বৈদ্য এবং সহযোগী হিসেবে আবু তালেবসহ কয়েকজনের নাম পেয়েছি। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।
ইউনূস আহমদ চৌধুরী চন্দনাইশ উপজেলার বরকল ইউনয়িনের কানাইমাদারি গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে। ইউনূস গ্রামে থাকেন। তার দুই ছেলে নগরীর কালা মিয়া বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
ইউনূসের ছেলে শহীদুল জানান, গত রমজানে আবু তালেব নামে পূর্বপরিচিত এক লোক তার পিতাকে জানায়, তাদের (ইউনূস) বড়ির পেছনে মাটির নিচে তিনটি স্বর্ণের মুদ্রাভর্তি কলসি আছে। সেগুলো তুললে কোটি কোটি টাকার স্বর্ণের মুদ্রা পাওয়া যাবে। আবু তালেবের কথায় ইউনূস লোভে পড়ে যান। আবু তালেব ইউনূসকে জানায়, মানিকছড়ির ইউনূস বৈদ্য নামে এক তান্ত্রিক স্বপ্নে স্বর্ণের মুদ্রাভর্তি কলসগুলো দেখেছেন।
আবু তালেব ইউনূস বৈদ্যের সঙ্গে তার (ইউনূস আহমেদ চৌধুরী) পরিচয় করিয়ে দেন। রমজানের মধ্যে এক রাতে ইউনূস বৈদ্য চন্দনাইশের বরকলে আসে। তিনজন মিলে মাটি খুঁড়ে লাল কাপড়ে মোড়ানো তিনটি পেতলের কলস উদ্ধার করেন। কলসগুলো ঢাকনা দেয়া ছিল।
শহীদুল জানান, ঢাকনাগুলো খুললে বিপদ হবে বলে ইউনূস বৈদ্য জানান। কলসগুলো শহরে নিয়ে নিরাপদ কোন জায়গায় রাখতে বলেন। এছাড়া সেগুলো গলিয়ে স্বর্ণের বল তৈরি করে দেয়ার জন্য চার লক্ষ টাকা ইউনূসের কাছে দাবি করা হয়। সরল বিশ্বাসে ইউনূস টাকাগুলো দিয়ে দেয়।
শহীদুল বলেন, ‘স্বর্ণের কলস এবং টাকা দেবার কথা আব্বা আমাদের কিছুই জানাননি। ঈদুল ফিতরের দু’য়েকদিন আগে আব্বা তিনটি কলস এনে আমাদের বাসায় রাখেন। কথা ছিল, ইউনূস বৈদ্য এসে সেগুলো নিয়ে যাবে এবং গলিয়ে স্বর্ণের বল বানিয়ে আব্বাকে ফেরত দেবেন। কিন্তু তারা আর আসেননি। ’
বাকলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে বলেন, ইউনূস এবং তার ছেলের কথা আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। তারাও চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে আমরা ধারণা করছি। সেজন্য আপাতত তাদের ৫৪ ধারায় আটক দেখানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শহীদুলের বাসায় স্বর্ণের মুদ্রাভর্তি তিনটি কলস থাকার কথা বাকলিয়া থানা পুলিশকে জানায় পারভেজ শেখ (৩৭) নামে একজন যে রাঙামাটিতে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে। বাকলিয়া থানা পুলিশ প্রথমে পারভেজকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। তার কাছে পাঁচটি ভিজিটিং কার্ড পাওয়া গেছে।
এগুলোতে সংবাদ মোহনা নামে একটি অনলাইন পত্রিকার রিপোর্টার, জাতীয় পার্টির রাঙামাটি পৌর কমিটির সাধারণ সম্পাদক, রাঙামাটির পাহাড়িকা সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ কনজ্যুমার রাইটস সোসাইটি’র (বিসিআরএস) চট্টগ্রাম বিভাগের পরিদর্শক, আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থার চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক এবং আইন সহায়তা কেন্দ্রের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক হিসেবে তার পরিচয় লেখা আছে।
বাকলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, এত পদ-পদবির বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। সে বলে-পুলিশ খুব ডিস্টার্ব করে। এজন্য কোথাও সাংবাদিক, কোথাও মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দিই। আমাদের ধারণা, সে এই প্রতারক চক্রের বিষয়ে জানে। এজন্য তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের সদস্যদের সন্ধান পাবার চেষ্টা করছি।
পারভেজ শেখের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ রোববার (২৩ আগস্ট) সকালে কালা মিয়া বাজারে শহীদুলের বাসায় গিয়ে পেতলের তিনটি কলস এবং শহীদুলকে থানায় নেয়। পরে ইউনূস আহমেদ চৌধুরীকেও খবর দিয়ে থানায় নেয়া হয়। তবে পুলিশ কলসগুলো খুলে সেখানে কোন স্বর্ণমুদ্রা পায়নি।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন ওসি মোহাম্মদ মহসিন।
Discussion about this post