নিজস্ব প্রতিবেদক: যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ মারে, তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃতুদণ্ডের বিধান রেখে সংসদে সড়ক পরিবহন বিল ২০১৮ পাস হয়েছে। এছাড়া বেপরোয়া মোটরযান চালানোর কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজার বিধান রাখা হয়েছে।
বুধবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন। বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করেছেন তাদের বলব, ২৫ বছর অপেক্ষার পর আর কত অপেক্ষা করব? আপনারাই বলছেন দুর্ঘটনা ঘটছে, যানজট হচ্ছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘অনেকে বলেছেন, ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করেছে বলে এই বিল এসেছে। এটা ঠিক নয়। এই বিলটি দেড় বছর আগে তৈরি করা। অংশীজনদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনার সোনালি ফসল এই সংসদে এসেছে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ মারে, তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুতরাং শাস্তি কোনোভাবেই কম নয়।’
বিলের ওপর দেওয়া বিরোধী দলের সদস্যদের চারটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। অন্যান্য সংশোধনী প্রস্তাবের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিলের মধ্যে সবকিছু আনার প্রয়োজন নেই। বিধি-প্রবিধান করে অনেক কিছু সংযোজন করা যাবে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক হতে হবে: এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন, ‘দুঃখজনক হলো, মাঝে মাঝে দেখি তিনজন আরোহী নিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মোটরসাইকেল ছুটে চলে, হেলমেট ছাড়া। এরা বেশির ভাগই রাজনৈতিক কর্মী। সুতরাং আমাদের দলগুলোকে সতর্ক হতে হবে।’
গত ২৯ জুলাই রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। তাদের দাবির পর সরকার দ্রুত আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। পাস হওয়া বিলটিতে রাষ্ট্রপতির সইয়ের পর তা আইন হিসেবে গণ্য হবে।
চালকের সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড: প্রস্তাবিত আইনের ১০৫ ধারায় বলা আছে, এই আইনে যা-ই থাকুক না কেন, মোটরযান চালাতে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে এ-সংক্রান্ত অপরাধ দণ্ডবিধির-১৮৬০-এর বিধান অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে দণ্ডবিধির ৩০৪বি ধারাতে যা-ই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলা করে মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে ওই চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হত্যার উদ্দেশ্যে হলে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড: বিলের ১১৪ ধারায় বলা আছে, এই আইনের অধীনে অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপিল ইত্যাদি ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হত্যার উদ্দেশ্যে প্রমাণিত হলে তা ফৌজদারি কার্যবিধির ৩০২ ধারার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। বিলে আরও বলা আছে, এই আইনের অধীন অপরাধ মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯-এর তফসিলভুক্ত নির্বাহী হাকিমের মাধ্যমে বিচার করা যাবে।
বিলের ৪ ধারাতে বলা আছে, কোনো ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করে পাবলিক প্লেসে গাড়ি চালাতে পারবেন না বা চালানোর অনুমতি দেওয়া যাবে না। ৫ ধারায় বলা আছে, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র ছাড়া কেউ গণপরিবহন চালাতে পারবে না বা চালানোর অনুমতি দেওয়া যাবে না।
৬৬ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি আইনের ৪ ও ৫ ধারা লঙ্ঘন করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধের সাজা সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড।
৬ ধারায় বলা আছে, অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ এবং পেশাদার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে ২১ হতে হবে। আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। আরও বলা হয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স হস্তান্তর করা যাবে না। এই ধারা কেউ লঙ্ঘন করলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
সরকার বা সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা এবং প্রয়োজনে নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্থানীয়ভাবে প্রচারের মাধ্যমে সারা দেশের বা নির্দিষ্ট কোনো এলাকা, সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার বা টানেলে যেকোনো মেয়াদের জন্য সব বা যেকোনো মোটরযান চলাচল নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
Discussion about this post