নিজস্ব প্রতিবেদক: কারসাজি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগে ৩৫ পেঁয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত জানাবেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. শহিদুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর কাকরাইলে অধিদফতরের কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এর আগে গতকাল সোমবার ১০ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এগুলো হলো- চাঁপাইনবাবগঞ্জের রিজু রিটু এন্টারপ্রাইজ, টিএম এন্টারপ্রাইজ, আরএম অ্যাগ্রো, নূর এন্টারপ্রাইজ, বিএইচ ট্রেডিং, সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ, টাটা ট্রেডার্স, হুদা ইন্টারন্যাশনাল, বিশাল এন্টারপ্রাইজ, নওগাঁর জগদীশ চন্দ্র রায় ও রাজশাহীর আলী অ্যান্ড সন্স।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ১০ আমদানিকারক গত আগস্ট থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫৯ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ৪৪ হাজার ৩১ টন পেঁয়াজ আমদানি করে। সবচেয়ে বেশি আমদানি করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের টিএম এন্টারপ্রাইজ। এ আমদানিকারক এ সময় ৩৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা মূল্যে নয় হাজার ২০ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তথ্যমতে, গত আগস্ট থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসের বেশি সময়ে ১ হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেছে ৪৫ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। তারা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচে ১ লাখ ৪ হাজার ৫৫৮ টন, অর্থাৎ ১০ কোটি ৪৫ লাখ ৫৮ হাজার কেজি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানিতে তাদের খরচ হয়েছে গড়ে ৩৮ টাকা ২৬ পয়সা।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৩৪১ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দেশের আটটি স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করে এক লাখ ৬৭ হাজার ৮০৬ টন। এতে খরচ হয় ৬৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসে ৫১ হাজার ৬৪৯ টন। ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ৪৬ হাজার ৩৭০ টন, টেকনাফ দিয়ে ৩৪ হাজার ৮৬১ টন, হিলি দিয়ে ২৪ হাজার ৩০৮ টন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসে ছয় হাজার ৬৯৩ টন, বাংলাবান্ধা দিয়ে ১৭১ টন ও ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে আসে ২৭ টন পেঁয়াজ।
কারসাজির সন্দেহে মোট ৩৪১ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব আমদানিকারক এক হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ এনেছে তাদেরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুরাতন বাজারের টিএম এন্টারপ্রাইজ। এ প্রতিষ্ঠানটি ৯ হাজার ২০ টন পেঁয়াজ আনে ৩৯ কোটি ২৬ লাখ টাকায়। এরপর বেশি আনে একই জেলার ডাকবাংলা রোডের দীপা এন্টারপ্রাইজ। এ প্রতিষ্ঠান ১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকায় আনে পাঁচ হাজার ৬৯৩ টন।
পেঁয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যরা হচ্ছে- কানসাটের আরএম অ্যাগ্রো, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের নূর এন্টারপ্রাইজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিশ্বরোডের বিএইচ ট্রেডিং, নওগাঁর জগদীশ চন্দ্র রায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ, একই জেলার একতা সসা ভাণ্ডার, রাজশাহীর বোয়ালিয়ার ফুলমোহাম্মদ ট্রেডার্স, সাতক্ষীরার ফারহা ইন্টারন্যাশনাল, বগুড়ার সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজ, একই জেলার হামিদ এন্টারপ্রাইজ, নাচোলের আলী রাইসমিল, হিলির খান ট্রেডার্স, ঢাকার বিজয়নগরের এসএম করপোরেশন, যশোরের এমএস রহমান ইমপেক্স, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজ, বগুড়ার রাজাবাজারের রায়হান ট্রেডার্স, সাতক্ষীরা সদরের সোহা এন্টারপ্রাইজ, একই জেলার মরিয়ম এন্টারপ্রাইজ, ভোমরা স্থলবন্দরের নূর এন্টারপ্রাইজ ও শামিম এন্টারপ্রাইজ।
দিনাজপুরের এমএস খান ট্রেডার্স, জয়পুরহাটের এমআর ট্রেডার্স, সাতক্ষীরার ডিএ এন্টারপ্রাইজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবনগরের টাটা ট্রেডার্স, টেকনাফের মা এন্টারপ্রাইজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের হুদা ইন্টারন্যাশনাল, খুলনার সাহা ভাণ্ডার, ভোমরা স্থলবন্দরের আরডি এন্টারপ্রাইজ, ঢাকার ফরাশগঞ্জের জেনি এন্টারপ্রাইজ, টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের মাহি অ্যান্ড ব্রাদার্স, ভোমরা স্থলবন্দরের মেসার্স মুক্তা এন্টারপ্রাইজ, বগুড়া রাজাবাজারের রায়হান ট্রেডার্স, ভোমরা স্থলবন্দরের সাইফুল এন্টারপ্রাইজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রিজু রিটু এন্টারপ্রাইজ, ফেনী সদরের জাবেদ অ্যান্ড ব্রাদার্স, টেকনাফের আলম অ্যান্ড সন্স, টেকনাফের নিউ বড় বাজার শপিংমল, ঢাকার ভাটারা থানা এলাকার রচনা ট্রেডিং কম্পানি, কেকে পাড়া টেকনাফের এসএস ট্রেডিং, ভোমরা স্থলবন্দরের সুপ্তি এন্টারপ্রাইজ, ঢাকার ফরাশগঞ্জের ব্রাদার্স ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, টেকনাফের আল মদিনা স্টোর, বগুড়া সদরের বিকে ট্রেডার্স, দিনাজপুর হাকিমপুরের ধ্রুব ফারিহা ট্রেডার্স ও বগুড়া রাজাবাজারের মেসার্স সালেহা ট্রেডার্স। এসব আমদানিকারক এক হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ এনেছে।
Discussion about this post