মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ অপরাধ আইন-২০১৬ এর খসড়া প্রায় চূড়ান্ত। বর্তমানে তা বিভিন্ন পর্যায়ের ৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদের মতামত পাওয়ার পর চলতি মাসেই খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানান, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক।
তিনি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠিত সত্য ঘটনা বিকৃত করলেই যে কেউ এই আইনের আওতায় চলে আসবে। বিচারে সর্বোচ্চ সাজা ৫ বছর, জরিমানা ১ কোটি টাকা। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে দণ্ড হবে দ্বিগুণ।
৩০ লাখ শহীদ ও ৬ লাখ মা বোনের সর্বোচ্চ ত্যাগ এবং সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠিত এই সত্য বিভিন্ন সময়ে অস্বীকার বা বিকৃতি করার চেষ্টা হয়েছে। সম্প্রতি শীর্ষ রাজনৈতিক পর্যায় থেকেও একইরকম কথা আসায় মুক্তিযুদ্ধের বিকৃতি প্রতিরোধে আইনের একটি খসড়া প্রণয়নের জন্য আইন কমিশনকে দায়িত্ব দেয় আইন মন্ত্রণালয়।
কমিশন জানিয়েছে ইউরোপসহ প্রায় ২৪টি দেশে এ ধরনের আইন আছে। সেই বিবেচনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন তারা।
আইন কমিশনের চেয়্যারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হক বলেন, ‘সমাজের বিভিন্ন স্তরের ৭ জন মানুষের কাছে আমি এটা পৌঁছে দিয়েছি। তাদের কাছ থেকে ফিডব্যাক পেলেই আমরা এটা চূড়ান্ত করবো। চূড়ান্ত করে এই মাসের মধ্যেই তা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিবো।’
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ অপরাধ আইন ২০১৬ খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ অপরাধ হিসেবে বলা হয়েছে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট থেকে ১৯৭১ সালের ২৮ ফেব্রয়ারি, একই বছরের ১ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা অস্বীকার, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার, প্রকাশনার অপব্যাখ্যা, দখলদার পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসরদের পক্ষে যুক্তি দেওয়া এবং মানবতাবিরোধী অপরাধকে সমর্থন ও বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
তিনি আরো বলেন, ইস্ট্যাব্লিসড ফ্যাক্ট, মুক্তিযুদ্ধ এবং এর আনুষঙ্গিক যেসব ঘটনা যেগুলো আমাদের চোখের সামনেই ঘটেছে সেগুলো যদি কোনো মেলাফাইড ইনটেনশনে কেউ যদি বিকৃত করতে চান তাহলে সেসব এই আইনের আওতায় চলে আসবে। দণ্ডনীয় অপরাধ এটি।
অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানা, দায়রা বা মহানগর দায়রা আদালতের কাছে অভিযোগ করা হলে এবং বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে কি দণ্ড দেওয়া হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে খসড়া আইনে।
সাবেক এই বিচারপতি বলেন, সর্বোচ্চ সাজা হবে ৫ বছর কারাদণ্ড। সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকার অর্থদণ্ড। একই অপরাধ দুইবার করলে দণ্ড দিগুণ হবে।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন আইন করার উদ্দেশ্য হলো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিকৃত কিছু বলার আগে মানুষ যেন ভাবে তার কথার জন্য দণ্ড হতে পারে। তবে এই আইন নিয়ে গবেষণা করা যাবে বলে জানান তিনি।
যেসব কাজ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে: (ক) ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট থেকে ১৯৭১ সালের ২৮ ফেব্রয়ারি, ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা অস্বীকার। (খ) মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাকে হেয় করতে দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক প্রচার। (গ) সরকারের প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রকাশনার অপব্যাখ্যা। (ঘ) মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা, হত্যা, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণ এবং লুটতরাজ সংক্রান্ত তথ্যকে খাটো করা। (ঙ) পাকিস্তানী দখলদার সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটির অপরাধের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন। (চ) মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধ অপরাধকে সমর্থন বা উক্ত অপরাধের বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। (ছ) এইসব অপরাধমূলক কাজের সমর্থনকারীও ওই অভিযোগে অভিযুক্ত হবে।
Discussion about this post