ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তুলে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আজিজুল হকসহ তিন জনের বিরুদ্ধে নালিশি মামলা করা হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গতকাল সোমবার (১৩ নভেম্বর) কারারক্ষী শাম্মী আক্তার বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। মামলায় অভিযুক্ত অন্য দু’জন হলেন কারারক্ষী নিজাম ও শেখ ফরিদ।
আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক সুদীপ্ত দাস মামলাটি শুনানির জন্য অপেক্ষমান রেখেছেন।
প্রধান বিবাদী আজিজুল হক বর্তমানে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে সিনিয়র জেল সুপারের পাশাপাশি বরিশালের ভারপ্রাপ্ত কারা উপ-মহাপরিদর্শক পদেও কর্মরত আছেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ ইমন ও আদালতে দাখিল করা ওই অভিযোগে জানা গেছে- ২০০১ সালে মহিলা কারারক্ষী হিসেব চাকুরীতে যোগদান করে এ অভিযোগে ভিকটিম। এরপর ঢাকা থেকে গত ১২ জানুয়ারী বরিশালের কেন্দ্রীয় কারাগারে বদলী হয়ে আসেন এ মহিলা কারারক্ষী। বরিশালে এসেই সিনিয়র জেল সুপার আজিজুল হকের কু-দৃষ্টির কিশার হন তিনি।
গত ১৫ জানুয়ারী তাকে ঝালকাঠি কারাগারে বদলী করা হলেও ১৯ ফেব্রুয়ারি তাকে প্রেষণে পুনরায় বরিশালে নিয়ে আসা হয়। বরিশালে এনে তাকে বন্দিদের সাথে সাক্ষাতের স্লিপ দেয়ার ডিউটি দেয়া হয়। পাশাপাশি তাকে থাকার জায়গা হিসেবে সিনিয়র জেল সুপারের বাসার পাশেই সরকারি রুমে স্থান দেয়।
এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময় তাকে চাকুরীর ভয় দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলো সিনিয়র জেল সুপার। কিন্তু তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে বোঝানোর জন্য কারারক্ষী নিজাম ও শেখ ফরিদকে দায়িত্ব দেয়া হয় এ নারী কারারক্ষীকে বোঝানোর জন্য।
ওই কারারক্ষীরা মহিলা কারারক্ষীকে জানান, সিনিয়র জেল সুপারের কথা অমান্য করলে তার চাকুরীতে সমস্যা হতে পারে। সর্বশেষ গত ১৮ অক্টোবর রাতে ওই দুই কারারক্ষী মহিলা কারারক্ষীর রুমে গিয়ে জানান, বন্দি স্লিপের হিসেব ও টাকা নিয়ে জেল সুপার আজিজুল হক তাকে ডাকছে।
কিন্তু মহিলা কারারক্ষী ওই রাতে তার বাসায় যেতে না চাইলে ওই দুই কারারক্ষী তাকে চাকুরী সম্পর্কিত বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে আজিজুল হকের কাছে নিয়ে যান। হিসেব নিয়ে আজিজুল হকের কাছে গেলে, হিসেব দেখার পরিবর্তে ওই মহিলা কারারক্ষীকে যৌন নিপিড়ন শুরু করেন সিনিয়র জেল সুপার আজিজুল হক।
এসময় মহিলা কারারক্ষী তাকে বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে আজিজুল হক ধর্ষণের চেষ্টা চালান। একপর্যায় তার ডাক চিৎকারের পার্শ্ববর্তী স্টাফরা সেখানে আসলেও সিনিয়র অফিসারের কক্ষে কেউ প্রবেশ করার সাহস পায়নি।
আজিজুল হকের সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায় ওই মহিলা কারারক্ষী খাট থেকে পরে গিয়ে বুকে ব্যাথা পেয়ে ওই কক্ষ থেকে দৌড়ে চলে যান। এরপর ব্যাথা আরও বেশি হলে দুই দিন পর শেবাচিম হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হয় ওই মহিলা কারারক্ষী।
এদিকে মহিলা কারারক্ষীকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে কারাগারে তার থাকার কক্ষে তালা দেয়ার জন্য জেলার বদরুদ্দোজাকে নির্দেশ দেয় সিনিয়র জেল সুপার। হাসপাতালে চিকিৎসা থেকে ফিরে এসে দেখেন তার কক্ষে দুটি তালা ঝুলে আছে। যার একটি তিনি নিজেই লাগিয়েছিলেন। অপরটির বিষয়ে জানতে চাইলে তাকে জানানো হয়, সিনিয়র জেলা সুপারের নির্দেশে তার কক্ষে তালা ঝুলিয়েছে জেলার বদরুদ্দোজা। এতে কারাগারে তার থাকার কোন জায়গা না থাকায় বাড়িতে চলে যায় ওই মহিলা কারারক্ষী। বর্তমানে বাড়িতে থেকেই প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে আসা যাওয়া করছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- জেল সুপার এর আগে খুলনাতে চাকুরীকালে ৪ বছর চাকুরীচ্যুত ছিলেন। গত দুই বছর পূর্বে বরিশালে এসে যোগদান করেন সিনিয়র জেল সুপার আজিজুল হক।”
Discussion about this post