হাইকোর্টের বিচারক বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৩১(ক) ধারা যদি অনুসরন করা হয় তাহলে এই আইনে দায়েরকৃত অর্ধেক মামলা এক বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি সম্ভব।
তিনি বলেন, আইনটি এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে যেখানে ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হলে বিচারক, পিপি ও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর যথাযথ কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ফলে আইনানুযায়ী বিচারক, পিপি ও তদন্তকারী কর্মকর্তা কারোরই দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। এ সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিকালে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম একথা বলেন।
স্ত্রীকে হত্যার দায়ে মিলাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি মামলা করা হয়। চলতি বছরের ২১ মার্চ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। অভিযোগ গঠনের পর সাত মাসেও কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু আইনানুযায়ী মামলাটি ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি না হওয়ায় আসামির জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবী কুমার দেবলু দে। গত পহেলা নভেম্বর ওই জামিন আবেদনের শুনানিকালে আইনের ৩১(ক) ধারায় ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়। এরপরই হাইকোর্ট দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া বিধান প্রতিপালন করা হয়েছে কিনা তা প্রতিবেদন আকারে আদালতকে অবহিত করতে সরকারকে নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশের পর আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে আদালত বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশের পরই সুপ্রিম কোর্ট বিচারকদের প্রতি সার্কুলার জারি করেছে। আইন মন্ত্রণালয় পিপিদেরকে চিঠি দিয়েছে বিধানটি প্রতিপালন করার জন্য। এ পর্যায়ে মিলাদ হোসেনের আইনজীবী বলেন, গত ১৬ বছরেও আইনের ধারাটি বাস্তবায়ন হয়নি। যদি হত তাহলে মামলা অনিষ্পন্ন থাকার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। আদালত বলেন, আপনারাও (উকিল) চান না মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে। এজন্য সকলেরই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম জহিরুল হক বলেন, আইনে তিনজনকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার কারন ব্যাখ্যা করতে বলেছে। শুনানি শেষে হাইকোর্ট সংশ্লিষ্টদেরকে এই বিধান প্রতিপালনের পাশাপাশি দায়িত্বে গাফিলতির কারনে পিপি ও তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে তা প্রতিবেদন আকারে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে দাখিলের জন্য আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মিলাদ হোসেনের জামিন না মঞ্জুর করে তার মামলাটি ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বিচারিক আদালতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
Discussion about this post