কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় সংখ্যালঘু এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ের পর মাথার চুল কেটে দিয়ে ফেসবুকে নগ্ন ছবি আপলোড করার অভিযোগে প্রতারক স্বামী নাজমুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের একটি দল শহরের পাঁচ রাস্তার মোড় শাপলা চত্বর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে দুপুরে ওই কলেজ ছাত্রী নাজমুল হোসেন নামের প্রতারক ওই স্বামীর বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় তথ্য প্রযুক্তি আইন সংশোধতীত ২০১৩ এর ৫৭ ধারায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নাসির উদ্দিন এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের এবং আসামি নাজমুলকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেছেন।
প্রতারণার শিকার কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের বি.বি.এ ১ম বর্ষের সোমা রাজবংশী ওরফে মোছা. আয়েশা খাতুন নামের ওই ছাত্রী সাংবাদিকদের জানান, আজ থেকে প্রায় চার বছর আগে কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজে যাওয়া-আসার পথে কুষ্টিয়া পৌর এলাকার জুগিয়া হাট পাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হোসেন তাকে প্রায়ই উত্যক্ত করত। নাজমুল সে সময় ওই ছাত্রীর কাছে সংখ্যালঘু হিসেবে নিজের পরিচয় দেয়। এক পর্যায়ে নাজমুলের সাথে ওই কলেজ ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর নাজমুল ওই কলেজ ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল এলাকার স্থানীয় এক কাজীর কাছে নিয়ে নিয়ে যায়।
এ সময় নাজমুল তাকে বলে ‘আমি মুসলমান তোমাকেও মুসলমান হতে হবে’। মুসলমান পরিচয় জানতে পেরে ওই কলেজ ছাত্রী নাজমুলকে বিয়ে করতে এবং ধর্মান্তরিত হতে অস্বীকৃতি জানায়। এসময় নাজমুল এবং তার সাথে থাকা অজ্ঞাত নামা ৩-৪ জন তাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক আগে থেকে সম্পন্ন করে রাখা দুইটি ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় এবং নোটারী পাবলিক দিয়ে মুসলমান হিসেবে হলফ নামা করে তাকে বিয়ে করে। বিয়ের কাবিন নামায় ওই ছাত্রীর বাবার প্রকৃত নাম সুজন রাজবংশী পাল্টে লেখা হয় শেখ ইমতিয়াজ আলী এবং মায়ের নাম মালা রাজবংশীর পরিবর্তে লেখা হয় আফরোজা বেগম মালা। এক পর্যায়ে ওই কলেজ ছাত্রী এবং তার দরিদ্র পরিবার বিয়ে মেনে নিতে বাধ্য হয় এবং নাজমুলের সাথেই সংসার করা শুরু করে। নাজমুল শহরের ছয় রাস্তার মোড়ের পাশে এবং জেলখানা মোড়ে বাসা নিয়ে স্বামী-স্ত্রী রূপে বসবাস করতে থাকে। কিন্তু বিয়ের এক-দেড় বছর পর কলেজ ছাত্রী ওই মেয়েটি জানতে পারে নাজমুল বিবাহিত, তার দুইটি সন্তান রয়েছে এবং সে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। এসব বিষয়ে নাজমুলকে জিজ্ঞাসা করলে ওই ছাত্রীর উপর চরম শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা চরমে পৌঁছালে সে রাগ করে বাবার বাড়ি চলে আসতে বাধ্য হয়। গত ২৬ জুন বেলা ১১ টার দিকে নাজমুল মোটরসাইকেল যোগে ওই ছাত্রীর বাড়িতে এসে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাই। ক্ষমা করার পর মন ভালো করার নামে নাজমুল বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে মোটরসাইকেলে করে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বহলবাড়ীয়া সাতবাড়ীয়া মাঠের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ওই ছাত্রীকে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারা শুরু করে। এক পর্যায়ে পকেটে থাকা কাচি দিয়ে জোরপূর্বক তার মাথার চুল কেটে দেয় নাজমুল। একই সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়।
এ ঘটনার পর থেকে নাজমুল ওই ছাত্রী ও তার বাবা-মাসহ পরিবার-পরিজনকে এই বলে হুমকি দেয় যে, এ ঘটনায় কোন প্রকার আইন-আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করলে তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করার সময়কার শারীরিক সম্পর্কের ছবি এবং ভিডিও তার আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন জনের কাছে এমনকি ফেসবুক, ইন্টারনেটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে। কয়েক দিন পর নাজমুল পূর্ব থেকেই পাসওয়ার্ড জানার সুবাদে ওই ছাত্রীর ফেসবুক আইডি নিজের আয়ত্তে নিয়ে উক্ত ফেসবুক আইডি থেকে ছাত্রীর আত্মীয়-স্বজনসহ পরিচিত জনদের কাছে আগে থেকে গোপনে ধারণ করে নগ্ন ছবি ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে দেয়।
এ ঘটনায় ওই ছাত্রী পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে চরম হেয় প্রতিপন্ন হয়। প্রতারক নাজমুল গত ৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ২ টা ১৫ মিনিটে ওই ছাত্রীর খালাতো ভাই সীমান্ত বিশ্বাসের আইডিতে এবং পরের দিন ৬ সেপ্টেম্বর রাত ৮ টা ১০ মিনিটের সময় ওই ছাত্রীর জামাই বাবু দেবাশীষ বিশ্বাস এর ফেসবুক আইডিতে তার বিবস্ত্র ও শারীরিক মিলনের ছবি পাঠায়। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে ওই ছাত্রী মানসিকভাবে চরম ভেঙে পড়ে। ঘটনার পর থেকে নাজমুল ওই ছাত্রী ও তার পরিবারকে মোবাইল ফোনে কল করে এবং ম্যাসেজ দিয়ে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। অব্যাহত হুমকির কারণে ছাত্রী ও তার পরিবার বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অব্যাহত হুমকির কারণে তার পড়াশোনা এবং কলেজ যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতারণার শিকার সোমা রাজবংশী নামের ওই কলেজ ছাত্রী পৌর এলাকার বারখাদা উত্তর পাড়া এলাকার দিনমজুর সুজন রাজবংশী ও সোমা রাজবংশীর একমাত্র কন্যা। জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার পর তার নাম সোমা রাজবংশী থেকে মোছা: আয়েশা খাতুন করা হয়েছে।
Discussion about this post