মতিউর রহমান ফয়সালঃ
LAWYER-শব্দটির প্রতিটি বর্ণের মাঝে লুকায়িত একজন আইনজীবির দক্ষতাসমূহ
আইন পেশা সর্বজন স্বীকৃত মানবতা ও ন্যায়পরায়নতার পেশা। এটি ভন্ডামী,অসৎ মানুষের জায়গা নয়। তবে বর্তমানে এই পেশার প্রতি মানুষের বিরুপ মনোভাব লক্ষ করা যায়। অন্যতম সম্মানজনক পেশাটির প্রতি মানুষের ভুল ধারণা ও গুটি কয়েক আইনজীবির অসত্য প্রতারণার আশ্রয়ে গোটা সমাজ কলুষিত হওয়ার উপক্রম। তবে শিক্ষিত লোক মাত্রই এই পেশার গুরুত্ব, অবস্থান ও সম্মান বিষয়ে সচেতন।
‘আইনজীবি একজন ব্যক্তি, যে আইন অনুযায়ী স্বীকৃত আপনাকে আইনি পরামর্শ ও সহায়তা দিতে আইন ও মামলার বিষয়ে।’
খুব সাধারণ ভাষায় আজ আপনাদের জানাবো একজন আইনজীবিকে আইনজীবি বা ল’য়ার হিসেবে গড়ে উঠতে যে দক্ষতা প্রয়োজন। যার অনুপস্থিতে তাকে আমরা আইনজীবি বলতে পারি না!
LAWYER-শব্দটির প্রতিটি বর্ণের মাঝে লুকায়িত একজন আইনজীবির দক্ষতাসমূহ
L-Legal Expert= আইনবিষয়ে অভিজ্ঞ
A-Analytical=ব্যাখাকারক
W-Wisdom=জ্ঞানী
Y-Youthful=তারুণ্যময়
E-Evergreen=চির যৌবনের শিল্পি
R-Royalist=রাজকীয়
বলা হয়ে থাকে, একজন ল’য়ারকে সবগুলো বিষয়ের কিছু জানতে হবে, কিন্তু কিছু বিষয়ের সব জানতে হবে।
উপরের বিশ্লেষণ থেকে বুঝতেই পারছেন এই দক্ষতা সমূহ থাকতে হবে একজন আইনজীবিকে, গুণ কিন্তু নয়!
১. সে হবে আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ ও আপটুডেট। নতুন নতুন বিষয়ে খোঁজ রাখতে হবে।
তাকে আইন জানতে হবে না, বরং জানতে হবে সে আইনটি কোথায় রয়েছে তা পরিষ্কার ভাবে ।
২. হাজার হাজার আইন তার মুখস্ত করতে হবে না। আইনটি সময়মত সঠিক জায়গাতে প্রয়োগের দক্ষতা থাকতে হবে।
৩. সব বিষয়ে তার জ্ঞান থাকতে হবে। যদি গণিত বিজ্ঞানের মা হয়ে থাকে তবে আইন হবে বিজ্ঞানের বাবা! একজন দক্ষ আইনজীবিকে সর্বস্তরের জ্ঞান নিয়েকাজ করতে হবে।
৪. একজন আইনজীবি হবে তারুণ্যময়। তার কন্ঠ হবে মাধুর্য্য ও বলিষ্ঠ। যে কারণে বাংলাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবি রফিকুল হক ৫০ বছরের উপর কাজ করছেন আইনজীবি হয়ে। উপস্থাপন করছেন নিজেকে দক্ষতার সাথে। যিনি চির তারুণ্যের অধিকারী।
৫. একজন আইনজীবি হবেন একজন শিল্পী। আদালত হচ্ছে তার জন্য মঞ্চ যেখানে সে তার সবোর্চ্চ পরিশ্রম করবে অভিনয় সঠিক হওয়ার জন্য। নিজেক ব্যক্তিত্ব, আত্ববিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে একজন ভাল শিল্পীর মত হবেন তিনি। যে বিচারককে মোহিত করবেন তার অভিনয় শিল্প দিয়ে। যেমন ড: কামাল হোসেন করছেন আজো।
৬. আইনজীবির জীবন হবে রাজকীয়। রাজার মত তিনি হবেন ভদ্র ও সাহসী। নিজেকে প্রকাশ করবেন রাজকীয় ভাবে আদালতে। নিজেকে ছাড়িয়ে যাবেন নিজের দক্ষতার মাধ্যমে।
বিশ্বের যত বড় বড় নেতা তাদের বেশির ভাগই আইনজীবি ছিলেন। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতেও তাই।
আমরা বাংলাদেশে LL.B এর নতুন অর্থ খুজে পায়=
Legal Leader of Bangladesh. তারা প্রকৃত নেতা যারা নিজেকে জানে নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতায় নিজেকে সবার উপরে তুলে নেয়।
এই ধরনের দক্ষতা না থাকলে বটতলার উকিল হওয়া ছাড়া গতি নেই। যার কারণে বলা হয়-যার নাই কোন গতি সে করে উকালতি!
আইনপেশায় আসতে হলে আপনাকে অবশ্যই সেভাবে নিজেবে প্রস্তুত করে আসা উচিত। নইলে আপনার ভুল, মিথ্যা ও প্রতারনার স্বীকার হয়ে মানুষ গোটা বিচারালয়কে গালি দিতে আসবে।
এছাড়া-
আইনজীবি হবেন একজন সৎ ও নির্লোভ ব্যক্তি। যিনি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে তার মক্কেলের কাছ থেকে আয় করবেন। মিথ্যার আশ্রয় নয়, বরং আইন অনুযায়ী যুক্তির মাধ্যমে লড়াই করতে হয়।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, আইনজীবীগণ নিরপরাধীকে যেমন সাহায্য করেন তেমনি অপরাধীকেও সাহায্য করেন, এ ধারণা সঠিক নয়। অপরাধীর পক্ষ সমর্থন করার মানে অপরাধীকে সমর্থন করা নয় বরং অপরাধীর বিরুদ্ধে অপরাধ করার প্রমাণ সন্দেহাতীত রূপে উপস্থিত করা হয়েছে কিনা তা নির্ধারণে আইনজীবীগণ বিচারককে সাহায্য করেন। একজন ভালো আইনজীবীর জেরাকে ওপেনহার্ট সার্জারির সাথে ও তুলনা করা যায়। কেননা এর ফলে আদালতের সামনে বাস্তব ও লুকায়িত তথ্য বেরিয়ে আসে। কারণ আইন সবার জন্য সমান সুযোগ দিয়েছে আইনের আশ্রয় নেয়ার। কোন নিরপরাধী যেন সাজা না পায় তার জন্য লড়াই করতে হয়।
যুক্তিহীন মানুষ মনুষত্ব্যহীন বলা হয়। আইনজীবিরা সবকিছু যুক্তির মাধ্যমে জয় করবেন। একজন আইনজীবীকে অবশ্যই কর্মে, চিন্তায়, বিচক্ষণতায় পরিপক্ক এবং সকল বিষয় ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ হতে হবে।
নিজের বিবেক ব্যক্তিত্বের সবোর্চ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সত্য ও সুন্দর প্রকাশ করবেন আইনজীবিগণ।
যাদের মধ্যে ন্যায়পরায়ণতা, মানবিকতা, মনুষ্যত্ব নেই তাদের আইন প্রয়োগ দুর্বল হবে। এ পেশার মহত্ব ধরে রাখতে হলে ন্যায়পরায়ণ আর মানবিক হতে হবে। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবী জয় করা সহজ কিন্তু মন জয় করা নয়, একজন আইনজীবিকে যুক্তি, জ্ঞান, বিচক্ষণার মাধ্যমে তার মক্কেল সহ বিচারকের মন জয় করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হয়। সামাজিক মর্যাদা, সম্মান ও নেতৃত্বের শুরু এ পেশায়।
আইনপেশা নিয়ে কটু কথা বলার আগে অবশ্যই এটি সর্ম্পকে জানা উচিত। না জানাটা আপনার দুর্বলতা। এখানে নিজ যোগত্যার পরিপেক্ষিতে মাপা যায় মানুষকে।
তবে বটতলার উকিল, স্বার্থপর, লোভী, মিথ্যাবাদি, অসৎ আইনজীবির সংখ্যা নিতান্ত কম নয়-যারা এ পেশাকে কলুষিত করেছে। তাই বলছি শুধু সনদ পেলেই ল’ইয়ার হওয়া যায় না
-লেখাটি লেখতে সহায়তা করেছেন
আশরাফুল আলম স্যার এর ‘ক্লিনিক্যাল লিগ্যাল শিক্ষা’ বিষয়ের লেকচার। ধন্যবাদ স্যারকে আইনপেশাকে চমৎকার ভাবে ভাবতে সহায়তা করার জন্য।
Discussion about this post